কক্সবাজার শহরের কলাতলীর " সী আলিফ" আবাসিক হোটেলের কক্ষ থেকে মা-মেয়ের খুনের ঘটনায়
কুখ্যাত খুনী স্বামী জেবিন দেবকে গ্রেফতার করেছে বাকলিয়া থানা পুলিশ।
শুক্রবার রাতে ওই নারীর স্বামীকে চট্টগ্রাম শহর থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রহিম। বর্তমানে মা-মেয়ের লাশ এখনো কক্সবাজার মর্গে এবং অপর দু"মেয়ে নিরাপদে পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। পরে ঘাতক জেবিন দেবকে কক্সবাজার জেলা পুলিশকে হস্তান্তর করার পর বিকেল ৫টার দিকে কক্সবাজার মডেল থানায় এক প্রেস ব্রিফিংয় করে জেলা পুুলিশ। এসময় জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এসসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, কক্সবাজারে ঘটনার পর অভিযুক্তকে ধরতে খবর পাঠায় কক্সবাজার থানার পুলিশ। শুক্রবার রাতে চট্টগ্রামের নতুন ব্রিজ এলাকা থেকে জেবিন দেবকে আটক করা হয়। তিনি চট্টগ্রামের বাঁশখালীর সাধনপুর ইউনিয়নের বাণীগ্রামের বৈলগাঁওয়ের দুলাল দেবের ছেলে।
আটক জেবিন দেবের বরাত দিয়ে ওসি রহিম বলেন, তিন মেয়ে ও স্ত্রীসহ কক্সবাজার বেড়াতে যান জেবিন দেব। স্ত্রী সুমা দেব অসুস্থবোধ করায় সকালে বড় ও মেজ মেয়েকে নিয়ে নাশতা করতে বের হন জেবিন। হোটেল কক্ষে ফিরে দেখতে পান বাথরুমে পানির বালতিতে ছোট মেয়ে পড়ে আছে। তাকে বালতি থেকে তুলে খাটে এনে দেখেন মেয়ে মারা গেছে। এতে রাগে-ক্ষোভে স্ত্রীকে থাপ্পড় মারলে পড়ে যান। এরপর গলা চেপে ধরলে সুমা মারা যান।
তবে জেবিনকে গ্রেফতারের বিষয়ে শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করেছে কক্সবাজার সদর থানা পুলিশ। সেখানে লিখিত বক্তব্যে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম জানান, পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রী ও ছোট মেয়েকে কক্সবাজারে এনে হোটেল কক্ষে পরিকল্পিতভাবে খুন করেছেন জেবিন দেব।
তিনি উল্লেখ করেন, জেবিন দেবের সঙ্গে সুমা দেবের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় ২০০৯ সালে। সাংসারিক জীবনে তাদের দীপান্বিতা দেব (১১), জিতু দেব(৮) ও অনামিকা (৮ মাস) নামে তিন কন্যা আসে। পারিবারিক নানা বিষয়ে চলছি তাদের কলহ। জেবিন দেব আজিম গ্রুপ গার্মেন্টসে কর্মী হিসেবে চাকরি করতেন। অধিক আয়ের আশায় তিন মাস আগে ওমান যান জেবিন। বিদেশে কাজের চাপ বেশি হওয়ায় ৫ ফেব্রুয়ারি দেশে ফিরে আসেন। ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোর ৬টার দিকে সস্ত্রী-সন্তান নিয়ে ককক্সবাজারের কলাতলীর হোটেল সি আলিফের চতুর্থ তলার ৪১১ নম্বর কক্ষে ওঠে জেবিন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিক হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনায় বলেন, ১৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে স্ত্রী সুমা দেব ও ছোট মেয়ে অনামিকাকে হোটেল কক্ষে রেখে বাইরে থেকে তালা দিয়ে বড় মেয়ে দীপান্বিতা ও জিতুকে নিয়ে বের হন জেবিন। প্রায় তিন মিনিট পর আবার দুই মেয়েকে হোটেলের লবিতে রেখে জেবিন একা রুমে ঢুকেন। আবার ১০টা ২৪ মিনিটে রুম থেকে বের হয়ে লবিতে আসেন। সাড়ে ১০টায় দুই সন্তানকে আবারো লবিতে রেখে লিফটযোগে ১০টা ৩১ মিনিটে ৪১১ কক্ষে যান। ১০টা ৩৮ মিনিটে বের হয়ে কক্ষে তালা দিয়ে হাতে একটি তোয়ালেসহ সিঁড়িযোগে হোটেল লবিতে নেমে দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে বের হয়ে আর ফেরেননি। ১৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে তাদের হোটেল থেকে চেক আউট করার কথা ছিল। কিন্তু দেরি হওয়ায় হোটেলের হাউজ কিপিংয়ের ছেলেরা গিয়ে চেক করে দেখে দরজা বন্ধ। দুপুর সাড়ে ১২টায় মাস্টার কী দিয়ে দরজা খুলে মেঝেতে সুমা দেব ও বিছানায় তাহাদের কন্যা সন্তান অনামিকার মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে।
জিজ্ঞাসাবাদ নিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিক বলেন, জেবিনের ২৩ ফেব্রুয়ারি বিদেশ ফিরে যাওয়ার কথা। ৭ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার এসে ঘুরে যান তিনি। সে সময় স্ত্রী ও ছোট মেয়েকে হত্যার পরিকল্পনা করে ১৪ ফেব্রুয়ারি হোটেল সি আলিফে ওঠেন। ১৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে স্ত্রীকে শ্বাসরোধে এবং মেয়েকে বালতির পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করের জেবিন। মরদেহ হোটেল থেকে সরানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পরে বড় মেয়ে ও ছেলেকে নিয়ে পালিয়ে যান।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, নিহত সুমা দেব ও মেয়ের মরদেহ কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে আছে। স্বজনরা কক্সবাজার এলে মরদেহগুলো হস্তান্তর করা হবে। মা-মেয়ে হত্যার ঘটনায় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।