প্রকাশ: শুক্রবার, ১৯ মে, ২০২৩, ৮:৪১ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
মাছের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে ২০মে থেকে বঙ্গোপসাগরে ও সুন্দরবনে সকল ধরণের মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মৎস্য অধিদপ্তর এবং বনবিভাগ। ফলে ২৩ জুলাই পর্যন্ত সাগরে ও ৩১আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনের নদী-খালে মাছ শিকার করতে পারবেন না জেলেরা। এছাড়া প্রজনন মৌসুম নির্বিঘ্ন রাখতে ১লা জুন থেকে ৩১আগস্ট পর্যন্ত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে সুন্দরবনে পর্যটনবাহী নৌযান চলাচলও। তাতে তিন মাস বন্ধ থাকবে সুন্দরবনে পর্যটকদের আগমন-ভ্রমণও।
বছরের বিভিন্ন সময়ে মৎস্য অধিদপ্তর ও বনবিভাগের নিষেধাজ্ঞার কারণে জেলেরা মাছ ধরতে পারেন না সাগর এবং সুন্দরবনে। তার মধ্যে আবার দুযোর্গ তো রয়েছেই। ফলে বছরের বেশির ভাগ সময়টা কাটে উপকূলের জেলেদের খেয়ে, না খেয়েই। তাই জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানসহ নিষেধাজ্ঞা চলাকালে পরিবারপরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার মত সরকারী সাহায্য পাওয়ার আবেদন জানিয়েছেন উপকূলের জেলেরা। কোন সাহায্য সহযোগীতা না পাওয়া বেশির ভাগ জেলেদেরকে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে জীবনজীবিকার তাগিদে ঝুঁকি নিয়ে নেমে পড়তে হয় সাগর-সুন্দরবনে। উপকূলের জেলেদেরকে সরকারী সাহায্য সহযোগীতার ব্যবস্থা করা গেলে প্রজনন মৌসুম যেমনি নির্বিঘ্ন হবে, তেমনি মাছ ও বন্যপ্রাণীর সংখ্যাও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
মোংলার চিলা ও কলাতলা এলাকার সমুদ্রগামী এবং সুন্দরবন নির্ভরশীল জেলে ইয়াসিন সরদার, সোবহান শেখ, মোহন বাছাড় ও ফারুক শেখ বলেন, বছরের বিভিন্ন সময়ে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকে। যখন একটু মাছ ধরার সময় পাই তখন আবার থাকে ঝড়-জ্বলোচ্ছাস। বেশির ভাগ সময়ই নৌকা, জাল নিয়ে ঘাটে বসে থাকতে হয়। মহাজনের কাছ থেকে দাদন/ঋণ নিয়ে নৌকা ও জাল মেরামত/তৈরি করেছি। যাও মাছ পোনা হতো মহাজনকে কম-বেশি দিয়ে কোন রকম সংসার চলতো। এখন তিন মাসেরও বেশি সময়ের এ নিষেধাজ্ঞায় আমাদের তো না খেয়ে মরতে হবে। আমাদের তো জাল ধরা ছাড়া অন্য কোন আয়ের পথ নেই। কোন কাজ কামও নেই যে তা করে খাবো। সরকার যদি আমাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ও সাহায্য সহযোগী করে তাহলে কোন রকম বেঁচে থাকতে পারবো বলে জানান তারা।
উপজেলা সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম জানান, ৪৭৫ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে ২০মে থেকে ২৩শে জুলাই পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন মৎস্য অধিদপ্তর। এই সময়টাতে কোনভাবেই জেলেরা সমুদ্রে মাছ আহরণ করতে পারবেন না। নিষেধাজ্ঞার এ সময়ে সমুদ্রগামী নিবন্ধিত ২ হাজার ৬৪০ জন জেলের প্রত্যেককে দুই দফায় দেয়া হবে ৮৬ কেজি করে চাল।
তবে এখানে নিবন্ধিত ছাড়াও সমুদ্রগামী আরো জেলে রয়েছেন আড়াই হাজার। তাদের ভাগ্যে জুটবেনা এ সহায়তা। মোংলায় সমুদ্রগামী জেলে রয়েছে ৫সহস্রাধিক আর সুন্দরবন নির্ভরশীল জেলে রয়েছেন ৫ হাজার। ফলে ১০ সহস্রাধিক জেলেকে এই নিষেধাজ্ঞাকালে মাছ শিকার থেকে বিরত থাকতে হবে।
সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, ২০মে থেকে মৎস্য অধিদপ্তরের জারিকৃত সাগরে নিষেধাজ্ঞার সাথে বনবিভাগেরও একাত্মতায় মাছ ধরা বন্ধ থাকবে সুন্দরবনেও। এছাড়া ১লা জুন থেকে ৩১আগস্ট পর্যন্ত মাছ ও বন্যপ্রাণীর প্রজনন মৌসুম হওয়াতে এই সময়েও সুন্দরবনের নদী-খালে কোন প্রকার মাছ শিকার করতে পারবেন না জেলেরা। সেই সাথে মাছ ও বন্যপ্রাণীর প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে বন্ধ থাকবে সুন্দরবনে পর্যটনবাহী নৌযান চলাচলও। কারণ নৌযান চলাচলে মাছের প্রজনন এলাকা ক্ষতিগ্রস্থ ও নৌযানের বিকট শব্দে বন্যপ্রাণীর বিচরণসহ প্রজনন কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়ে থাকে। তাই সুন্দরবনে জেলে ও পর্যটকদের প্রবেশ বন্ধ থাকে তিন মাস ধরেই।