প্রকাশ: সোমবার, ১৫ মে, ২০২৩, ২:০৩ পিএম আপডেট: ১৫.০৫.২০২৩ ২:১৫ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
যুব বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথ চলা শুরু হলো আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচ দিয়ে। ছেলেকে জাতীয় দলে খেলতে দেখে সবচেয়ে বেশি খুশি তার বাবা তাহাজ্জত হোসেন চৌধুরী। ক্রিকেটের পাঁড় ভক্ত তিনি, মৃত্যুঞ্জয় জন্মের দশ বছর আগেই ঠিক করে রেখেছিলেন ছেলে হলে ক্রিকেটার বানাবেন। প্রাথমিক স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল ছেলের মুখ দেখে, তাই তো জন্মের সঙ্গে সঙ্গে ছেলেকে ব্যাট ও বল উপহার দেন তিনি। নিজে পাকিস্তানের ওয়াসিম আকরামের বোলিংয়ের ভক্ত বলে ছেলেকেও 'সুলতান অব সুইংয়ের' মতোই বানাতে চেয়েছেন। এই কারণে ছেলে যেন ডানহাতি না হয়, তার সব রকম চেষ্টা করেন মৃত্যুঞ্জয়ের বাবা!
রবিবার চেমসফোর্ডে অভিষেক হয় মৃত্যুঞ্জয়ের। তবে অভিষেকে আলো ছড়াতে পারেননি তিনি। প্রথম ম্যাচে চাপ নিতে না পারলেও পেস বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে মৃত্যুঞ্জয় লম্বা রেসের ঘোড়াই হবেন! ছেলের অভিষেকের দিনে তাহাজ্জত জানালেন, কেন ছেলেকে ওয়াসিম আকরামের মতো বানাতে চেয়েছিলেন, ‘আমি ক্রিকেট সবসময়ই ফলো করতাম। ক্রিকেটে ওই সময় ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুসরা ছিল অসাধারণ জুটি। বিশেষ করে ওয়াসিম আকরামের বোলিং ভেরিয়েশেন আমাকে খুব মুগ্ধ করতো। ৬টা বল ছয় রকম করতো। বিয়ের পর আমি স্বপ্ন দেখা শুরু করি আমি যদি সুযোগ পাই, আমার সন্তানদের আমি ওয়াসিম আকরামের মতো পেসার বানাবো।’
মৃত্যুঞ্জয়ের বাবা তাহাজ্জত বলতে থাকেন, ‘বড় ছেলের সাথে ছোট ছেলের বয়সের পার্থক্য ১০ বছর। মৃতুঞ্জয়ের জন্ম ২০০০ সালে ৩০ জুন। ওর জন্মের ১০ বছর আগে আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নেই, যদি ছেলে সন্তান হয়, আমি তাকে ক্রিকেটার বানাবো। যেদিন মৃত্যুঞ্জয় জন্ম নেয়, সেদিনই ওকে আমি একটা টেনিস বল আর ব্যাট উপহার দিয়েছিলাম।’
ওয়াসিম আকরামের মতো বাঁহাতি বানানোর জন্য ছেলেকে নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষায় মেতে থাকতেন তাহাজ্জত, ‘যেহেতু ওয়াসিম আকরাম বাঁহাতি, ওকে (মৃত্যুঞ্জয়) আমি বাঁহাতি বানাবো। এই জন্য ডানহাত বেঁধে রেখেছি (হাসি), যেন ডানহাত আগে না যায়, বাঁহাত আগে যায়, বাঁহাতে শক্তি পায়। নানাভাবে বাঁহাতে শক্তি আনতে আমি নানা কসরত করিয়েছি। জন্মের পর থেকেই আমি ওর পেছনে বাঁহাতি বানানোর জন্য লেগে ছিলাম।’
ছেলেকে ক্রিকেটার বানানোর স্বপ্নের পেছনে ছুটতে ২০১২ সালে ক্রিকেট কোচিং স্কুলে ভর্তি করে দেন। আবাহনী মাঠ থেকে শুরু হয় মৃত্যুঞ্জয়ের স্বপ্নপূরণের লড়াই। সেই গল্প বলতে থাকেন তাহাজ্জত, ‘২০১২ সালে দিপু রায়ের একাডেমি ক্রিকেটে কোচিং স্কুলে ভর্তি করাই। ওর বোলিং দেখে দিপু রায় অবাক। উনি খুব যত্ন করতেন। ২০১৩ সালে উদয়ন ক্রিকেট একাডেমিতে ছেলেকে নিয়ে আসি। ওখানে জাফরুল এহসান সজ্জন মানুষ, খুব সৎ এবং নীতিবান। মৃত্যুঞ্জয়কে দেখে জাফরুল স্যার তো খুব অবাক, এতটুকু ছেলে কীভাবে এত ভালো খেলে। জাফরুল এহসান স্যারের কারণেই আজ ও এই পর্যন্ত এসেছে।’
ছেলের অভিষেকে বাড়তি কোনও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন না তাহাজ্জত, ‘মানুষ যখন স্বপ্ন ছুঁয়ে ফেলে, তখন মানুষের স্বপ্নের পরিধি বেড়ে যায়। এখন আমার স্বপ্নের পরিধি বড়। আমার মধ্যে বাড়তি কোনও উচ্ছ্বাস নেই। জাতীয় দলে সুযোগটাই তো শেষ নয়, ওকে লম্বা সময় খেলতে হবে। সেই পথটা তো ওকেই গড়তে হবে। বাবা হিসেবে খুব গর্ব অনুভব করছি। এই আনন্দ কোনও ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। আমি আমার ছেলেকে নিয়ে অনেক আশাবাদী।’
মা তাসলিমা খাতুনও ছেলেকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে খেলতে দেখে দারুণ খুশি, ‘আমার ক্রিকেট খুব প্রিয়, খেলা ভালোবাসি। এই ভালোবাসার জায়গাতে ছেলে এখন প্রতিনিধিত্ব করছে, সেটি আমার জন্য দারুণ ভালো লাগার ব্যাপার। আমরা ওর জন্য এমন কোনও চেষ্টা নেই যা করিনি। তবে সবচেয়ে বড় চেষ্টাটা ওর ছিল। ওর বাবার স্বপ্ন ছিল ছেলে ক্রিকেটার হবে। নিজের চেষ্টাতেই মৃত্যুঞ্জয় আজকে জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করছে।’ সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন