চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মোসা. শাহনাজ খাতুন। উৎকোচ ছাড়া প্রকল্পের ফাইলে সাক্ষর না করা করা, বিভিন্ন অযুহাতে টিআর কাবিটা কাবিখা প্রকল্প থেকে অর্থ আত্মসাৎ, বিভিন্ন জাতীয় দিবসের নামে অর্থ আদায়, এডিপির অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ করেন, শাহনাজ খাতুন।
রবিবার (৩০ এপ্রিল) বেলা ১১টায় জেলা শহরের একটি হোটেলে তিনি এই সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহনাজ খাতুন বলেন, গত ০২ মার্চ ভোলাহাটে যোগদানের পর থেকে তার সেচ্ছাচারিতায় উপজেলার পরিষদের সকল প্রকল্প গ্রহণ করছেন। তিনি প্রতিমাসে উপজেলা পরিষদ সমন্বয় সভায় অনুমোদন না করে সভার রেজুলেশনে উঠিয়ে উপজেলা পরিষদের রাজস্ব তহবিলের অর্থ অনিয়ম করে ব্যয় করছেন। তার এমন কর্মকান্ডের বিরোধিতা করেও কোন ফল পাওয়া যায়নি। তিনি কখনও সিসি ক্যামেরা মেরামত, কখনও বাসাবাড়ি মেরামত আবার কখনো জাতীয় দিবসসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের নাম ব্যবহার করে প্রকল্পের মাধ্যমে রাজস্ব তহবিলের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আরও বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগ হতে ভোলাহাট উপজেলা পরিষদের জন্য বরাদ্ধকৃত ২০২২-২৩ অর্থ বছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি এডিপি'র অর্থ নিয়মানুযায়ী প্রকল্প গ্রহন না করে অফিস কক্ষে গোপন সভার মাধ্যমে আমাকে নোটিশ না দিয়ে তার ইচ্ছামতো প্রকল্প দাখিল ও গ্রহন করেন। এডিপির অর্থ বিভাজনের সুযোগ না থাকলেও তিনি হরিলুটের মত করে এডিপির অর্থ বিভাজন করেন এবং সিংহভাগ অর্থের প্রকল্প তিনি দাখিল করেন। এছাড়া তিনি ১% ও ২% খাতে অর্থ ইউপি চেয়ারম্যানগণকে ব্যবহার করে কোটেশনের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। তিনি উপজেলা পরিষদ মেরামত, নির্বাহী অফিসারের বাসা মেরামতসহ কোটেশনে ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে কাজ না করে বিল উত্তোলন করে নিচ্ছেন। একই ঠিকাদারকে বারবার কোটেশনের কাজ দিয়ে দুর্নীতি করছেন।
শাহনাজ খাতুন বলেন, তিনি নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেন না। একই ভাবে টিআর, কাবিটা ও কাবিখা প্রকল্পের কোন সভা না করেই গোপন মিটিংয়ের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। সেখানেও আমাকে কোন নোটিশ প্রদান করেন নি। এবং প্রকল্পের তালিকা পরিষদ সভায় অনুমোদন করেননি। এসব কাজে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে তাবাসসুমকে সহযোগিতা করেন, স্থানীয় সরকার উপজেলা প্রকৌশলী মো. আছহাবুর রহমান ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. কাউসার আলম সরকার।
সংবাদ সম্মেলনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আরও বলেন, উপজেলা পরিষদের নামেই শুধু টিআর, কাবিটা ও কাবিখা প্রকল্প থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন উপজেলা প্রশাসন ও নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে তাবাসসুম। এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর বিভিন্ন প্রকল্পের দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ করে অভিযোগকারীরা। অভিযোগকারীরা সুষ্ট বিচার তো পাইনি, পক্ষান্তরে প্রসাশনের মামলার হুমকি-ধামকির ভয়ে সাধারণ মানুষ প্রসাশনের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন
প্রসাশনের অনিয়ম- দুর্নীতির প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না। গত চার বছরে উপজেলা প্রশাসনের সমস্ত উন্নয়ন প্রকল্প থেকে আমাকে বঞ্চিত করে রেখেছেন।
তিনি বলেন, আমাকে বঞ্চিত করার জন্য উপজেলা প্রশাসন গোপনে বিভিন্ন প্রকল্পের মিটিং বাস্তবায়ন করেন। যা উপজেলা পরিষদ সভায় প্রকল্পের নামের তালিকা রেজুলেশনে অনুমোদন পর্যন্ত করেন না। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে আমাকে প্রকল্পের তালিকাও দেখতে দেন না। তারা বলেন, আমার নাকি জানার অধিকার নাই। আমি তথ্য অধিকার ফরমে আবেদন করেও উপজেলা প্রশাসন আমাকে তথ্য প্রদান করেন না। প্রশাসনের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের জন্য জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিতভাবে অভিযোগ করেও আমি এর কোন প্রতিকার পাইনি।
এবিষয়ে ভোলাহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এমনকি মুঠোফোনে ম্যাসেজ দিলেও তিনি উত্তর দেননি।
এ ব্যাপারে ভোলাহাট উপজেলা চেয়ারম্যান রাব্বুল হোসেন জানান উপজেলার বিভিন্ন কাজে তিনি জনপ্রতিনিধি কে বাদ দিয়ে উপজেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দিয়ে কাজ করান। এ জন্য মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এর সাথে ভুলবোঝাবুঝি। দুর্নীতির বিষয়ে তিনি বলেন তদন্ত না হলে বিষয়টি বোজা যাবেনা।
জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন মুঠোফোন বলেন, এনিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তদন্ত ও প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
উল্লেখ্য, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহনাজ খাতুন এসব নিয়ে মন্ত্রীপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর গত ১২ এপ্রিল লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এছাড়াও রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসককে অনুলিপি দেয়া হয়েছে।