ডা. আশরাফুজ্জামান
আমরা যতই উন্নতির শিখড়ে আরোহন করছি ততই যেন বিভিন্ন রোগ ব্যধি আমাদের আকড়ে ধরছে।যার মধ্যে ডায়াবেটিস অন্যতম।সারা বিশ্বেই এখন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার সমান তালে বেড়েই চলছে।যা থেকে পরিত্রান জরুরী।আর তাই আজকে আমরা ডায়াবেটিস নিয়ে আলোচনা করব।
সবার আগে আমাদের জানতে হবে ডায়াবেটিস কেন হয়?সাধারণত কোন খাবার গ্রহণ করার পর আমাদের শরীর সেই খাদ্যের শর্করাকে ভেঙে গ্লুকোজে রুপান্তরিত করে।অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন নামের যে হরমোন নিসৃত হয়,, সেটা আমাদের শরীরের কোষগুলোকে গ্লুকোজকে গ্রহণ করার জন্যে নির্দেশ দেয়।এই চিনি কাজ করে শরীরের জ্বালানী বা শক্তি হিসেবে।কিন্তু শরীরে যখন ইনসুলিন ঠিকমতো তৈরি হতে না পারে তখনই ডায়াবেটিস হয় এবং এর ফলে রক্তের মধ্যে চিনি জমা হতে শুরু করে।
কিভাবে বুঝবেন আপনি ডায়াবেটিস রোগের ঝকিতে আছেন?
১) চিকিৎসকদের মতে, শরীরে সুগারের মাত্রা বেড়ে গেলে তা কিডনিতে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে শরীর থেকে সুগার বের করে দেওয়ার জন্য।আর সে কারণেই ঘন ঘন প্রস্রাব পায়।যা ডায়াবেটিস রোগের অন্যতম একটি লক্ষণ।
২) খুব অল্পতেই হাঁপিয়ে ওঠা শরীরে সুগারের মাত্রা বৃদ্ধির লক্ষণ। সুগারের মাত্রা বেড়ে গেলে শরীরে জলের ঘাটতি হয়। আর ডিহাইড্রেশনের ফলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে।
৩) হাত ও পায়ের আঙুল বা পুরো হাত অবশ বোধ করা শরীরে সুগারের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম প্রধান লক্ষণ। পরিস্থিতি মারাত্মক পর্যায়ের চলে গেলে এই লক্ষণ প্রকাশ পায়।
৪) শরীরে সুগারের মাত্রা বেড়ে গেলে তার প্রভাব পড়ে দৃষ্টিশক্তির উপর। এর ফলে দৃষ্টিশক্তি ঘোলাটে হয়ে যাওয়ার সমস্যা তৈরি হয়।
৫) যখন শরীর থেকে সুগার বের করে দেয়ার জন্য কিডনিতে চাপ পড়ে তখন ঘন ঘন প্রস্রাব পায়। আর তখন কিডনি শরীরের কোষ থেকে ফ্লুইড নিতে থাকে। এতে শরীরে পানির ঘাটতি হতে থাকে, যার ফলে ঘন ঘন পানির তৃষ্ণা পায়।
৬) শরীরের কোনও অংশে কেটে বা ছড়ে গেলে তা না শুকানো এবং শুকাতে অনেক বেশি সময় লাগার বিষয়টিও শরীরে সুগারের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। এই সব লক্ষণ দেখা গেলে অবহেলা না করে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে রক্ত পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া উচিত।
৭) ডায়েট বা ব্যায়াম না করেই হুট করে অনেক বেশি ওজন কমতে থাকা শরীরে সুগারের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে২০১৬ সালে ডায়াবেটিসের কারণে প্রায় ১৬ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশন বলছে, প্রাপ্ত বয়স্ক যেসব মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের প্রায় ৭৯ শতাংশ মধ্য ও নিম্ন আয়ের দেশের, যেখানে খুব দ্রুত খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন ঘটছে।
ডায়াবেটিসের এতো ঝুঁকি থাকার পরেও যতো মানুষ এই রোগে আক্রান্ত তাদের অর্ধেকেরও বেশি এই রোগটি সম্পর্কে সচেতন নয়। তবে জীবন যাপনের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম নীতি মেনে চললে অনেক ক্ষেত্রে ডায়াবেটিসকে প্রতিরোধ করা সম্ভব।