রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: কর্মোপযোগী শিক্ষার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত উন্নতি সম্ভব   নববর্ষের আনন্দ যেন বিষাদের কারণ না হয়: রাষ্ট্রপতি   নির্বাচনে ২১ সদস্যের মনিটরিং সেল গঠন ইসির   দেশজুড়ে যে তিনদিন মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা!   মির্জা ফখরুলের জামিন শুনানি ৯ জানুয়ারি   প্রাথমিকের ছুটি বাড়ল ১৬ দিন (তালিকা)   নির্বাচনের বিরুদ্ধে বিএনপির প্রচারণা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
৫০০ বছরের বটগাছের নিচ আগের মতোই!
ষষ্ঠী পূজা করতে চান সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৮ মে, ২০২৩, ৮:২৬ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

স্থানীয় বাসিন্দা ও বয়োজ্যেষ্ঠদের দাবি, বটগাছটির বয়স আনুমানিক ৫০০ বছরের অধিক। মূল গাছটি এখন নেই। অনেক আগেই ধ্বংস হয়েছে। জড় ও কান্ড মিলে গাছের ব্যাপ্তি ছড়িয়েছে অনেকটুকু জাগয়াজুড়ে। এই গাছের নিচে যুগ যুগ ধরে আশ্রয় নেয় ক্লান্ত পথিক। আড্ডা জমায় স্থানীয় তরুণ-যুবক ও বৃদ্ধরা। বিশাল বড়ো জায়গা নিয়ে গাছের জড়ের অবস্থান হওয়ায় গাছের জড়গুলোতে গরু-ছাগল বেঁধে দেয় স্থানীয়রা। দীর্ঘদিন ধরে এই গাছের নিচেই রয়েছে ষষ্ঠীর আটন। এখানে দীর্ঘদিন ধরে ষষ্ঠী পূজা করে থাকেন স্থানীয় সনাতন বা হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন।

সম্প্রতি গাছটি বেড়া দিয়ে ঘিরেছে সীমান্তবর্তী চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার ঝাউবোনা গ্রামে থাকা গাছটির পাশের জমির মালিক মৃত ওসমান মোল্লার ছেলেরা। ভিপি সম্পত্তি বা অর্পিত সম্পত্তি হওয়া স্বত্বেও তা নিজেদের নামে খারিজ করে ঘিরে ফেলায় এনিয়ে ক্ষোভ সনাতন ধর্মাবলম্বী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের। পরে এনিয়ে গত ১৭ এপ্রিল ভোলাহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর বটগাছটি উন্মুক্ত করে বাঁধাই করার দাবিতে ৩৩ জনের সাক্ষরিত একটি লিখিত আবেদন করেছেন স্থানীয়রা।

শ্রী শিদাম শীলের স্ত্রী প্রতিমা রানী বলেন, আমরা জানি, গাছটি সরকারি জায়গায় রয়েছে। ধর্মীয় রীতি মেনে আমরা দীর্ঘদিন ধরে সেখানে ষষ্ঠী পূজা করি। আমি প্রায় ২৫ বছর ধরে এখানে পুজা করি। আমার শাশুড়ীরা আমার বিয়ের আগে থেকেও পুজা করতেন। এই পূজা বটগাছের নিচেই করতে হয়। এমনকি আশেপাশে এতো পুরানো গাছ আর নাই।

কর্ণ শীলের স্ত্রী রুপালী রানী জানান, ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, বটগাছের নিচে থাকা থান (পাথর থাকা জায়গা) অত্যান্ত পবিত্র। বিভিন্ন মানত করতে বা আর্শিবাদ নিতে সেখানে পূজা করি। আশেপাশের কয়েকটি গ্রাম থেকে সনাতন ধর্মের অনুসারীরা এখানে পুজা করতে আসে। আমরা এখানে সংখ্যালঘু' প্রতিবাদ করতে পারিনা। এর আগে দেখেছি করে ছাগল বাধা, দোকান দেয়াসহ বিভিন্ন কাজ করা হয়েছে। মানা করলে তারা শুনে না। আমরা চাই, গাছটি উন্মুক্ত রাখা হোক।

শ্রী রনজিৎ বলেন, আমরা শুনেছে, এটা হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা ছিল। যার ফলে ধারণা করা হয়, শত বছর আগেও এখানে পূজা করতেন হিন্দু ধর্মের অনুসারীরা। কিন্তু ভারত-পাকিস্তান বিভক্তি ও স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে হিন্দু ধর্মের অনুসারীরা অনেকে ভারতে চলে যায়৷ এরপরই এখানে হিন্দু ধর্মের অনুসারীদের সংখ্যা কমে যায়৷ ফলে আমরা সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছি। আনুমানিক ২০টি পরিবার এখানে ষষ্ঠী পুজা করে। আমাদের দাবি, গাছটি কোনভাবেই ব্যক্তিমালিকানায় না দিয়ে সরকারি সম্পত্তি হিসেবে রাখা হোক, যাতে আমরা স্বাধীনভাবে পূজা উদযাপন করতে পারি।

স্থানীয় বাসিন্দা মারুফ রেজা (২৫) জানান, আনুমানিক এক বছর আগে হঠাৎ ঝড়ে গাছটির কিছু ডালপালা ভেঙে যায়। পরে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ৩৩ হাজার নিলামে কিনে নেয়। তখন স্থানীয় কোন ব্যক্তি গাছটির মালিকানা করেননি।

ওর্য়াড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. হুসেন আলী (৪০) বলেন, আমরা জন্মের পর থেকে জানি, গাছটি ভিপি প্রোপার্টি বা অর্পিত সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে। স্থানীয়রা বিভিন্ন কাজে গাছটির ছায়ায় আশ্রয় নেয়। এমনকি আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই গাছটির গোড়া বেঁধে দেয়ার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদকে অনুরোধ করছি। কিন্তু গাছের পাশে যাদের বাড়ি তাদের বাঁধার কারনে তা বাধায় হচ্ছে না।

ঝাউবোনা গ্রামের আব্দুল আওয়াল, মো. আলাউদ্দিন জানান, আমরা গাছটিকে অবমুক্ত চাই। এমন একটি দীর্ঘদিনের গাছ আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বহন করে। তাই তা কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে দেয়াটা অনুচিত।

মৃত ওসমান মোল্লার ছেলে রবিউল ইসলাম জানান, আমাাদের পৈত্রিক সম্পত্তির মধ্যেই রয়েছে আনুমানিক ৫০০-৬০০ বছর বয়সী বটগাছটি। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীরা গাছটি আমাদের অধীনে থাকুক তা চাই না। তবে গাছটির কিছু অংশ সরকারি জায়গায় রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ভোলাহাট উপজেলা যুব মহিলা লীগের  সাধারণ সম্পাদক ও রবিউল ইসলামের স্ত্রী জাহজাদী বেগম বলেন, পারিবারিক ও রাজনৈতিক কারনে আমাদের পরিবারকে হয়রানী করতেই বটগাছ নিয়ে নানারকম অভিযোগ করা হচ্ছে। বাড়ির সামনের বটগাছটি উন্মুক্ত থাকলে বা বাঁধাই করলে আমাদের পরিবারের মেয়েদের নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে৷ তাছাড়া ভূমি অফিসের সকল নিয়ম মেনেই এই সম্পত্তি আমাদের নামে খারিজ হয়েছে।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ষষ্ঠী পূজা করা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, এখানে দীর্ঘদিন ধরেই পুজা হয়। কিন্তু পূজা করতে দেয়া নিয়ে আমাদের কোন বাঁধা বা আপত্তি নেই।

ভোলাহাট ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, ঝাউবোনা মৌজার জেল নম্বর-১৬, আরএস খতিয়ান ০১ নম্বর দাগে ০.০১০০ একর জমিটি কয়েক মাস আগে খারিজ হয়েছে। আদালতের একটি রায়ের প্রেক্ষিতে ভূমি অফিস তাদেরকে এই জায়গাটি খারিজ করে দেয়। তবে এর বিরুদ্ধে প্রথমে ভূমি অফিস ও পরে আদালতে আপিল করার সুযোগ রয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু কুমার ঘোষ বলেন, ধর্মীয় রীতিনীতি মানতে গিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বড় বটগাছের তলায় ষষ্ঠী পুজা করে। আমরা জায়গাটিকে পবিত্র মনে করেই পুজা করি। আমাদের বিশ্বাস, সেখানে দেবীর অবস্থান রয়েছে। এমন একটি ধর্মীয় আচারের ঐতিহ্যবাহী গাছের জায়গাটি কারো ব্যক্তিগত করে দেয়ার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানায়। আমরা চাই, তা উন্মুক্ত ও সরকারের অধীনে থাকুক। তাতে নির্বিঘ্নে পুজা করতে পারবেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভূমি কর্মকর্তাদের অনুরোধ করব, আমাদের দাবি বাস্তবায়ন করার।

এবিষয়ে কথা বলতে উপজেলা ভূমি অফিসে গেলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং উপজেলা কার্যালয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে তাবাসসুমকে পাওয়া যায়নি। এমনকি একাধিকবার তার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন বলেন, বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করে একটি সুষ্ঠু সমাধান করা হবে।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]