রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সবজি ক্ষেতে পাখির উপদ্রব ঠেকাতে কৃষকের পেতে রাখা কারেন্ট জালে আটকা পড়ে নির্বিচারে মারা পড়ছে বিভিন্ন ধরনের পাখি।
কৃষকদের মধ্যেও পরিবেশ বান্ধব এসব পাখি হত্যার বিষয় নিয়ে তেমন মাথা ব্যাথা নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় বিপুল পরিমান জমিতে নানান ধরনের সবজির আবাদ হয়ে থাকে। এরমধ্যে বেগুন, টমেটো সিম ক্ষেতে বিভিন্ন ধরনের পাখির উপদ্রব থাকায় কৃষকরা ফসলকে রক্ষা করতে নানা ধরনের পদ্ধতি গ্রহন করেছেন। ক্ষেতের মধ্যে খুঁটি পুতে তাতে বিভিন্ন রংয়ের ফিতা টানানো, টিনের ঢনঢনি বাজানো, কাকতারুয়া স্থাপনের মত পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতি অনেকেই
ব্যবহার করছেন। তবে বেশীর ভাগ এলাকায় কারেন্ট জাল দিয়ে ফসলের ক্ষেতকে পুরোপুরি ঢেকে দিতেও দেখা গেছে। এতেকরে ওই ক্ষেতে পোকা কিংবা সবজি খেতে আসা বক, শালিক, ঘুঘু, বাঁদুর, চড়–ইসহ বিভিন্ন দেশীয় পাখি জালে আটকে মারা পড়ছে।
মহিদাপুর চর এলাকার কৃষক মো কুদ্দুস আলম জানান,তিনি প্রায় চার বিঘা জমিতে বেগুনের আবাদ করেছেন। এতে অনেক ধার-দেনা হয়েছেন। ফলনও ভালো হয়েছে। প্রতিটি বেগুন ২শ গ্রাম থেকে ৬শ গ্রাম পর্যন্ত ওজন হয়েছে। কিন্তু ক্ষেতে পাখি বসে বেগুনে ঠোকা দিয়ে অনেক বেগুন নষ্ট করে ফেলছে।
এতেকরে ঠোকানো বেগুন আর বিক্রি করা যাচ্ছে না। বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করেও পাখি ঠেকানো যায়নি। তাই বাধ্য হয়ে কারেন্ট জাল দিয়েছি। জালে পাখি আটকা পড়লেও তিনি ছেড়ে দেন বলে দাবি করেন।
দেবগ্রাম ইউনিয়নের মুন্সি বাজার গ্রামের কৃষক টোকন শেখ বলেন, কিছু সবজি ক্ষেতে পাখি ক্ষতি করলেও অনেক ফসলের জমিতে ক্ষতিকর পোকা খেয়ে ফসলের উপকার করে। তাই পাখি মারা পড়ার মত কারেন্ট জাল পদ্ধতি ব্যবহার করা ঠিক না। বিকল্প হিসেবে তিনি ক্ষেতের চারদিক ও মাঝ খান দিয়ে ঘন ঘন খুঁটি পুঁতে নানা রংয়ের পাতলা ফিতা টাঙ্গিয়ে দিয়ে পাখির উপদ্রব থেকে সবজি রক্ষা করা য়ায়। বাতাসে এ সকল ফিতায় সৃষ্ট ভঁন ভঁন শব্দে পাখি ভয় পেয়ে ক্ষেতে তেমন একটা বসে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গোয়ালন্দ নদী এলাকা হওয়ায় কৃষকরা জেলেদের কাছ থেকে সহজেই কম দামে পুরনো কারেন্ট জাল সংগ্রহ করতে পারে। এতে কৃষকরা এই পদ্ধতিতে সবজি রক্ষায় আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খোকনুজ্জামান জানান, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পাখির গুরুত্ব অনেক বেশি। তারা যতটুকুনা ফসলের ক্ষতি করে ক্ষতিকারক পোকা খেয়ে তার চেয়ে অনেক বেশি উপকার করে থাকে। তাই পাখি তাড়াতে কারেন্ট জালের মত মৃত্যু ফাঁদ পাতা উচিৎ না। তবে বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করে ব্যর্থ হয়ে উপজেলার অনেক কৃষকই কারেন্ট জাল ব্যবহার করে থাকেন। এটা না করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ ও সচেতন করতে কৃষি বিভাগ অব্যহত ভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।