জেলের কাছে সাগর ইজারা, নাম মাত্র প্রকল্পের নামে বিষেশ বরাদ্দের টাকা লুটপাট, মনোনয়ন বানিজ্য, দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের কোনঠাসা রেখেছেন পটুয়াখালী-৪ ( কলাপাড়া- রাঙ্গাবালী) সংসদীয় আসনের ক্ষমতাশীন দলের এমপি মহিব্বুর রহমান মুহিব। এদিকে অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন এই এমপি অপরদিকে দলের মধ্যে ব্যাপক কোন্দ্রলের সৃষ্টিও করেছেন তিনি। এনিয়ে কলাপড়া ও রাঙ্গাবালী আসনে সমালোচিত হয়ে পড়েছেন। এতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুহিবর বিকল্প খুঁজছেন স্থানীয় আওয়ামীলীগ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এমপি মহিব ও তার বাহিনী বেছে বেছে আওয়ামী লীগ নেতাদের জমি, বাড়ি, ঘের, দোকানপাট দখল করে নিয়েছেন। পাউবোর জমি থেকে শুরু করে ভূমিহীনদের জমি কোনোটাই বাদ পড়েনি নির্বিচার এ দখলদারিত্ব থেকে। শুধু দখল নয় মুহিব বাহিনীর বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ সেখানকার জেলেরা। আওয়ামী লীগ অফিস ও ক্লাব নির্মাণের নামে জেলেদের কাছ থেকে তোলা হচ্ছে কোটি টাকার চাঁদা। কলাপাড়া উপজেলার কালভার্ট ও স্লুইসগেট অবৈধভাবে লিজ দিয়ে তুলছেন লাখ লাখ টাকা চাঁদা। দখল আর চাঁদাবাজি নয়, সন্ত্রাসের ক্ষেত্রেও পিছিয়ে নেই মহিব বাহিনী। তাদের দখল ও অত্যাচারে উচ্ছেদ হয়েছেন অনেকে, আওয়ামী লীগের আমলেই এলাকাছাড়া হতে হয়েছে দলটির নেতাকর্মীদের। গত কয়েক বছর ধরে পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালীর চর হেয়ারসহ বঙ্গোপসাগরের অংশ বিশেষ বিক্রি করে আসছে এমপি মুহিব। উপকূলীয় ওই অঞ্চলগুলোতে মাছ ধরতে জেলের মোটা অংকের টাকা দিতে ওই এমপি মুহিবকে। এমপির কয়েকজন অনুসারী ওই টাকা উত্তোলন করে। যার বড় অংশ চলে যায় এমপির পকেটে। এনিয়ে গণমাধ্যমে ব্যাপক সংবাদ প্রচার হলেও বহাল তবিয়াতে এমপি মুহিব।
জানা গেছে, এমপি মহিবের দখলের গ্রাস থেকে রক্ষা পায়নি মৃত আওয়ামী লীগ নেতার প্রতিবন্ধী ছেলের দোকানও। জানা গেছে, নির্বাচনের কয়েকদিনের মধ্যেই বাবলাতলা বাজারে ধূলাসার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মৃত দেলোয়ার হোসেন বিশ্বাসের প্রতিবন্ধী ছেলের দোকানসহ অর্ধশতাধিক দোকান দখল করে নেয় তার বাহিনী। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এমপি মুহিব কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্দেশ অমান্য করে নৌকার প্রার্থীর বিপরীতে বিদ্রোহী প্রার্থী আক্তারুজ্জামান কোক্কাকে দাঁড় করান। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী রাকিবুল আহসানের বিরুদ্ধে কাজ করেন তিনি ও তার অনুগত লোকজন। তবে মহিবের বিদ্রোহী প্রার্থী পরাজিত হন রাকিবুলের কাছে।
সূত্র বলছে, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন এমপি মুহিবের বাবা মৌলভী জালাল উদ্দিন কলাপড়া ইউনিয়নের লতাচাপলি ইউনিয়নের পিস কমিটির ১নম্বর সদস্য ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে তার অবস্থান ছিল পাকিস্তানের পক্ষে। এলাকায় ‘রাজাকার জালাল’ হিসেবে পরিচিত রয়েছে এমপি মুহিবের বাবার। দেশ স্বাধীনের পর জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন মৌলভী জালাল। চিহিৃত ওই রাজাকারের বিরুদ্ধে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা প্রতিবাদও গড়ে তুলেছিল। গত সংসদ নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বেপরোয়া হয়ে উঠে রাজাকারপূত্র এমপি মুহিব। হাতে নিয়ে নেয় দলের একক আধিপত্য। নিবেদিত ও ত্যাগী নেতাদের কোনঠাসা করে গতে তুলেন নিজস্ব বলয়। বিএনপি জামাতের লোকজনকে দেওয়া হয় পদ-পদবী। এছাড়াও এমপি মুহিব কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালীতে গড়ে তুলেছেন নিজস্ব দাঙ্গা বাহিনী। তার অপকর্ম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললেই ওই বাহিনীর সদস্যদের হামলার শিকার হতে হয়। এ কারনে কেউ মুখ খুলছেন না তার বিরুদ্ধে।
সাবেক কমান্ডার ও মুক্তিযোদ্ধা মো. বদিউর রহমান (বন্টিন) বলেন, এমপি মুহিবের বাবা মৌলভী জালাল উদ্দিন মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পিস কমিটির সদস্য ছিলেন এবং পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করেছেন তিনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামেও ব্যাঙ্গ করতেন চিন্নহত রাজাকার মৌলভী জালাল। জাতির পিতাকে বলতেন "শেউখ্যা"।
সাবেক ডেপুটি কমান্ডার ও মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুল্লাহ রানা বলেন , মৌলভী জালাল উদ্দিন মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পিস কমিটির সদস্য ছিলেন এবং তার তিন ছেলে মো. মোস্তাফিজুর রহমান, মো. তহিদুর রহমান ও মো. মহিব্বুর রহমান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সমায়ে প্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন এবং বাবার সাথে পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করেছেন।
২০২২-২৩ সালে এমপির বিশেষ বরাদ্দের কাজে ৪টি প্রকল্প দেখিয়ে কোটি টাকা লুটপাট করে এমপি মুহিব। কাগজে কলমে প্রকল্প দেখিয়ে এসব বরাদ্দের টাকা আত্মসাত করে এমপি। সরেজমিনে যার কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তথ্য বলছে, কলাপাড়া উপজেলার ধুলাসার ইউনিয়নে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, ইদ গাঁ, কবরস্থান ও মহিলা মসজিদ নির্মাণের নামে কোটি কোটি টাকা উত্তোলন করেন এমপি মুহিব। বিশেষ বরাদ্দের ওই টাকার পুরোটা লুটপাট করেন এমপি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে পিআইও হুমায়ুন কবির বলেন, আমি বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। যে নির্দেশনা আসবে আমি সেভাবেই ব্যবস্থা নিব।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামীলীগের একাধিক নেতা বলেন, এমপি মুহিবের অত্যাচার, নির্যাতন ও অনিয়ম দুর্নীতিতে জনগণ অতিষ্ট। এলাকায় কোনো উন্নয়নের ছোয়া লাগাতে পারেনি এমপি। আগামী নির্বাচনে তার বিকল্প ভাবছে তৃণমূল আওয়ামীলীগ।
দলীয় অপর একটি সূত্র বলছে, এমপি মুহিব রেডি সিগন্যাল পেয়ে গেছেন আগামীতে তিনি মনোনয়ন পাচ্ছেন না। যার কারনেই বিরোধী মত প্রকাশের বাঁধা সৃষ্টি করছেন তিনি।
এদিকে, বর্তমান এমপি মুহিবের অপকর্মে সহযোগী উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমপি'র নির্দেশে বর্তমান বিএনপি নেতা শাহ আলম বিভিন্ন লোক বাদী বানিয়ে একের পর এক যড়যন্ত্রমূলক বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে যাচ্ছে ( স্পেশাল জজ আদালত পিটিশন নং-০২ সহ আরও দুটি) সাবেক এমপিসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। বর্তমান বিএনপি নেতা এই শাহ আলম বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন আওয়ামী লীগের অফিস ভাংচুরসহ নেতাকর্মীদের মারধর করে জখম করেছে যা কলাপাড়াবাসী অবগত রয়েছে। বর্তমান এমপি মুহিবের রাজনৈতিক প্রধান উপদেষ্টা এই শাহ আলম, যার নির্যাতনে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীসহ এলাকার সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ। সাবেক ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক এমপি অপকর্মে সহযোগী শাহ আলমের মাধ্যমে ভুমি দখল, চাঁদাবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য, সরকারি বিভিন্ন দপ্তর থেকে ঘুষ ও উন্নয়নমূলক কাজের অর্থ ভাগাভাগি বা পার্সেন্টেজ নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন এমপি মুহিব ও শাহ আলম। এমপির স্পেশাল বরাদ্দের টাকা দিয়ে চার বছরে কোন কাজ না করে শুধু এমপি'র নিজের উন্নয়ন করেছেন কোথাও কোন উন্নয়নমূলক বা সেবামূলক কাজ চোখে পড়ে না, যা কলাপাড়ার মানুষ সবাই অবগত আছেন এই চার বছরে কোন উন্নয়ন হয়েনি এলাকার রাস্তা ঘাট খুবই বেহাল অবস্থা।
এসব অভিযোগের বিষয়ে সংসদ সদস্য মুহিব্বুর রহমান মুহিবকে কয়েকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি।