ঢাকার অদূরে গুরুত্বপূর্ণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে ভোটের রাজনীতি সরগরম হয়ে উঠেছে। আগামী ২৫ মে নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী এ্যাড. আজমত উল্লাহ খানকে জয়ী করতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতা থেকে শুরু করে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতাকর্মীরাও মাঠে নেমেছে। সেখানে আওয়ামী লীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার হওয়া এবং দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম কার্যত অনেকটাই নিঃসঙ্গ হয়ে পরেছেন। এমনকি, দল থেকে বহিষ্কারের পর স্ত্রীর কাছ থেকেও তালাকের নোটিশ পেয়ে অনেকটাই চুপসে গেছেন জাহাঙ্গীর। ফলে তার কপালে শনির দশাই কার্যত ভর করেছে বলে মনে করছেন তার ঘনিষ্ঠজন থেকে শুরু করে গাজীপুরের সাধারণ মানুষ।
গাজীপুরের স্থানীয় সূত্র এবং ভোরের পাতার অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের পাশে এখন শুধুমাত্র বিএনপি-জামায়াতপন্থী আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী এবং তার আমলে অবৈধ সুবিধা নেয়া কয়েকজন লোক রয়েছেন। তারাও সটকে পরার পাঁয়তারা করছেন বলে জানা গেছে। এমনকি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো ধরণের অরাজকতা করার সুযোগ কাউকে দেয়া হবে না। সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ও তার অনুসারীদের কঠোর নজরদারিতেও রাখা হয়েছে।
এদিকে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বারবার কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিলেও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে নিজের মাকে জিতিয়ে আনার বিষয়ে অনড় সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম।
জাহাঙ্গীরের সমর্থকরা বলছেন, নির্বাচন কমিশন যাচাই-বাছাইয়ের সময় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেছে। তবে, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তার মা জায়েদা খাতুনের মনোনয়ন গৃহীত হয়েছে। জায়েদা খাতুনকে জেতাতে মরিয়া হয়ে কাজ করছেন জাহাঙ্গীর। গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর ভোগড়া বাইপাস জামে মসজিদে জাহাঙ্গীর বলেন, 'ভবিষ্যতে আর কেউ যেন এ ধরনের অন্যায়ের শিকার না হন, সেজন্য একজন ভালো মানুষকে নির্বাচিত করার জন্য আমি আপনাদের সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আমার মাকে মেয়র পদে নির্বাচিত করার জন্য আমি আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি।'
তবে এরপর থেকেই সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম অনেকটা চুপসে গেছেন নির্বাচনী মাঠ থেকে। এরপর গাজীপুরের বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তলবি নোটিশে জাহাঙ্গীর আলমকে আগামী ২১ ও ২২ মে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হয়ে বক্তব্য দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
বুধবার (১৭ মে) দুদকের প্রধান কার্যালয় সূত্রে বিষয়টি জানা গেছে। এর আগে মঙ্গলবার (১৬ মে) দুদকের পক্ষে থেকে পাঠানো দুটি তলবি নোটিশ গ্রহণ করেন জাহাঙ্গীর। সোমবার (১৫ মে) দুদকের উপপরিচালক মো. আলী আকবর স্বাক্ষরিত পৃথক দুটি নোটিশ সাবেক মেয়রের ঠিকানায় পাঠানো হয়।
জানা গেছে, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ ও ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের অভিযোগ অনুসন্ধানের স্বার্থে তাকে তলব করা হয়েছে।
গত বছরের জুন মাসে গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। একই সঙ্গে দুই সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়।
২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমকে এক প্রজ্ঞাপনে বহিষ্কার করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। ওই প্রজ্ঞাপনে জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ভুয়া দরপত্র, নির্দিষ্ট কোম্পানিকে দর দেওয়ার অনুরোধ সংক্রান্ত (আরএফকিউ) দরপত্রে অনিয়ম, বিভিন্ন পদে অযৌক্তিক লোকবল নিয়োগ, বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে ও একই কাজ বিভিন্ন প্রকল্পে দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, প্রতিবছর হাটবাজার ইজারার টাকা যথাযথভাবে নির্ধারিত খাতে জমা না রাখাসহ বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপিত হয়। এছাড়া ভূমি দখল ও ক্ষতিপূরণ ছাড়া রাস্তা প্রশস্তকরণ সংক্রান্ত অভিযোগও রয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, উল্লিখিত অভিযোগগুলো ক্ষমতার অপব্যবহার, বিধিনিষেধের পরিপন্থি কার্যকলাপ, দুর্নীতি ও ইচ্ছাকৃত অপশাসনের শামিল, যা সিটি করপোরেশন আইনানুযায়ী অপসারণযোগ্য অপরাধ। এরই মধ্যে এসব অভিযোগের তদন্ত কার্যক্রম শুরু করার মাধ্যমে সিটি করপোরেশন অপসারণের কার্যক্রমও শুরু করেছে। সুষ্ঠু তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার স্বার্থে জাহাঙ্গীর আলমকে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।
আওয়ামী লীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার হওয়া জাহাঙ্গীর আলমকে ঘিরে রেখেছেন বিএনপি-জামায়াতপন্থীরা। স্থানীয় ও ভোরের পাতার নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। এদিকে, তাঁর বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানে গতি আনতে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) জাতীয় সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠনের মহাসচিব জি কে বাবুল একটি আবেদন জমা দেন। তিনি জাহাঙ্গীর ও তার পরিজনসহ ঘনিষ্ঠ সহচরদের দুর্নীতি-অনিয়মের অনুসন্ধানসহ তাদের সকলের সম্পদের হিসাব চেয়ে দুদকের অনুসন্ধান কাজ গতিশীল করার আবেদন জানিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত মেয়র অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলমকে ২০২১ সালে ১৯ নভেম্বর দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয। ২৫ নভেম্বর তাকে মেয়র পদ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা ও দলে ফিরতে কেন্দ্রে আবেদন করেছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। যার ফলে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে দলে ফিরিয়ে নিয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। চলতি বছর ১ জানুয়ারি বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের চিঠি ইস্যু হলেও তা প্রকাশ্যে আসে বেশ কয়েকদিন পর। তবে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের আগেই গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব আসে। ফলে তিনি সাবেক সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দিয়েই আবারো রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে গাজীপুরের একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
সুমহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে দৃষ্টতাপূর্ণ মন্তব্য করার দায়ে দল থেকে বহিষ্কার হওয়া জাহাঙ্গীর আলম এখনো গাজীপুরে রাজনীতি করছেন বিএনপি-জামায়াতপন্থী থেকে শুরু করে সরকার বিরোধী হেফাজতে ইসলাম থেকে অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে।
তবে, ২০২২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর দুদক জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়ার কথা জানায়। একই দিন অভিযোগের বিষয়ে দুদক গঠিত অনুসন্ধান টিম গাজীপুরের নগর ভবন, ব্যাংক ও পোশাক কারখনাসহ সংশ্লিষ্ট অফিসে অনুসন্ধান শুরু করে।
দুদকে করা আবেদনে জি কে বাবুল বলেন, ‘দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডসহ অসংখ্য পরিবারকে সর্বশান্ত করে শত-শত কোটি টাকা লুটপাট আর অন্যের জমি-ফ্যাক্টরি দখলসহ চাঁদাবাজি এবং ঠান্ডা মাথায় মানুষ খুন করার মাস্টারমাইন্ড জাহাঙ্গীর আলম।’
‘বিশ্ব ইজতেমার টাকা আত্মসাৎ দিয়ে শুরু হয় জাহাঙ্গীরের দুর্নীতি আর কুকীর্তি। এরপর সীমাহীন দুর্নীতি, লুটপাট ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এবং প্রকৌশলী দেলোয়ার হত্যার মাস্টারমাইন্ড খ্যাত জাহাঙ্গীরের নাম বারবার উঠে এসেছে।’
আবেদনে তিনি আরও লিখেছেন, জাহাঙ্গীরের নানাবাড়ি গাজীপুরে। তবে তার দাদার বাড়ি নোয়াখালীতে। এই কারণে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের নাম যত্রতত্র ব্যবহার করে এই জাহাঙ্গীর অতি দ্রুত আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রভাব ও আধিপত্য বিস্তার করে।
বাবা মিজানুর রহমানের অভাবের সংসারে ১৯৭৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন জাহাঙ্গীর। স্থানীয় চান্দনা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাসের পর ভর্তি হন ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজে। জাহাঙ্গীরদের পরিবারে অর্থনৈতিক টানাপোড়নের কারণে তার মামা বিএনপি কর্মী শফিকুল আলম তাদের অভাবের সংসারে সামাল দিতে জাহাঙ্গীরকে নিজের কাজের সঙ্গে যুক্ত করেন।
জাহাঙ্গীরের মামা শফিকুল ছিলেন বিএনপি নেতা আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ইসলামপুরের বাগানবাড়ির কেয়ারটেকার। ১৯৯০-৯১ সালের দিকে আব্দুল আউয়াল মিন্টু গাজীপুরে প্রচুর জমিজমা কেনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন কেয়ারটেকার শফিকুলকে। সেসময় এবং সুযোগ কাজে লাগিয়ে শফিকুল জাহাঙ্গীরকেও যুক্ত করেন।
জমি কেনাবেচা ও দালালি করে জাহাঙ্গীর ধীরে ধীরে জমি-বাড়ি দখল করে কেনাবেচার কাজে জড়িয়ে পড়েন। জাহাঙ্গীরের হাতে কাঁচা টাকা আসা শুরু হয়। একপর্যায়ে গাজীপুর ও ময়মনসিংহের ঝুট ব্যবসা তার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। জাহাঙ্গীরের অর্থ আয়ের একটি বড় খাত হলো বিভিন্ন গার্মেন্টেসের ঝুট ও সুতার কারবার এবং জায়গা জমি-কেনাবেচা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ফ্যাক্টরি দখলসহ কমিশন বাণিজ্য করা।
জাহাঙ্গীর নিজেকে সম্রাট জাহাঙ্গীর মনে করে উল্লেখ করে দুদকে আবেদনকারী আরও বলেছেন, ‘জাহাঙ্গীরের সঙ্গে বিভিন্ন মাফিয়াদের সখ্যতা তৈরি হওয়ায় এখন তার নিজস্ব বাহিনী তৈরি হয়েছে। এ কারণে জাহাঙ্গীর তার বিশ্বস্ত সহযোগীদের দিয়ে সকল অপকর্ম পরিচালনা করেছে।’
জাহাঙ্গীরের হয়ে গার্মেন্টসের কারবার নিয়ন্ত্রণ করতেন মহানগর আওয়ামী লীগের কথিত এক ক্যাডার নেতা বেনসন মুজিবর, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আর এক দাপুদে নেতা হাজী মনির এবং ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের দাপুটে কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর।
দুদকে করা আবেদনে জি কে বাবুল বলেন, জাহাঙ্গীরের সান্নিধ্যে থেকে এলাকায় কয়েক কোটি টাকা খরচ করে বাড়ি করেন কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর। এছাড়া জাহাঙ্গীরের দেহরক্ষী হিসেবে পরিচিত আশরাফুল আলম রানা ওরফে রানা মোল্লা ইটাহাটা এলাকায় প্রাসাদপ্রমোদ বাড়ি নির্মাণ করেছেন।
তিনি অভিযোগ করেন, সিটি করপোরেশনের প্রকল্প তিনবার দেখিয়ে প্রায় ৩৮ কোটি টাকা আত্মসাতের পরিকল্পনা করেন জাহাঙ্গীর। এতে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর কারণে প্রকৌশলী দেলোয়ারকে প্রাণ দিতে হয়।
দেলোয়ার হত্যার পর জাহাঙ্গীরের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত সুন্দর মনির ওরফে কিলার মনির কিছুদিন গা-ঢাকা দেন। জাহাঙ্গীরের অপকর্মের অংশীদার হওয়ার সুযোগ কাজে লাগিয়ে জাহাঙ্গীরের ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎও করেন মনির।
এছাড়াও জি কে বাবুল আবেদনে অভিযোগ করেন, জাহাঙ্গীর কৌশলে গাজীপুরের এক প্রভাবশালী মন্ত্রী ও টঙ্গী এলাকার আওয়ামী লীগ নেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে সুকৌশলে দাওয়াত দিয়ে তার উত্তরার একটি বিশেষ প্রমোদ বালাখানায় নিতেন। সেখানে বিভিন্ন ধরনের বিশেষ নারীদের দিয়ে আপ্যায়ন করাতেন এবং সেগুলো গোপন সিসি ক্যামেরায় ধারণ করে রাখতেন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, জাহাঙ্গীর গাজীপুরের মেয়র হওয়ার পর ঠিকাদারি কাজ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন প্রকৃত যোগ্য ও সৎ ঠিকাদাররা। তিনি দলীয় বিলবোর্ড সিটি করপোরেশনের টাকায় তৈরি করে তার প্রচারণা চালাতেন।
এছাড়া দাতব্য সংস্থা জাহাঙ্গীর আলম ফাউন্ডেশন গড়ে তুলে চাঁদাবাজী ও লাঠিয়াল বাহিনী গড়ে তোলেন। গাজীপুর মহানগরের ৫৭টি ওয়ার্ডেই তাদের কার্যক্রম রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে কাজ করা পাঁচ শতাধিক ছেলেমেয়েকে সিটি করপোরেশন থেকে দীর্ঘ দিন ধরে বেতন দেন বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীর।
এছাড়াও আবেদনকারী জি কে বাবুল সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন পদে শত-শত চুক্তিভিত্তিক জনবল নিয়োগ দেওয়া, ভারত ও দুবাইয়ের একটি মাফিয়া গ্রুপের সঙ্গে সম্পৃক্ততা, সরকারকে বেকায়দায় ফেলার মতো ষড়যন্ত্র, বিএনপি ও জামায়াতকে অতি গোপনে পৃষ্ঠপোষকতা করার অভিযোগের কথাও বলেছেন।
জাহাঙ্গীরের অর্থ পাচারের সহায়তাকারী ও অনেক ঘটনার সাক্ষী সুমন, সুন্দর মনির, আশরাফুল, সোহাগ, কামরুল ইসলাম, রানা মোল্লা, ও গ্রাইম ইন্সুরেন্সের ডিএমডি দেলোয়ার হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ ও আইনের আওতায় আনলে অনেক কিছু বেরিয়ে আসবে বলেও তিনি তুলে ধরেছেন আবেদনে।
বিশেষ করে জাহাসীরের দেহরক্ষী আশরাফুল আলম রানা ওরফে রানা মোল্লাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে জাহাঙ্গীরের কোথায় কি সম্পদ এবং কতজন অস্ত্রধারী ক্যাডার আছে এবং কি পরিমান অস্ত্র ও মাদক কারবার আছে সেসব বিষয়ে জানা যাবে।
জাহাঙ্গীরের কথিত ক্যাশিয়ার সোহাগকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে জাহাঙ্গীরের না জানা অনেক তথ্য ও সম্পদের হিসাব পাওয়া যাবে। এছাড়া জাহাঙ্গীরের শ্বশুরবাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম ও তার কথিত ভাই সুন্দর মনির ওরফে কিলার মনিরকে আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অনেক অজানা তথ্য বেরিয়ে আসবে।
উল্লেখিত এই ব্যক্তিদের বিদেশ গমণে নিষেধাজ্ঞার আবেদনও করেছেন জি কে বাবুল। জাহাঙ্গীর ও তার পরিবারসহ তার সহযোগী ও দোসরদের বিরুদ্ধে আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগসহ সকলের সম্পদের হিসাব নিয়ে, অবৈধ সম্পদগুলো বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় নেওয়ার কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ভোরের পাতাকে বলেন, ‘দুর্নীতির অনুসন্ধান সবক্ষেত্রেই জটিল। এ ধরনের বিলম্ব অস্বাভাবিক নয়। অভিযোগের সংখ্যার তুলনায় প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা ও সক্ষমতার ঘাটতি এর অন্যতম কারণ হতে পারে।’
তবে অনেক সময় সদিচ্ছা ও সৎ সাহসের অভাব এরূপ অবস্থার পেছনে কাজ করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে যদি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পরিচয় বা অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে দুদক প্রভাবিত হয়। ব্যাপক আলোচিত এ ক্ষেত্রে এমন ঘটছে কি না প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘মানুষের আস্হা অর্জনের স্বার্থে দুদকের উচিত হবে আইনের চোখে সবাই সমান বিবেচনায় কোনো প্রকার ভয় বা করুণার ঊর্ধ্বে থেকে দায়িত্ব পালন করে মানুষের আস্থা অর্জনে সক্রিয় থাকা।’