বাংলাদেশসহ ১৫টি দেশ থেকে কর্মী নেওয়া স্থগিত করেছে মালয়েশিয়া। সম্প্রতি দেশটির পক্ষ থেকে এমন সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। তবে এরই মাঝে সুখবর হলো- বাংলাদেশ থেকে পুরুষ নিরাপত্তাকর্মী ও নারী গৃহকর্মী নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে দেশটি। এ নিয়ে কথা চলছে। দুই দেশের মধ্যে মিটিংও হয়েছে। শিগগিরই সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, তারা বাংলাদেশ থেকে সিকিউরিটি গার্ড ও গৃহকর্মী নেবে বলে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমরা প্রথমটার বিষয়ে খুব উৎসাহী। তবে গৃহকর্মীর বিষয়ে আমরা বলেছি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত জানাব।
এর আগে বিভিন্ন খাতে পুরুষ কর্মীরা কাজের জন্য মালয়েশিয়ায় গেছেন। তারা কৃষি থেকে শুরু করে কারখানাতে কাজ করছেন। এখনো কর্মী যাওয়া অব্যাহত আছে বলে জানা গেছে। তবে এই প্রথম নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে পুরুষ নেওয়ার আগ্রহ জানিয়েছে মালয়েশিয়া। তারা হবেন প্রশিক্ষিত। এজন্য বাংলাদেশ সেনাকল্যাণ সংস্থার সঙ্গে দেশটির প্রতিনিধিরা দেখাও করেছেন। তবে কতজন পুরুষ নিরাপত্তাকর্মী তারা নেবে এবং কি ধরনের বেতন ও সুবিধা দেওয়া হবে তা তারা জানাননি।
সূত্র জানায়, দেশটির প্রতিনিধিরা সংস্থাটির সংশ্লিষ্টদের সাথে বৈঠকে আগ্রহের কথা প্রকাশ করেছেন। তবে এখনো বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি। এই খাতে যারা যাবেন তারা ভালো বেতন পাবেন বলেও আশা করছে মন্ত্রণালয়।
অন্যদিকে বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব ও জর্ডানসহ আরও কয়েকটি দেশে বাংলাদেশ থেকে নারী গৃহকর্মী পাঠানো হচ্ছে। তবে প্রতি বছর নির্যাতিত হয়ে নারী গৃহকর্মী ফিরে আসার সংখ্যাও উদ্বেগজনক। সেই পরিপ্রেক্ষিতে মালয়েশিয়ায় নারী গৃহকর্মী গেলে গাইডলাইন কি হবে, তারা কিভাবে থাকবেন, বেতন কত পাবেন এবং কি প্রসেসে দেশটিতে যাবেন- তা নিয়ে ভাবছে বাংলাদেশ সরকার।
Specialমন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, দেশটিতে প্রাথমিকভাবে ১ হাজার নারী গৃহকর্মী পাঠানো হবে। এই নারীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, কাজের দক্ষতা ও ভাষা জ্ঞান কি হবে এবং তাদের যাওয়ার খরচ কারা বহন করবে ও তারা কি কি সুবিধা পাবেন তা নিয়ে একটি গাইডলাইন তৈরিতে শিগগির হাত দেবে মন্ত্রণালয়। এরপর সেই গাইডলাইন অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় নারী গৃহকর্মী পাঠানো হবে।
প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, মালয়েশিয়ায় এর আগে অন্য খাতগুলোতে কর্মী পাঠাতে গিয়ে সিন্ডিকেট হয়েছে। এজেন্সিগুলোর স্বেচ্ছাচারিতা এবং কর্মীদের কাছ থেকে খরচ বাবদ বেশি টাকা আদায়ের অভিযোগ ছিল। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে পুরুষ নিরাপত্তাকর্মী ও নারী গৃহকর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম ও অস্বচ্ছতা যেন না হয় তা ভাবছেন তারা। এজন্য একটু সময় নিয়ে সুন্দর একটি গাইডলাইন তৈরি করা হবে। এরপর দেশটিকে সিদ্ধান্ত জানাবে বাংলাদেশ সরকার। তবে কবে নাগাদ শুরু হবে তা এখনো কেউ স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা সৌদিসহ মধ্যপ্রাচ্যে নারী গৃহকর্মী প্রতি বছর পাঠাচ্ছি। কিন্তু সেই দেশগুলোতে আমাদের মা-বোনদের এখনো নিরাপদ করতে পারিনি। তাই মালয়েশিয়ায় নারীদের শক্ত গাইডলাইন তৈরি না করে পাঠালে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মতোই হবে। তখন সুফলের চেয়ে দুর্ভোগ বাড়বে আমাদের মা-বোনদের। আর যেন কোনো নারী বিদেশে কাজ করতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার না হন সেই দিকটি খেয়াল রেখেই গাইডলাইন তৈরি করা উচিত হবে।
এ ব্যাপারে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক শহীদুল আলম বলেন, মালয়েশিয়ায় আমাদের কর্মীরা যে সেক্টরে যাচ্ছিল তার বাইরে নতুন করে নিরাপত্তাকর্মী ও গৃহকর্মী যাওয়া শুরু করবে। এ বাজারটা যদি আমরা পেয়ে যাই তবে মধ্যপ্রাচ্যের চেয়ে বেশি কর্মী যাবে মালয়েশিয়ায়। তবে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আগে থেকেই টাকা বা পাসপোর্ট জমা না দিয়ে বিষয়টাতে কনফার্ম হতে হবে। আমাদের দেশে প্রচুর মানুষ ভুল বুঝে বিপথগামী হয়। সবার আগে দরকার দক্ষ হওয়া, সে দক্ষতার সার্টিফিকেট নেওয়া এবং জেনে-বুঝে যাওয়া।