জাতীয় পার্টিতে চলছে ক্ষমতার লড়াই। দলের কর্তৃত্ব কার হাতে থাকবে এ নিয়ে জাপায় অভ্যন্তীরণ বিশৃংখলা চরমে। আর এই সুযোগটাই কাজে লাগাতে মরিয়া বিএনপি। সূত্র জানিয়েছে, ইদানিং জাপা চেয়ারম্যান আর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মধ্যে যোগাযোগ বেড়েছে। নিয়মিত হচ্ছে কুশল বিনিময়ও। তবে এটাকে নিছক সৌজন্য রক্ষার সর্ম্পক বলে মনে করছেন না খোদ জাতীয় পার্টির নেতারা। তাদের মতে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও জাপা চেয়ারম্যানের মধ্যকার বিরোধকে পুঁজি করে বিএনপি সুযোগ কাজে লাগাতে ওঠেপড়ে লেগেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ক্ষমতাসীন দলের সুবিধাভোগী দল হিসেবে জাতীয় পার্টি সব সময় নিজেদের ক্ষমতার কাছাকাছি রাখতে চায়। সেই চিন্তা থেকেই শেষ মুহূর্তে সুবিধাবাদী দল হিসেবে যাদের পাল্লা ভারি হবে সে দিকেই যাবে দলটি। তবে অনেকেই মনে করেন জাতীয় পার্টি দুটি অপশনই খোলা রাখতে চায়। আওয়ামী লীগ বা বিএনপি কোন জোটে যাওয়া যাবে সেটা নিয়ে দর কষাকষি হতে পারে অথবা ভাবতে পারে যে বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে অর্থাৎ বর্জনের পথে যায় তাহলে সেই শূন্যস্থানটা পূরণ করার মত একটা অবস্থান নিতে পারে জাপা। এটা রাজনীতি কৌশল হিসেবে নিতে পারে। বিএনপির তরফ থেকে জাপাকে দেখানো হচ্ছে নানান লোভও।
সম্প্রতি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানসহ শীর্ষ নেতারা সরকারের সমালোচনায় মুখর। অথচ গেলো দুটি জাতীয় নির্বাচনে তারা ছিলো আওয়ামী লীগের অন্যতম নির্বাচনী মিত্র। সম্প্রতি জাতীয় পার্টির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপি এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদেরকেও উপস্থিত হতে দেখা যাচ্ছে।
জানা গেছে, মুখে মুখে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের তিনশ’ আসনে প্রার্থী দেবে বললেও তিনি বিকল্প চিন্তা মাথায় নিয়ে বিএনপির সঙ্গে অতিগোপনে যোগাযোগ রাখছেন। কারণ জিএম কাদের মনে করেন এখ পর্যন্ত দলের বেশির ভাগ এমপি তার পক্ষে কথা বললেও নির্বাচনকালীন সরকারের সময়ে এই চিত্র বদলে যেতে পারে। কারণ সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে ক্ষমতাসীন দলে কদর আছে রওশন এরশাদের। এ কারণে শেষ পর্যন্ত রওশনকে যদি সরকার সামনে নিয়ে আসে তখন তিনি বেকাদায় পড়তে পারেন। এ কারণে ভেতরে ভেতরে বিকল্প হিসেবে বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াচ্ছেন।
জাতীয় পার্টির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রেসেডিয়াম সদস্য ভোরের পাতাকে বলেন. আমরা সবাই অপেক্ষা করছি পরিবর্তনের জন্য। গত ১১ মে গুলশানে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি আয়োজিত রাজনৈতিক দলের ঈদ আড্ডা অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে কিছুক্ষণ একান্তে কথা বলেন জিএম কাদের। সেখানে উঠে আসে নানান প্রসঙ্গ।
যদিও এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখানে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ জেনারেল মুহাম্মদ ইব্রাহিমের ডাকে সাড়া দিয়েছেন। এই আড্ডা সবদিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি আড্ডাটা নতুন করে আশা তৈরি করবে। আমরা সবাই অপেক্ষা করছি পরিবর্তনের জন্য। অপেক্ষা করছি সত্যিকার অর্থে এটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ করার জন্য।’
আর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতারা কারো প্রতিপক্ষ নন, একে অপরের যেন শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদেরকে একে অপরের প্রতি সহনশীল হতে হবে। সামাজিক ভাবে কাজ করতে হবে। তাহলে দেশের রাজনীতিতে আগামীতে সুবাতাস বইবে।’
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, আমরা কারও অধীনস্থ নই, কারও কথা শুনতে বাধ্য নই। তবে আমরা কাউকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য রাজনীতি করছি না। শেষ পর্যন্ত পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে আমাদের নিজস্ব দলকে আমরা সংগঠিত করার পর জোট করার প্রশ্ন আসলে তখন আমরা বিবেচনা করব।
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বীরপ্রতীক-এর সভাপতিত্বে ও দলটির যুগ্ম মহাসচিব আবদুল্লাহ আল হাসান সাকীবের সঞ্চালনায় গুলশানের-১ এর এক কনভেনশন সেন্টারে আয়োজন করা হয় এই ‘ ঈদ আড্ডা’র।
ঈদ আড্ডায় যোগ দেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাপার চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জাগপার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমান, এনপিপির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, গণফোরামের সভাপতি মোস্তফা মহসীন মন্টু, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর প্রমুখ।
আসছে নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ভাবনা কি এমন প্রশ্নের জবাবে দলের চেয়ারম্যান বলছেন, কারও জন্যই বন্ধ নয় জাতীয় পার্টির দরজা। তবে আগামী সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে তার দল।
জিএম কাদের বলেন, আমরা ৩০০ আসনে নির্বাচন করার জন্য সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করব। তবে নির্বাচনের আগ মুহূর্তে এসে আমাদের সাংগঠনিক অবস্থা, প্রার্থীদের অবস্থা সবকিছু বিবেচনা করে এবং দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব যে, আমরা একক করব না কারো সঙ্গে যাব। আমরা তো এখনো কারও জন্য দরজা উন্মুক্ত করিনি আবার বন্ধও করিনি।
তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি কোন দলের ক্ষমতায় যাওয়ার হাতিয়ার নয়। এতদিন আওয়ামী লীগের অধীনে জোটে থাকলেও, আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির নেতৃত্বেই জোট গঠনের ইঙ্গিত দেন তিনি।