বরগুনার বেতাগীতে উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে দরিদ্র জেলেদের মাঝে ছাগল ও খোয়ার (ঘর) বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার দুপুরে বেতাগী উপজেলা পরিষদ চত্বরে ছাগল ও ঘর বিতরণ আনুষ্ঠান শেষে উপকারভোগীরা এ অভিযোগ তুলেন।
জানা গেছে, দেশীয় প্রজাতির মাছ এবং শামুক সংরক্ষন ও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় উপজেলা মৎস্য অফিসের অনুকূলে উপজেলার ২০টি জেলে পরিবারকে এক জোড়া করে ৪০টি ছাগল, একটি করে ছাগলের ঘর ও ছাগলের জন্য ভ্যাক্সিন ও খাবার বিতরণের জন্য ৪ লাখ ৪ হাজার ৯শ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। বরাদ্দের মধ্যে প্রতি জেলে পরিবারকে ১৪ হাজার টাকা মূল্যের এক জোড়া ছাগল, ৪ হাজার টাকা মূল্যের একটি কাঠের ঘর (খোপ) ও ২ হাজার ২শ' ৪৫ টাকার ছাগলের খাবার ও ভ্যাক্সিন দেয়ার পরিপত্র আসে। বেতাগী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সমাপ্তি সাহা ছাগল, ঘর ও অন্যান্য মালামাল ক্রয় করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে গত মঙ্গলবার (৯ মে) তা বিতরণ করেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলা পরিষদ কমেপ্লেক্সের ভেতরে অনুষ্ঠান স্থলের পাশেই বিতরণের জন্য ছোট আকারের ছাগলগুলোকে একসাথে বেঁধে রাখা হয়েছে। ২০ টি ছাগলের ঘর দেয়ার কথা থাকলেও ঘর বানানো হয়েছে ১০টি। পাশেই খোলা বস্তায় ছাগলের খাবার সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এসব দেখে ছাগল ও ঘর নিতে আসা উপস্থিত উপকারভোগীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
একাধিক উপকারভোগীরা জানান, যেসব ছাগল দেওয়া হয়েছে তাঁর জোড়া কিনতে ৬-৭ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়নি। আর ছাগলের জন্য যে ঘর দেওয়া হয়েছে তা দুর্বল কাঠ ও পাতলা টিন দিয়ে রেডিমেট তৈরি করা হয়েছে। যেগুলো কিনতে ২ থেকে আড়াই হাজার টাকার বেশি খরচ হবে না। আর খাবারেও হাজার খানেক টাকার বেশি খরচ হয়নি। জেলে প্রতি ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলে তা দিয়ে এর থেকে ভালো মানের ছাগল ও ছাগলের ঘর দেওয়া সম্ভব ছিলো।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের সুবিধাভোগী সুধাংশু হাওলাদার বলেন, আমি শুধু খাবার এবং এক জোড়া ছাগল পেয়েছি। ছাগলের ঘর বানানো হয়নি বিধায় ঘর পাইনি। যে দুইটি ছাগল পেয়েছি তার দাম ৭ হাজার টাকার পরিমান হবে বলে আমার ধারনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক সুবিধাভোগী, তারা যে মালামাল দিয়েছে তাই নিতেই আসতে হয়েছে। জেলেদের অনকূলে বরাদ্দের তুলনায় কম টাকার মালামাল এবং যে ঘরগুলো দেয়া হয়েছে তা নিম্নমানের। বেশিদিন এই ঘর টিকবে না। মৎস্য অফিসের সাথে জড়িত বিধায় প্রকাশ্যে কিছু বলতে পারছি না।
গোপালগঞ্জ মৎস্য চাষি সমিতির বেতাগী উপজেলা প্রতিনিধি এ.কে.এম মারুফ রেজা বলেন, জেলেদের মাঝে ছাগল ও ঘর বিতরণে অনিয়মের কথা আমিও শুনেছি। টেন্ডার কমিটির আমিও একজন সদস্য। কিন্ত কিভাবে, কোথা থেকে, কোন ধরনের মালামাল ক্রয় করা হয়েছে তার কিছুই জানিনা। টেন্ডার কমিটির কোন সভায় আমাকে ডাকা হয়নি। মৎস্য কর্মকর্তা সমাপ্তি সাহা নিজ দায়িত্বেই সকল মালামাল ক্রয় করেন। তিনি আরও বলেন, গোপালগঞ্জ মৎস্য চাষি সমিতি এই উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্যোক্তা হলেও এখানকার স্থানীয় প্রতিনিধিকে যতদুর সম্ভব মৎস্য কর্মকর্তা এড়িয়ে চলেন।
বেতাগী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সমাপ্তি সাহা এ সব অভিযোগের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোন মস্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি শুধু জানিয়েছেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতে ২০ জেলে পরিবারকে ছাগল, খাবার ও ছাগলের ঘর বিতরণ করা হয়েছে।
বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সুহৃদ সালেহীন বলেন, অভিযোগের বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।