আমের রাজধানীখ্যাত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে গত দুই বছরের ন্যায় এবারও থাকছে না আম পাড়ার ক্যালেন্ডার বা সময়সূচি। আমচাষী, কৃষক, উদ্যোক্তা ও আম রফতানিকারকদের দাবির প্রেক্ষিতে এই সীধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন। এতে বিভিন্ন জাতের আম পাঁকলেই গাছ থেকে পেড়ে বাজারজাত করতে পারবে আমচাষীরা। বুধবার (০৩ মে) সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এই সীধান্তের কথা জানান, জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন।
ম্যাংগো ক্যালেন্ডার প্রণয়ন, নিরাপদ ও বিষমুক্ত আম উৎপাদন বিপনন ও বাজারজাতকরণের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় এই সীধান্ত নেয়া হয়। সভায় জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন বলেন, আমচাষী, উদ্যোক্তা ও কৃষকদের দাবির প্রেক্ষিতে এবার আম ক্যালেন্ডার করা হচ্ছে না। তবে সবগুলো উপজেলায় আম বাজারজাতকরণ ও পরিবহনে যেকোন ধরনের অনিয়ম রোধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। আম পরিবহনের সুবিধায় অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে সড়ক ফাঁকা রাখা হবে। আম পরিবহনের সময় ট্রাক ভাড়া বেশি নিলে ও অতি মাত্রায় রাসায়নিক ব্যবহার করলে কঠোরভাবে দমন করা হবে।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, চলতি বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমের জন্য একটি কন্ট্রোল সেল করা হবে। এতে আমচাষী, কৃষক ও উদ্যোক্তারা তাদের বিভিন্ন সমস্যা, অভিযোগ ও সম্ভাবনার কথা জানাতে পারবেন। আমচাষীদের ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। ব্যাংকগুলোকেও আমচাষীদেরকে ঋণ প্রদানের জন্য আহ্বান করা হবে। যারা অনলাইনে আমের ব্যবসা করেন, তারা কোন সমস্যায় পড়লে আমরা সহযোগিতা করব। জেলার কুরিয়ার সার্ভিসগুলোকেও কঠোরভাবে মনিটরিং করা হবে। তাদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। কৃষক ও আমচাষীদের স্বার্থে সুশাসন নিশ্চিত করতে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
একেএম গালিভ খাঁন বলেন, আমচাষীদের স্বার্থে কাজ করছে সরকার। তবে সকলকে নিরাপদ আম বাজারজাতকরনে সহযোগীতা করতে হবে। ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন বেশিদিন ধরে চালানো ও বগি বাড়ানোর আবেদন করা হবে। আমের বাজারজাতকরনে কোন রাস্তাঘাট ও বাজারে কোন ধরনের চাঁদাবাজি চলবে না। খাজনার পরিমান কম রাখা হবে।
সভায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক বলেন, জেলার আম দেশের অন্যান্য জেলা ও দেশের বাইরে বাজারজাতকরনে আমে জিআই ট্যাগ ব্যবহার, জেলায় প্যাকেজিং হাউস তৈরি করতে হবে। আমচাষীদেরকে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করতে হবে। আমরা জানি, নেদারল্যান্ডে কোন আম উৎপাদন হয়না, কিন্তু তারাই বিশ্বের দ্বিতীয় আম রফতানিকারক দেশ। অথচ আমাদের সকল উপাদান ও প্রচুর সম্ভাবনা থাকলেও তা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। এছাড়াও ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন দীর্ঘ সময়ের জন্য চালু রাখার দাবি জানান তিনি।
মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আহমেদ মাহবুব-উল-ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) পাপিয়া সুলতানা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রওশন আলী, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্যান) মাসুদ আহমেদসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার আমচাষী, কৃষক, উদ্যোক্তা ও রফতানিকারকরা।