মাগুরা-২ আসনে আ. লীগের প্রার্থী হতে চান কর্নেল (অব.) কাজী শরীফ উদ্দিন
আগামী জাতীয় নির্বাচনে মাগুরা-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চেয়েছেন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল কাজী শরীফ উদ্দিন (৫৩)। শুক্রবার রাতে মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা সদরে একটি রেস্তোরাঁয় স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি মনোনয়ন পাওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন। কাজী শরীফ উদ্দিন সদ্য ঘোষিত মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন।
মাগুরা সদর উপজেলার চারটি ইউনিয়ন, মহম্মদপুর উপজেলার আটটি ইউনিয়ন ও শালিখা উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মাগুরা-২ আসন। বর্তমানে এ আসনে সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের বীরেন শিকদার। ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুক্রবার বিকেলে বালিদিয়া, নহাটা ও পলাশবাড়িয়া ইউনিয়নে বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন কাজী শরীফ উদ্দিন। এ সময় তাঁর সঙ্গে বালিদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান, নহাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তৈয়েবুর রহমান তুরাপ ও পলাশবাড়িয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সৈয়দ সিকান্দার আলী উপস্থিত ছিলেন। পরে পলাশবাড়িয়া থেকে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করে মহম্মদপুর উপজেলা সদরে আসেন তিনি। সেখানে একটি রেস্তোরাঁয় (বর্তমানে বন্ধ) স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন কাজী শরীফ উদ্দিন। সেখানে মাগুরা-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে ঘোষণা করেন।
সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘উন্নয়ন হচ্ছে একটি চলমান প্রক্রিয়া। আর পরিবর্তন হচ্ছে উন্নয়নের অলংকার। পরিবর্তনের মাধ্যমেই উন্নয়ন গতিশীল হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি যোগ্য মনে করে আমাকে মনোনয়ন দেন, তবে আমি এই আসনটি তাঁকে উপহার দিতে চাই। পাশাপাশি আমার পেশাগত জীবনে অর্জিত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এই এলাকায় শিক্ষাসহ অন্য সেবা খাতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে চাই। এলাকার মানুষের জীবনমান বদলে দিতে চাই।’ এক প্রশ্নের জবাবে কাজী শরীফ উদ্দিন বলেন, আসনটিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী অন্য কাউকে মনোনয়ন দিলেও তাঁর পক্ষে কাজ করবেন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহম্মদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এস কে নুরুজ্জামান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল হাসান, প্রচার সম্পাদক শেখ মো. ঈদুল, দিঘা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর সাদিক, উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মামুনুর রশিদ প্রমুখ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শনিবার সকালে কামরুল হাসান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের একজন নেতা হিসেবে উনি যে এলাকার মানুষের সঙ্গে কাজ শুরু করেছেন, এটা আমরা ইতিবাচকভাবেই দেখছি। উনি আমাদের জানিয়েছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উনাকে এলাকায় কাজ করতে বলেছেন। আরও অনেকেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইছেন। এই প্রতিযোগিতার মাঝেই আওয়ামী লীগ একজন ভালো প্রার্থীকে বেছে নিতে পারবে। এলাকার মানুষ পরিবর্তন চায়।’
প্রসঙ্গত, কাজী শরীফ উদ্দিনের বাড়ি মহম্মদপুর উপজেলার বালিদিয়া ইউনিয়নের ওমেদপুর গ্রামে। তাঁর বাবা কাজী হাবিবুর রহমান যশোর ডিস্ট্রিক্ট জুরিবোর্ডের সাবেক সদস্য। তিনি বিনোদপুর বি কে মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাধ্যমিক ও ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৯৩ সালে সেনাবাহিনীর ২৮তম দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের অফিসার হিসেবে কমিশন লাভ করেন। সেনাবাহিনীতে থাকা অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর এসএসএফ ও ডিজিএফআইসহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি থেকে স্নাতক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন। তা ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি থেকে প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়ালেখা করেছেন। পরে আমেরিকার অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে কোয়ালিটি এডুকেশন, সুইজারল্যান্ডের ওপেন ইউনিভার্সিটি থেকে ডিপ্লোমা এবং মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর ইউনিভার্সিটি থেকে সিনিয়র স্টাফ কোর্স অন এডুকেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সম্পন্ন করেছেন।
তিনি ন্যাশনাল একাডেমি ফর এডুকেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের (নায়েম) একজন নিয়মিত প্রশিক্ষক। বিসিএস একাডেমি বিপিএটিসি সাভারের একজন অতিথি প্রশিক্ষক। কর্মজীবনে প্রায় ছয় বছর ঢাকার মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তখন জাতীয় পর্যায়ে দুবার এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দুবার শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ এবং প্রতিষ্ঠানপ্রধান হিসেবে পুরস্কৃত হন। ২০২০ সালে সেনাবাহিনীর একজন কর্নেল হিসেবে অবসরে যান তিনি। বর্তমানে জামালপুরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর পাশাপাশি নিরাপত্তা বিশ্লেষক, লেখক ও কলামিস্ট হিসেবেও তাঁর পরিচিতি রয়েছে। চলতি মাসে মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু পরিষদ মাগুরা জেলা শাখার সদস্যসচিব হিসেবেও দায়িত্বে আছেন।