মো. সাজেদুল হক সাজু, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: বুধবার, ৩ মে, ২০২৩, ৯:৪৭ পিএম আপডেট: ০৩.০৫.২০২৩ ৯:৪৯ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও শিবগঞ্জে কয়েকটি খুনের ঘটনায় পুলিশ কঠোর অবস্থানে যাওয়ায় অপরাধীরা কোনটাসা হয়ে পড়েছে। জেলা জুড়ে চলছে পুলিশের বিশেষ অভিযান এবং জোরদার করা হয়েছে পুলিশি টহল। এতে অপরাধীরা গা ঢাকা দিয়েছে এবং রয়েছে আতংকে। এছাড়া উঠতি কিশোরগাংয়ের তৎপরতা রুখতে ডাটাবেজ তৈরি করছে পুলিশ।
জানাগেছে, সন্ত্রাসের জনপদ শিবগঞ্জ উপজেলার ১৩ এপ্রিল দুপুরে নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়নে ৯ং ওয়ার্ড সদস্য ও বিএনপি নেতা আলম হোসেন ওরফে (আলম ঝাপড়া) কে বাড়ী ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা ককটেল ফাটিয়ে তাঁর গতিরোধ করে। পরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করে। স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও শিবগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) সুকোমল চন্দ্রদেব নাথ জানান, ইতি মধ্যে এজাহার ভুক্ত ৬ আসামী গ্রেফতার, বাকি আসামীদের গ্রেফতার করতে চলছে পুলিশের সাঁড়াষি অভিযান এবং ১৭জন আসামী জামিনে মুক্ত রয়েছেন।
নয়ালাভাঙা এলাকার বাসিন্দা ও রানিহাটি বাজারের এক দোকান ব্যবসায়ী ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, সামান্য ঘটনাতেই ককটেল বিস্ফোরন, আতঙ্কে থাকতে হয় সাধারন মানুষকে। তবে পুলিশি অভিযান অব্যহত থাকায় অপরাধীরা গা ঢাকা দিয়েছে, পাশাপাশি অপরাধীরা হাট-বাজারে আসা ছেড়ে দেওয়ায় সাধারন মানুষের মনে স্বশিÍ ফিরেছে। এছাড়া শিবগঞ্জ উপজেলা জুড়ে কিশোরগাংএর সদস্যদের ধরতে বিশেষ অভিযান অব্যহত রয়েছে। তবে অভিভাবকরা মোবাইল ফোন ব্যবহার বন্ধ, চুল সঠিক ভাবে কাটা ও রাত্রে না ঘুরার প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় স্কুল ও কলেজ ছাত্রদের মুছলেকায় ১ম বারের মত ছাড় দি”েছ পুলিশ। এব্যপারে শিবগঞ্জ থানার অফিসার ইন চার্জ চৌধুরী জোবায়ের আহমদ বলেন, মাননীয় পুলিশ সুপার এ এইচ এম আব্দুর রাকিব এর নির্দেশনায় এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে পুলিশের বিশেষ অভিযান চলছে। অপরাধীদের কোন ছাড় দেওয়া হবে না। গত ১৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় ইফতারি নিয়ে বাসায় ফেরার সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার উদয়ন মোড়ে সন্ধায় প্রকাশ্যে হত্যা করা হয় শিবগঞ্জ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও জেলা স্বে”ছাসেবক লীগ নেতা খাইরুল আলম জেমকে (৫০)। এ সময় তাঁকে রড দিয়ে পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাতে জখম করে হত্যা করা হয়। এঘটনায় পুলিশ ১৪ জনকে গ্রেফতার ও বাকি আসামীদের ধরতে অভিযান অব্যহত রেখেছে।
এদিকে ২৩শে এপ্রিল রোববার রাতে সদর উপজেলার বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতুর রেহাইচর এলাকায় ছুরিকাঘাতে ফাহাদ আলী (১৮) নামে এক কিশোর নিহত হয়। কিশোরগ্যাংয়ের আধিপত্যবিস্তার নিয়ে হত্যাকান্ডের শিকার হন কিশোর ফাহাদ আলী। এ ঘটনায় এজাহার নামীয় ২ আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাকুও জব্দ করা হয়েছে। অন্যদিকে একই দিনে সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নের সাঁওতাল পাড়া এলাকার ধানক্ষেত থেকে মিঠন (২৯) নামে এক যুবকের মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। তাঁর শরীররে বিভিন্ন অংশ কাটা দাগ ছিল। পুলিশের ধারনা তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। মিঠন সদর উপজেলার বারোঘোরিয়া এলাকার নরেন্দ্রনাথের ছেলে। এদিন বিকেলে নদীর মাটি কাটাকে কেন্দ্র করে দু'পক্ষের সংঘর্ষে ককটেল হামলায় নিহত হন সদর উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মোঃ জিয়ারুল ইসলাম (৪০) । তবে নিহতের স্বজনরা দাবি করেন প্রতিপক্ষের ককটেল হামলায় তিনি নিহত হন। এঘটনায় ১১ জন আসামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এব্যপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইন চার্জ মোঃ সাজ্জাদ হোসেন জানান, কিশোর অপরাধী ও বখাটাদের রুখতে বিশেষ অভিযান অব্যহত রয়েছে এবং ডাটাবেজ তৈরি করছে পুলিশ। অপরাধীদের কোন ছাড় দেওয়া হবে না। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্লাব সুপার মার্কেটের একজন ব্যাবসায়ী জানান বর্তমানে শহরে কোন বিভিন্ন পর্যায়ের দাগি অপরাধীদের আনাগোনা নাই, মোটর সাইকেলে ৩ জন বসা কিশোরদের আর চোখে পড়ে না, কিশোর অপরাধীরা না থাকাই শহরে শান্তি বিরাজ করছে। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর কে এভাবেই দেখতে চান।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পুলিশ সুপার (এসপি) এ এইচ এম আব্দুর রকিব বলেন, জেলায় যে সব হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে আলোচিত সাবেক কাউন্সিলর ও জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা খাইরুল আলম জেম হত্যাকান্ড। পুলিশ এ হত্যাকান্ডের ক্লু উদ্ধার করেছে এবং এ ঘটনায় জড়িতদের ধরতে সাঁড়াষি অভিযান অব্যহত রেখেছে। ইতি মধ্যে ১৪জন আসামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি সকল হত্যাকান্ডের ঘটনায় আসামীদের গ্রেফতার করতে পুলিশের অভিযান চলছে। হত্যাকান্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট নয় এমন কাউকে হয়রানি করা হবে না।