প্রকাশ: শুক্রবার, ১৯ মে, ২০২৩, ৮:৪৭ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদীতে বুধবার দিবাগত রাতে নমুনা ডিম ছেড়েছে মা মাছ। নদীতে ডিমের নমুনা দেখে হালদা নদী পাড়ের ডিম আহরনকারীরা ডিম সংগ্রহের যাবতীয় সরঞ্জাম নিয়ে নদীতে নেমে পড়লেও পরে বৃহস্পতিবার রাত নয়টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যেও মা মাছ আর ডিম ছাড়েনি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন আজ রাতে বৃষ্টি হলেই হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়বে।
বৃহস্পতিবার (১৮ মে) সকাল থেকে দীর্ঘক্ষন প্রায় সন্ধ্যা পর্যন্ত এ প্রতিবেদক হালদা নদী পাড়ে অবস্থান করে ডিম আহরনকারীদের সাথে আলাপ করলে তারা জানান, গত বুধবার দিবাগত রাতে নদীর কোন কোন স্হানে মাছ নগন্য পরিমাণ নমুনা ডিম ছেড়েছে। ডিমের নমুনা দেখে তারা নৌকা, ডিম আহরনের সরঞ্জাম নিয়ে নদীর পাড়ে অবস্থান করে। কিন্তু রাত শেষে ভোর হতেই মা মাছ নমুনা ডিম ছাড়া বন্ধ করে দেয়। গত বুধবার রাতে সামান্য বৃষ্টি ও বৃহস্পতিবার সকালে মাঝারি বৃষ্টিপাত শুরু হলে ডিম আহরনকারীরা আশায় বুক বাঁধে। এর মধ্যে আমাবস্যা তিথি / জো চলছে। নদীতে লবনাক্ততা পানি থাকায় মা মাছ ডিম ছাড়েনি। পাহাড়ি ঢলের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে ডিম ছাড়ার কথা। তবে নদীর উপরিভাগে তেমন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ঢল নেই নদীতে। এদিকে দুপুরের দিকে আকাশে মেঘ কেটে গেলে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা কমে যায়। আবার সন্ধ্যার দিকে আকাশে মেঘের ঘনঘটা দেখা দেয়। যদি রাতে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হয় এবং পাহাড়ি ঢল আসে ভর আমাবস্যা তিথি / জোতে জোয়ারের সময় ডিম ছাড়বে বলে মনে করছেন ডিম আহরনকারীরা।
গড়দুয়ারার হালদা পাড়ের প্রবীণ ডিম সংগ্রহকারী কামাল সওদাগর জানান, গত বুধবার দিবাগত রাতে নদীর অংকুরী ঘোনা, নয়াহাট, সিপাহীর ঘাট এলাকায় নমুনা দেখে তিনি এবং তার লোকজন নৌকা নিয়ে নদীতে নামেন। ডিম আহরনের জন্য নৌকা নোঙর করে, কিন্তু মা মাছ ডিম ছাড়েনি। কারন নদীর উজানে বৃষ্টি না হওয়ায় ঢলের প্রকোপ না থাকায় ডিম ছাড়েনি। তিনি আশা করেন বৃহস্পতিবার রাতে বৃষ্টিপাত হলে জোয়ারের সময় হয়তো মা মাছ হালদা নদীতে ডিম ছাড়বে।
মাছুয়াঘোনার ডিম সংগ্রহকারী শফিউল আলম জানান, নদীতে লবনাক্ত পানি ঢুকে পড়েছে। ডিম ছাড়ার মত পরিমিত বৃষ্টিপাত হয়নি তাই মা মাছ নমুনা দিলে ও ডিম ছাড়েনি । তিনি অবশ্য রাতে জোয়ারের সময় ডিম ছাড়তে পাড়ে বলে মত প্রকাশ করেছেন। মধ্যম মার্দাশা এলাকার ডিম সংগ্রহকারী আশু বড়ুয়া ও নদীতে সামান্য ডিমের নমুনা দিয়েছে বলে জানান। তবে নদীতে লবনাক্ত পানি থাকায় এই আমাবস্যা তিথিতে ডিম ছাড়বে কিনা সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি।
হালদা গবেষক ড. মো.শফিকুল ইসলাম রাত সাড়ে আটটার দিকে জানান, বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ নামে পরিচিত হালদা নদীতে চলছে মেজর কার্পজাতীয় মাছের ভরা প্রজনন মৌসুম। এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া প্রজনন মৌসুমের তিনটি জোঁ অতিক্রম হলেও হালদায় দেখা মেলেনি কার্পজাতীয় মাছের কাঙ্ক্ষিত ডিমের। কিন্তু মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া চতুর্থ জোঁ এর গতকাল বুধবার দিবাগত রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত হালদার কিছু কিছু স্পনিং গ্রাউন্ডে খুবই সামান্য পরিমাণে নমুনা ডিমের উপস্থিতি দেখা যায়। কিন্তু সকালের দিকে হালদায় লবণ পানি প্রবেশ করায় আর নমুনা ডিম পাওয়া যায়নি। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতসহ পাহাড়ি ঢল নামলে লবণাক্ততা কমে যাবে এবং আজ কালকের মধ্যে ডিম ছাড়বে কার্পজাতীয় মা মাছ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিচার্স ল্যাবেটারীর সমন্বয়ক ও হালদা গবেষক অধ্যাপক ডঃ মনজুরুল কিবরিয়া জানান, গত বুধবার দিবাগত রাতে হালদা নদীর কোন কোন স্হানে মা মাছ নমুনা ডিম ছেড়েছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত পাহাড়ি ঢল না থাকায় মা মাছ ডিম ছাড়েনি। আবহাওয়ায় গতকাল বৃষ্টির কারনে শীতল ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। ডিম ছাড়ার অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। উজানে বৃষ্টিপাত হলে পাহাড়ি ঢল বৃদ্ধি পেলে রাতে জোয়ারের সময় ডিম ছাড়তে পারে মা মাছ। কারন এখন মাছের ডিম ছাড়ার ভর মৌসুম। শুধু মাত্র অনুকুল পরিবেশের অভাব। রাতে বুষ্টিপাত হলেই হালদা নদীতে ডিম ছাড়বে মা মাছ। ডিম আহরনকারীকারীরা প্রস্তত রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।