তাহলে কেন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বলছে যে, এটা অবাধ আর স্বচ্ছ হয়নি? ইয়ালদা হাকিম প্রশ্ন করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘’সেটা আমি জানি না, তারা কীভাবে এটা দেখেছে। কিন্তু নির্বাচন অবশ্যই স্বচ্ছ এবং অবাধ হয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তারা (বিএনপি জোট) শুরুতে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতি কী হলো? আমাদের ৩০০ আসন আছে। আপনাকে তিনশো প্রার্থী দিতে হবে। তারা মনোনয়ন দিয়েছে প্রায় ৭০০ জনকে। তারা নিজেদের মধ্যে মারামারি করতে শুরু করে। একপর্যায়ে তারা নির্বাচন থেকে সরে যায়। তাহলে তারা কীভাবে দাবি করতে পারে যে, নির্বাচন স্বচ্ছ, অবাধ হয়নি।
সেই সময় ইয়ালদা হাকিম মনে করিয়ে দেন, এটা বিরোধীদের কথা নয়, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল এই তথ্য দিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘’আমি জানি। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল এটা বলেছে, আমার তাদের স্বচ্ছতা নিয়েই আমার সন্দেহ রয়েছে। আমি খোলাখুলি ভাবেই বলছি।‘’
রোহিঙ্গা ইস্যু
রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মানবাধিকারের কথা বিবেচনা করেই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়া হয়েছে।
ইয়ালদা হাকিম তাঁর কাছে জানতে চান, আপনি যখন তাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন, বিশ্বের কাছে অনেক প্রশংসা পেয়েছেন। তাদের বিপদের সময় ১০ লাখ মানুষকে আশ্রয় দিয়েছেন। বাংলাদেশকে, আপনাকে তারা প্রশংসা করেছে। কিন্তু পাঁচ বছর পরে কী হচ্ছে? সেখানে সংখ্যাতিরিক্ত মানুষ বসবাস করছে, ক্যাম্পে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটছে, সহিংসতা হচ্ছে। তাদের আরেকটি দ্বীপে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে?
শেখ হাসিনা বলেন, ‘’সেখানে যারা গিয়েছে, তারা অনেক ভালো অবস্থায় বসবাস করছে। কারণ সেখানে এক লাখ পরিবারের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। কে বলেছে সেটা বন্যা প্রবণ? বন্যা ঠেকাতে সেখানে সবকিছুই করা হয়েছে। সেখানে ভালো স্কুল, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা রয়েছে। ক্যাম্পের চেয়ে সেখানে বসবাসের ব্যবস্থা অনেক ভালো।‘’
তিনি বলেন, ''এখন যেখানে রোহিঙ্গা ক্যাম্প, ওই এলাকার পরিবেশ পুরো ধ্বংস হয়ে গেছে। ওখানে গভীর জঙ্গল ছিল, সেটা এখন নেই। তারা এখন একে অপরের সঙ্গে মারামারি করছে। তারা মানব পাচার, মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে।‘’
‘’এ ধরনের অভিযোগ করার আগে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের রোহিঙ্গারা যাতে নিজেদের দেশে ফিরে যেতে পারে, সেই ব্যবস্থা করা। তাদের (রোহিঙ্গাদের) উচিত নিজেদের দেশে ফিরে যাওয়া।‘’
কিন্তু রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া কি নিরাপদ? বিবিসির পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছেন, ‘’জাতিসংঘ এবং অন্য সংগঠনগুলোর সেজন্য ব্যবস্থা করা উচিত। তাদের (রোহিঙ্গাদের) নিজেদের দেশেই তাদের নিরাপদ থাকার কথা। এটা জাতিসংঘের নিশ্চিত করার দায়িত্ব, আমাদের না।‘’
‘’যখন তারা বিপদে ছিল, আমরা তাদের আমাদের দেশে ঢুকতে দিয়েছি, তাদের জন্য সব ব্যবস্থা করেছি। ৪০ হাজার নারী গর্ভবতী ছিল, তাদের খাবার, স্বাস্থ্য চিকিৎসা দিয়েছি। প্রথমে কেউ এগিয়ে আসেনি, আমাদের দেশের লোকজন তাদের সহায়তা করেছে।‘’
বিবিসির প্রশ্ন ছিল, মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে কী হবে? কারণ জাতিসংঘ বলেছে, কাউকে জোর করে পাঠানো উচিত নয়। ২০ জনের রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদল মিয়ানমার ঘুরে এসে বলেছে, বাংলাদেশি কর্মকর্তারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে তাদের মিয়ানমারের সামরিক জান্তার সঙ্গে বৈঠক করতে নিয়ে গেছে।
এই প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলছেন, ‘’না, আমি জানি না কেন তারা এটা বলছে। তারা স্বেচ্ছায় পরিস্থিতি দেখতে সেখানে গিয়েছিল। কেউ তাদের মিথ্যা বলে নিয়ে যায়নি। কেন মিথ্যা বলা হবে? তারা স্বেচ্ছায় সেখানকার পরিস্থিতি দেখতে গিয়েছিল। আমরা তাদের জোর করিনি।’’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘’আপনিই বলুন, কোন দেশ কীভাবে ১০ লাখের বেশি মানুষের এই বোঝা কতদিন বয়ে যাবে? দিন দিন এটা আরও বড় হচ্ছে, আমরা এই বোঝা কতদিন টানবো? তাদের উচিত নিজেদের দেশে ফিরে যাওয়া।‘’
‘’আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে, মানবাধিকার সংস্থা, জাতিসংঘকে অনুরোধ করেছি, তারা যাতে এসব মানুষকে নিজেদের দেশে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে। এটা তাদের দায়িত্ব। তারা এই বোঝা চিরদিনের জন্য আমাদের ওপর চাপিয়ে দিতে পারে না। এমনিতেই আমাদের দেশে জনসংখ্যা অনেক বেশি। আমাদের স্থানীয় মানুষজন অনেক দুঃখকষ্ট ভোগ করছে,’’ বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কিন্তু এই বিষয়ে কি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে বাংলাদেশ যথেষ্ট সমর্থন পাচ্ছে? জানতে চান বিবিসির ইয়ালদা হাকিম।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘’তারা সমর্থন করছে, কিন্তু তারা ইতিবাচক কিছু করছে না। আলোচনা করলেই তারা বলে বলে, হ্যাঁ, তাদের ফিরে যাওয়া উচিত। কিন্তু তারা ইতিবাচক কিছু করছে না। কেন? এটা আমার প্রশ্ন। মানবাধিকারের কথা চিন্তা করে আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি।‘’
‘’এখন আপনি বলুন, যখন আমরা এতো বেশি মানুষকে আমাদের দেশে আশ্রয় দিয়েছি, তখন কীভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অভিযোগ করে যে আমরা আমরা নিজেদের দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছি?’’ প্রশ্ন করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘’সুতরাং এসব অভিযোগ পুরোপুরি বানোয়াট। আমরা জানি না, কেন তারা এসব করছে? আমার নিজেরও প্রশ্ন, কেন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আনা হয়েছে?’’ সূত্র: বিবিসি বাংলা