প্রকাশ: সোমবার, ১৫ মে, ২০২৩, ৯:৪৬ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
অনেক জল্পনা কল্পনার পর রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা পৌঁছেছে। শনিবার (১৩ মে) তিনটি লাইটারে করে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৯ হাজার মেট্রিকটন কয়লা আনা হয়। এর আগে গত ২৫ এপ্রিল ইন্দোনেশিয়া থেকে ছেড়ে আসা বাংলাদেশের পতাকাবাহী ‘বসুন্ধরা ইমপ্রেস’ নামের জাহাটি গত ৯ মে ৪৯ হাজার ৭০০ মেট্রিকটন কয়লা নিয়ে চট্রগ্রাম বন্দরে নোঙ্গর করে। সেখান থেকে ১৯ হাজার ৫০০ মেট্রিকটন কয়লা ছোট লাইটারে খালাস হয়। খালাসকৃত কয়লার ৯ হাজার মেট্রিকটন কয়লা এরই মধ্যে রামপালের বিদ্যুৎকেন্দ্রে পৌঁছে গেছে। ‘বসুন্ধরা ইমপ্রেস’ জাহাজের স্থানীয় শিপিং এজেন্ট টগি শিপিং অ্যান্ড লজিষ্টিক শিপিংয়ের খুলনার সহকারি ব্যবস্থাপক খন্দকার রিয়াজুল হক এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি রবিবার (১৪ মে) বলেন, চট্রগ্রাম বন্দরে খালাস হওয়া ১৯ হাজার ৭০০ মেট্রিকটন কয়লার বাকি ১০ হাজার ৭০০ মেট্রিকটন কয়লা সোমবার (১৫ মে) মোংলার বঙ্গবন্ধু-ঘষিয়াখালী চ্যানেল দিয়ে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র আনা হবে। এরপর ‘বসুন্ধরা ইমপ্রেস’ জাহাজে থাকা ৩০ হাজার মেট্রিকটন কয়লা আনা হবে মোংলা বন্দরে। আগামী ১৬ মে (মঙ্গলবার) এই জাহাজ মোংলায় ঢুকবে। ঝড়ের কারণে বিলম্ব হচ্ছে তাই দেরি করে জাহাজটি মোংলা বন্দরে প্রবেশ করছে।
এদিকে কিছুতেই ঘুরে দাড়াতে না পারায় গত চার মাসে তিনবার বন্ধ হয় রামপালের এই তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। ফলে এসময় জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারেনি কেন্দ্রটি। সর্বশেষ গত ২৩ এপ্রিল রাত থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সুত্র থেকে জানা গেছে, গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর উৎপাদনে যাওয়ার ২০ থেকে ২২ দিন পরই আমদানিকৃত কয়রার স্বাভাবিক মজুদ শেষ হয়ে যায়। ডলার সংকটে এলসি খুলতে না পারায় রিজার্ভ কয়রা দিয়ে আরও পাঁচদিন উৎপাদন চালু রাখা হয়। পরে রিজার্ভ কয়লার মজুদ শেষ হয়ে গেলে গত ৪ জানুয়ারি সকালে বানিজ্যিক উৎপাদন শুরুর মাত্র ২৭ দিনের মাথায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৬৬০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার প্রথম ইউনিটটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তবে কয়লা সরবারহ স্বাভাবিক হলে এক মাসের মাথায় আবার উৎপাদনে ফেরে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। গত ১৫ এপ্রিল রাত থেকে যান্ত্রিক ত্রæটির কারণে আবারও বন্ধ হয়ে যায় এই মেগা প্রকল্পের উৎপাদন। তিন দিন বন্ধ থাকার পর ১৮ এপ্রিল সচল হলেও কয়লা সংকটে ২৩ এপ্রিল রাত থেকে ফের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
বর্তমানে উৎপাদন বন্ধ থাকলেও বিপুল পরিমান অর্থ ব্যয় হচ্ছে রক্ষণাবেক্ষণের কাজে। কারণ চুক্তি অনুযায়ী রামপালের বিদ্যুৎ পিডিবিকে কিনতে হয়। বিদ্যুৎকেন্দ্রেটি বন্ধ থাকলেও পিডিবিকে কেন্দ্রের সক্ষমতা ব্যয় পরিশোধ করতে হবে।
বাগেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মুহাম্মদ নুরুল হোসাইন বলেন, চাহিদা সংকুলান না হওয়ায় জাতীয় গ্রিড থেকে মাঝেমধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া পার্টানারশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফপিসিএল) উপ ব্যবস্থাপাক আনোয়ারুল আজিম বলেন, ‘নিয়মিত ৫৬০ থেকে ৫৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছিল রামপালের এই বিদ্যুৎকেন্দ্র। উৎপাদিত বিদ্যুতের মধ্যে ৪৬০ মেগাওয়াট ঢাকার জাতীয় গ্রিডে এবং ২০০ মেগাওয়াট খুলনা-বাগেরহাটে সরবরাহ করা হচ্ছিল। নিয়মিত উৎপাদনের জন্য কেন্দ্রটি দৈনিক পাঁচ হাজার মেট্রিকটন কয়লার প্রয়োজন হয়। কিন্তু কয়লা সংকটে গত ২৩ এপ্রিল রাত থেকে কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। তবে ৯ হাজার মেট্রিকটন কয়লা ইতোমধ্যে চলে এসেছে। তবে এখনই বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাব না, আগামী ১৬ মে মোংলা বন্দরে ৩০ হাজার মেট্রিকটন কয়লা আসার পরই দ্রæত সম্ভব রামপাল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা হবে।