২০২১ সালের আগস্টে দেশের রিজার্ভ রেকর্ড সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। এরপর করোনার বিধিনিষেধ শেষে আমদানি বাড়তে থাকায় এবং রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স কমতে থাকায় রিজার্ভও নামতে থাকে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়।
এদিকে চলতি সপ্তাহে প্রায় সোয়া বিলিয়ন ডলার আকু বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। যার ফলে ডলারের মজুত কমে যাচ্ছে। আকু বিল পরিশোধের পর রিজার্ভের পরিমাণ ২৯ বিলিয়নের ঘরে নেমে যাবে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত এপ্রিল মাসে রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৯৫ কোটি ৬০ লাখ ডলারের পণ্য। গত বছরের একই মাসে আয় হয়েছিল ৪৭৩ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। সেই হিসাবে আয় কমেছে ১৬ দশমিক ৫২ শতাংশ। আবার চলতি বছরের মার্চে রপ্তানি থেকে আয় হয় ৪৬৪ কোটি ডলার। সে হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে আয় কমেছে ৬৯ কোটি ডলার। এ ছাড়া গত এপ্রিলে ৫০৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্য ধরা হয়। সে হিসাবে আয় হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২১ দশমিক ৬৭ শতাংশ কম।
ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে পাওয়া গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারিতে আমদানি ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ৮৮০ কোটি ডলার। এর সঙ্গে মার্চ ও এপ্রিলের আমদানি ব্যয় বাবদ যোগ হবে প্রায় ১ হাজার কোটি ডলারের বেশি। সব মিলে এপ্রিল পর্যন্ত আমদানি ব্যয় দাঁড়াবে প্রায় ৬ হাজার কোটি ডলার। আয় হয়েছে ৬ হাজার ৩৩৯ কোটি ডলার। উদ্বৃত্ত থাকবে ৩৩৯ কোটি ডলার। এর মধ্য থেকে বৈদেশিক ঋণ, হজের খরচ ও অন্যান্য সেবার অর্থ পরিশোধের পর বৈদেশিক মুদ্রার হিসাব ঘাটতিতে চলে যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত এপ্রিলে রেমিট্যান্স এসেছে ১৬৮ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। গত বছরের এপ্রিলে রেমিট্যান্স এসেছিল ২০১ কোটি ডলার। এ তুলনায় রেমিট্যান্স কমেছে ১৬ দশমিক ২৬ শতাংশ।
বিদেশি মুদ্রা আয়ের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এপ্রিলে রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৯৬ কোটি ডলার এবং রেমিট্যান্স থেকে আয় হয়েছে ১৬৮ কোটি ডলার। দুই খাত মিলে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে ৫৬৪ কোটি ডলার। এর বিপরীতে আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৪৭৬ কোটি ডলার। এর সঙ্গে বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হচ্ছে প্রায় ৫০ কোটি ডলার। হজের কারণে চলতি মাসে আরও প্রায় ৫০ কোটি ডলার বাড়তি খরচ হবে। এসব মিলে মোট খরচ হবে ৫৭৪ কোটি ডলার। এ কারণে ১২ কোটি ডলারের ঘাটতি থাকবে।
বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আফজাল করিম বলেন, ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করা হচ্ছে। আগামী অর্থবছর থেকে একক রেট কার্যকর করার পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা আগাচ্ছি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, নিত্যপণ্যে আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করা হয়। এটা স্বাভাবিক ঘটনা। আবার আকু পেমেন্টও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি রুটিন কাজ। এটি নিয়ে হইচই করার কিছু নেই। কেননা, বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে পাঁচ মাসের বেশি আমদানি বিল পরিশোধ সম্ভব। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে তিন মাসের আমদানি ব্যয় পরিশোধের ডলার থাকলে অর্থনীতি ঝুঁকিমুক্ত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি সপ্তাহের শেষে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) সদস্য ভুক্তদেশ হিসেবে ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল ও পাকিস্তানের আমদানি বিল পরিশোধ করতে হবে ১ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার। আকু বিল পরিশোধের পরে রিজার্ভ নামবে ২৯ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার। এটি সাত বছর পর সর্বনিম্ন রিজার্ভের রেকর্ড। আর আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী আন্তর্জাতিক গণনা পদ্ধতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের আরও ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার বাদ দিতে হবে। তাহলে ব্যয়যোগ্য রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়াবে ২৪ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার।