রাজধানীতে তীব্র গ্যাস সংকট শুরু হয়েছে। এক মাস ধরে গ্যাসের সমস্যা থাকলেও এখন তা ভয়াবহ অবস্থায় পরিণত হয়েছে। রাজধানীর টিকাটুলি, মালিবাগ, শাহজাহানপুর, মগবাজার, আজিমপুর, লালবাগ, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, আদাবর, মধুবাজার, হাজারীবাগ, মিরপুর, এলিফ্যান্ট রোড, মতিঝিল, সেগুনবাগিচা, মানিকনগর, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, শনিরআখড়া, ওয়ারিসহ পুরান ঢাকার বেশ কয়েকটি এলাকায় থেকেই গ্যাস সংকটের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। গ্যাসের অভাবের কারণে গৃহিনীরা ঠিক মতোন রান্না-বান্না করতে পারছেন না। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের খাবার তৈরি করতে বেশি বেগ পেতে হচ্ছে। অনেকেই বাধ্য হয়ে বিভিন্ন হোটেল রেস্তোরা থেকে খাবার কিনে আনতে বাধ্য হচ্ছেন। এমনেতেই দেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠান, সার কারখানা, সিএনজি স্টেশন, আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্রাহকেরা এমনিতেই ক্রমবর্ধমান গ্যাস সংকটে জর্জরিত।এর মধ্যে আবাসিক গ্রাহকদের গ্যাস সংকট সরকারকে ভাবিয়ে তুলছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রকট আকারে গ্যাসের সংকট দেখা দিয়েছে। বেশ কয়েক দিন ধরে এ সংকট চললেও সমাধানের দেখা নেই। গ্যাস না থাকায় অনেকের রান্নাঘরে চুলা জ্বলেনি। তাই পরিবারের জন্য রান্না করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
তবে তিতাস জানায়, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ আগের চেয়ে ভালো হলেও সব জায়গায় সমান গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে না। ফলে রাজধানীর কিছু কিছু এলাকায় গ্যাসের সমস্যা। যা অচিরেই কেটে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিতাসের এক কর্মকর্তা বলেন, কারখানা আর বিদ্যুতে সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন যদি বিঘিœত হয় তবে সেটি সুখকর হবে না। আর একটু গ্যাসের সরবরাহ বৃদ্ধি করা হলে গৃহস্থালিতেও সংকট থাকতো না। বিষয়টি নির্ভর করছে পেট্রোবাংলার ওপর। সরকারের তরফ থেকে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করার নির্দেশ রয়েছে বলেও জানা গেছে।
এদিকে সরকারি সংস্থা পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, দেশে এখন দিনের বেলায় গ্যাসের চাহিদা থাকে ৪০০ কোটি ঘনফুট। সর্বোচ্চ সরবরাহ করা হয় ৩০০ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে দেশীয় উৎস থেকে আসে ২২৫ থেকে ২৩০ কোটি ঘনফুট। আর বাকিটা এলএনজি আমদানি করে মেটানো হয়। ২০৩০ সালে দিনে গ্যাসের চাহিদা হবে ৫৬০ কোটি ঘনফুট। এর কতটা আমদানি করে মেটানো হবে, তা নিশ্চিত করতে পারেনি পেট্রোবাংলা।
সূত্র জানিয়েছে, এই সমস্যা গত রমজান মাসের শুরু থেকে যা এখন ভয়াবহ রুপ নিয়েছে।রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায় গ্যাসের সমস্যা দেখা দিয়েছে। অনেক এলাকায় গ্যাস একদমই থাকছে না। একই অবস্থা চলছে শিল্প কল-কারখানাতেও। বৈশ্বিক বাজারে জ্বালানির মূল্য অস্থিরতা এবং এলএনজি আমদানির কারণে বাংলাদেশে এর প্রভাবের কথা বলে জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিভাগ গত ১৮ জানুয়ারি শিল্পখাতে গ্যাসের দাম ১৭৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ায়। চলতি বছরের শুরু থেকে খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দামও তিন দফায় ১৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু তারপরও গ্রাহক চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস-বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না। শিল্প-কারখানার মালিকরা বলেছেন, আগামী শীত মৌসুমকে টার্গেট করে প্রতিটি কারখানায় এখন বিপুল পরিমান অর্ডার আছে। দেশি বিদেশী এসব অর্ডার যথা সময়ে শেষ করতে হলে এখন দিনরাত ফ্যাক্টরী চালানোর কথা। কিন্তু দিনের বেলায় অনেক এলাকার কারখানার চাকা ঘুরছে না গ্যাস সংকটে।
তিতাস মেট্রো দক্ষিণের মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) প্রকৌশলী সামসুদ্দিন আল আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, ডিমান্ড-সাপ্লাইয়ের মধ্যে গ্যাপ (পার্থক্য) থাকার কারণে আগের থেকে সিস্টেমে একটু সমস্যা ছিলো। তবে আশার কথা হলো, সামনে গ্যাস আমদানি হবে এবং তখন গ্রাহকরা বেশি মাত্রায় গ্যাস পাবে।