যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতদিন পর কেন বিষোদগার করছেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘এটা আমরাও প্রশ্ন- উনি কেনো হঠাৎ করে এতদিন পরে ওই স্যাংশনের ওপরে বিষোদগার করছেন। তিনি ভালো করেই জানেন স্যাংশন কীভাবে দেয়। কিছুদিন আগেও কিন্তু স্যাংশনের কারণে রাশিয়ার একটি জাহাজ বাংলাদেশ ফেরত দিয়েছে।’
সোমবার (১৫) বিকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠক শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল ত্রিদেশীয় সফর নিয়ে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে ফের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া দেশ থেকে কোনো কিছু কিনবেন না বলে জানান। তিনি বলেন, এরই মধ্যে দুটি দেশ থেকে পণ্য না কেনার বিষয়ে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখন বাংলাদেশ কী ক্রয় করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে, এটা আমরা সব জানি। তার পরিমাণ বলুন বা তার ভলিউম বলুন-এটাও আমরা সব জানি। সুতরাং এটা তিনি কেন বলেছেন তা আমরা সহজে বুঝতে পারি। তিনি সম্ভবত ইরিটেডেট (বিরক্ত) হয়ে আছেন। কেন ইরিটেডেট হয়ে আছেন সেটা আমার জানা নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাতিকে তিনি (শেখ হাসিনা) ধারণা দিতে চান, এখানে বিকল্প কোনো নেতৃত্ব নেই এবং এই সফর সম্পূর্ণভাবে সফল হয়েছে। কিন্তু আমরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেয়েছি, সফরের সফলতা একদম জিরো।’
এবার সফরে বিশেষ কোন অর্জন নেই বলে মনে করেন বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা। বলেন, ‘আইএমএফের সঙ্গে যে চুক্তিগুলো হয়েছে তা কঠিন শর্তযুক্ত। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, আইএমএফ প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের প্রশংসা করেছে। কিন্তু জানতে পেয়েছি, এমন কিছু হলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি থেকে একটা বিবৃতি দেওয়া হতো। কিন্তু তা হয়নি।’
ঢাকায় রাষ্ট্রদূতদের বাড়তি প্রটোকল না দেওয়ার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন সে ব্যাপারে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ক্ষমতা হারানোর ভয়ে আছে সরকার, তাই পশ্চিমাদের ওপর রাগান্মিত তিনি। আমরা আশা করব, কোন দেশের সঙ্গে যেন বাংলাদেশের জনগণের সম্পর্ক নষ্ট না হয়।’
রিজার্ভ নিয়ে কোন টেনশন করার প্রয়োজন নেই প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রিজার্ভে যে সংকট তৈরি হয়েছে তা যে কোনো সময় মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। যে সব ব্যবসায়ীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য আমদানি করে তারা ডলারের কারণে আমদানি করতে পারছে না। প্রধান কারণ হচ্ছে রিজার্ভের পরিমাণ যা, তা দিয়ে পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। পদ্মা সেতুর যখন ঋণ পরিশোধ করতে হবে তখন সামনে আরো মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। আজকে পত্রিকায় এসেছে, বিমানবন্দরের জন্য আগামী বছর থেকে প্রতি মাসে ১৫ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। মারাত্মক সংকট সৃষ্টি সময়ের ব্যাপারমাত্র।’
আওয়ামী লীগ সরকার গত কয়েক দশকে বিদ্যুৎ খাতকে দুর্নীতির খাত হিসেবে চিহ্নিত করেছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। বলেন, ‘দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নেই। তাদের লোকেরা দুর্নীতি করেছে। এখন সাধারণ মানুষের পকেট কাটছে।’
গুলশানের বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপার্সন উপদেষ্টা কাউন্সিল সদস্য আমানউল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম, কবি আব্দুল হাই শিকদার, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ডক্টর এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক জেড খান রিয়াজ উদ্দিন নসু, সহ-তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক প্রো-ভিসি অধ্যাপক ডক্টর আ ফ ম ইউসুফ হায়দার।