দেশে ভারতীয় ছবি আমদানিতে সম্মত হয়েছে সম্মিলিত চলচ্চিত্র পরিষদ। তবে এক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি শর্ত জুড়ে দিয়েছে তারা।
রবিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের কাছে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন তারা।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, আপনারা সবাই একমত হয়ে নির্দিষ্ট কিছু শর্তে ভারতীয় হিন্দি ছবি আমদানির ব্যাপারে একমত হয়েছেন। অতীতে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে আমার কাছে দাবি করা হয়েছিল ভারতীয় হিন্দি ছবি আমদানির জন্য। আমি বারবার বলে এসেছি যে, সব সমিতি যদি একমত হয় (তাহলে বাস্তবায়ন সম্ভব), না হলে সেক্ষেত্রে আমরা কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবো না। কারণ অতীতে দেখা গেছে এ রকম উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, পরে শিল্পী সমিতি আপত্তি জানিয়েছিল। অনেক শিল্পীও আপত্তি জানিয়েছিল। সবাই একমত হলে পরে আমরা কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবো বলে বলেছিলাম। আপনারা একমত হয়েছেন, সবাই স্বাক্ষর করেছেন। একমত হওয়ার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।
তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে আমাদের দেশে সিনেমা ভালো হচ্ছে আগের তুলনায় এবং অনেক সিনেমা বক্স অফিস হিট করছে কিন্তু এখনো প্রতি সপ্তাহে ভালোভাবে চালানোর মতো সিনেমা সবসময় হচ্ছে না, এটি বাস্তবতা। আপনারা সুচিন্তিতভাবে একটি প্রস্তাব দিয়েছেন যে নির্দিষ্ট কিছু ভারতীয় হিন্দি ছবি যদি আমদানি হয় তাহলে অনেকে আবার হলমুখী হবে এবং বাংলা ছবিও বা আমাদের ছবিও দেখতে যাবে।
ড. হাছান আরও বলেন, আমরা আপনাদের প্রস্তাব অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরেও আনতে হবে। আমি ইতোমধ্যে বলেছি, আপনারা যে আসবেন আজ; সেটিও তাকে জানিয়েছিলাম। আমরা এখন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবো।
এটি বাস্তবায়ন করতে কতদিন লাগতে পারে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা তো ভালো খবর যে তারা একমত হয়ে এসেছে। সংগঠনের ভেতরেই একমত হওয়া কঠিন সেখানে ১৯টি সংগঠন একমত হওয়া চারটিখানি কথা নয়। আমরা দ্রুততার সাথে করার চেষ্টা করবো।
এদিকে লিখিত প্রস্তাবনায় বলা হয়, ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের বর্তমান আপদকালীন সময়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র দর্শকদের হলে ফিরিয়ে আনা ও চলচ্চিত্র নির্মাণ সংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিম্নলিখিত শর্তাবলী সাপেক্ষে বিদেশি (উপমহাদেশীয় ভাষার) চলচ্চিত্র আমদানি করা যেতে
এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে-
শুধুমাত্র বাংলাদেশের বৈধ চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিবেশকগণ বিদেশি (উপমহাদেশীয় ভাষার) চলচ্চিত্র আমদানি করার সুযোগ পাবেন।
বিদেশি (উপমহাদেশীয় ভাষার) চলচ্চিত্র পরীক্ষামূলকভাবে শুধুমাত্র ২ বছরের জন্য আমদানি করার সুযোগ থাকবে।
বিদেশি (উপমহাদেশীয় ভাষার) চলচ্চিত্র আমদানি করার জন্য সরকারি অনুমতি পাওয়ার পর উপরে উল্লেখিত চলচ্চিত্র আমদানিকৃত প্রথম বছর ১০টি ও পরবর্তী বছর ৮টি চলচ্চিত্র আমদানি করতে পারবে। এখানে উল্লেখ থাকে যে, সকল প্রেক্ষাগৃহ প্রতিবছর ৫২ সপ্তাহের মধ্যে ২০ সপ্তাহ আমদানিকৃত চলচ্চিত্র প্রদর্শন করতে পারবে।
আমদানিকৃত বিদেশি (উপমহাদেশীয় ভাষার) চলচ্চিত্র মুক্তিকালীন সময়ে অবশ্যই আমাদের বাংলাদেশ ফিল্ম সেন্সর বোর্ড এর ছাড়পত্র প্রদর্শন করতে হবে। পাশাপাশি আমদানিকৃত চলচ্চিত্রের সাথে বাজারে টিকে থাকার জন্য আমাদের দেশীয় চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ফিল্ম সেন্সরবোর্ডকে নমনীয় হতে হবে।
বাংলাদেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা ও দুর্গাপূজার সপ্তাহে বিদেশি (উপমহাদেশীয় ভাষার) কোনো চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা যাবে না।
আমদানিকৃত বিদেশি ছবি (উপমহাদেশীয় ভাষার) আমদানি করার পূর্বে অথবা অনুমতি পাওয়ার পর প্রতিটি চলচ্চিত্রের জন্য আমদানিকারক সংস্থা নির্দিষ্ট পরিমাণ অনুদান (আলোচনা ও শর্ত সাপেক্ষে) সম্মিলিত চলচ্চিত্র পরিষদের তহবিলে জমা দিতে হবে। উল্লেখিত অনুদান চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট স্ব-স্ব সংগঠনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও কল্যাণের ব্যয়ে ব্যবহৃত হবে। এখানে উল্লেখ থাকে যে, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রদান করা হবে।
শর্ত সাপেক্ষে বিদেশি (উপমহাদেশীয় ভাষার) চলচ্চিত্র আদমানির জন্য আবেদনকালীন আবেদনপত্রের সঙ্গে সম্মিলিত চলচ্চিত্র পরিষদের ছাড়পত্র সংযুক্ত থাকতে হবে।
বিদেশি চলচ্চিত্র (উপমহাদেশীয় ভাষার) আমদানি করার পাশাপাশি দেশীয় চলচ্চিত্র নির্মাণ সংখ্যা বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানকে আগ্রহী করার নিমিত্তে বাংলাদেশের বন্ধ হয়ে থাকা প্রেক্ষাগৃহকে আধুনিকায়ন করে চালু করা ও নতুন প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণের জন্য চলচ্চিত্র বান্ধব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন সেই তহবিল থেকে পর্যায়ক্রমে শুধু মাত্র ২০০ কোটি টাকা বিএফডিসির মাধ্যমে নির্মাণ ক্ষেত্রে বরাদ্দ করা যেতে পারে, তাতে করে প্রযোজক পরিবেশকরা নতুন উদ্যোমে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে পারে এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বিএফডিসিও বাণিজ্যিকভাবে আয় ক্ষমতা বাড়াতে পারে।
আমাদের দেশীয় চলচ্চিত্রের প্রতি চলচ্চিত্র দর্শকদের আরও আকৃষ্ট করার জন্য কাহিনি ও চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে এবং আমাদের প্রযোজকদের অর্থ বিনিয়োগ কমানোর লক্ষে বর্তমান ‘যৌথ প্রযোজনার নীতিমালা’ রোহিত করে আমাদের পূর্বেকার ‘যৌথ প্রযোজনার নীতিমালা’ পুরনরায় চালু করতে হবে।
আমরা মনে করি বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ১৯৮৬ সালের মতো ‘নতুন মুখের সন্ধানে’র মাতো একটি প্রকল্প চালু করে সারা বাংলাদেশ থেকে বাচাই করে শিল্পী সংগ্রহ করতে পারি। যার ফলে আমরা শিল্পী সংকট থেকেও মুক্তি পেতে পারি।