কালবৈশাখী ঝড়ে নাটোরের বাগাতিপাড়ার বাগানের কয়েকশ মণ আম ঝরে পড়ে গেছে। সেই আম বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২ টাকা কেজিতে। এ অবস্থায় চরম হতাশায় পড়েছেন স্থানীয় আম চাষিরা।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ২৯টি মৌজায় ৭৫০ হেক্টর জমির আম, ১৬ হেক্টর জমির লিচু, ৫২৫ হেক্টর জমির পাট ও ১০৫ হেক্টর জমির বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে। টাকার অঙ্কে এই ক্ষতির পরিমাণ ২৫ কোটি ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
বুধবার বিভিন্ন বাগান ও আড়তসহ মোড়ে মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, ঝরে পড়া আম কেনার ধুম পড়েছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রতি কেজি আম কিনছেন মাত্র ২ টাকা কেজি দরে। আকারে ছোটগুলো কিনছেন দেড় টাকা কেজি দরে।
চাষিরা বলছেন, মৌসুমের শুরুতেই তীব্র খরায় আম নিয়ে বিপাকে পড়েন তারা। গাছের গোড়ায় রস না থাকায় বোঁটা শুকিয়ে গুটি ঝরে পড়া শুরু হয়। এর মাঝে মঙ্গলবার আবার আঘাত হানল কালবৈশাখী ঝড়। সব মিলিয়ে কয়েকশ মণ আম ঝরে গেছে। বেশিরভাগই ল্যাংড়া, ফজলি ও হিমসাগর জাতের।
গালিমপুর প্রামের চাষি গোলাম কিবরীয়া বলেন, আমার ছয় বিঘা বাগানে প্রায় পাঁচ মণ আম ঝরে গেছে। দুই টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। প্রতি বছর কীটনাশকের দাম দ্বিগুণ হচ্ছে; কিন্তু কাঁচা আমের কেজি ২ টাকাই আছে।
একই এলাকার আম ব্যবসায়ী আম্মাদ আলী জানান, গ্রামে ঘুরে ঘুরে ঝরে পড়া আম ৮০ টাকা মণ দরে কিনেছেন। এসব আম প্রতি মণে ২০ থেকে ২৫ টাকা লাভে আড়তদারের কাছে বিক্রি করবেন। আড়তে এসব আমের চাহিদা না থাকায় দাম কম বলে জানান তিনি।
ফাগুয়াড়দিয়াড় এলাকার আম চাষি আব্দুল আজিজ বলেন, ঝরে পড়া আম আড়তে এনে ২-৩ টাকা কেজি বিক্রি করছি। এতে গাড়ি ভাড়া ও শ্রমিক খরচই উঠবে না। এখানে সংরক্ষণাগার থাকলে এতটা লোকসান হতো না।
তমালতলা বাজার এলাকার আড়তদার বাজু মন্ডল বলেন, ফড়িয়াদের কাছে থেকে ১০০-১১০ টাকা মণ দরে ঝরে পড়া আম কিনছি। ঢাকায় পাঠাব। কিন্তু আমের চেয়ে পাঠানোর খরচই বেশি। ট্রাক ভাড়া ৩০ হাজার টাকা দেওয়ার পর এই আম বিক্রি করে লাভ করা কঠিন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. ভবসিন্ধু রায় বলেন, ঝড়ে আমসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ক্ষতিগ্রস্থ আম চাষিদের তালিকা করা হয়েছে। কৃষি অফিস থেকে তাদের সহযোগীতা করা হবে।
এদিকে টানা ২৬ ঘন্টা বিদ্যুৎ না থাকায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অটো-ভ্যান চালকদের গাড়ি বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। এতে আর্থীক ক্ষাতির সম্মূখীন হতে হচ্ছে তাদের।