প্রাইভেট পড়তে গিয়ে দুষ্টুমী করায় প্রথম শ্রেনীর ছাত্রী তাসফিয়া জান্নাত মিসফাকে শিক্ষক নিজাম উদ্দিন বেধরক মারধর করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আহত শিশু মিসফার বাবা ইউপি সদস্য মোঃ ওমর ফারুক এমন অভিযোগ করেন। আহত শিশুকে তিনদিন চিকিৎসা শেষে শনিবার বিকেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
শনিবার সকালে এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নিন্দার ঝড় ওঠে। সকলেই অভিযুক্ত শিক্ষকের শাস্তি দাবী করেছেন। ঘটনা ঘটেছে বুধবার রাতে তালতলী উপজেলার জাকিরতবক গ্রামে।
জানাগেছে, উপজেলার ছোটবগী ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মোঃ ওমর ফারুকের কন্যা তাসফিয়া জান্নাত মিসফা জাকিরতবক ছালেহিয়া দাখিল মাদ্রাসার প্রথম শ্রেনীর ছাত্রী। বুধবার রাতে ওই মাদ্রাসার কৃষি বিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ নিজাম উদ্দিনের কাছে প্রাইভেট পড়তেছিল। ওই সময় মিসফা তার বড় বোন ফারজানা আফরিন সেফার সাথে দুষ্টুমী করে একটি বইয়ের পাতা ছিড়ে ফেলে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শিক্ষক নিজাম উদ্দিন শিশু মিফসাকে বেধরক মারধর করে। তার মারধরে মিসফা তার বিছানায় প্রস্রাব করে দেয়। এতে আরো ক্ষিপ্ত হন শিক্ষক। এক পর্যায় তিনি আবারো শিশুটিকে মারধর করে। পরে ওই শিশুকে দিয়ে তার বিছানার প্রস্রাব পরিষ্কার করে দুই ঘন্টা পরে বাড়ীতে পাঠিয়ে দেয়। শিক্ষকের মারধরে শিশুটির মুখমন্ডল ও পিঠেসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে লালচে রক্তাক্ত আঘাতের জখম হয়। এ ঘটনার পর থেকে শিশু মিসফা পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে বলে জানান বাবা ওমর ফারুক।
বৃহস্পতিবার শিশু মিসফাকে তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। ওই হাসপাতালের উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার মংফো শিশুটিকে চিকিৎসা দেয়। কিন্তু ঘটনার তিন দিনেও শিশুটি ব্যাথায় কাতরাচ্ছে এবং ভয়ে পরিবারের লোকজনের কাছে কথা বলছে না।
শনিবার বিকেলে শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে যাচ্ছে বলে জানান বাবা ওমর ফারুক। অভিযোগ রয়েছে শিক্ষক নিজাম উদ্দিন ইতিপূর্বে রিয়ামনিসহ বেশ কয়েকজন শিশুকে নির্যাতন করেছে। শুক্রবার রাতে এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নিন্দার ঝড় ওঠে। সকলে অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের শাস্তি দাবী করেছেন।
শিশু তাসফিয়া জান্নাত মিসফার বড় বোন ফারজানা আরফিন সেফা বলেন, আমার একটি বইয়ের পাতা ছিড়ে ফেলায় স্যারে ছোট বোন মিসফাকে মারধর করেছে। স্যারের মারধরে মিসফা তার বিছানায় প্রস্রাব করে দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আবারো মারধর করেছে স্যারে।
মিসফার মা রাবেয়া আক্তার বলেন, মারধরের পর থেকে মেয়ে কারো সাথে কথা বলছে না। গোমড়া হয়ে বসে থাকে। ব্যাথায় কাতরাচ্ছে। এ ঘটনায় ওই শিক্ষকের শাস্তি দাবী করছি।
মিসফার বাবা ছোটবগী ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মোঃ ওমর ফারুক বলেন, মেয়ে অবস্থা ভালো না। চিকিৎসার জন্য মেয়েকে নিয়ে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে যাচ্ছি।
জাকিরতবক ছালেহিয়া দাখিল মাদ্রাসার অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক মোঃ নিজাম উদ্দিন বলেন, দুষ্টমী করায় দু’একটি চর থাপ্পর মেরেছি।
জাকিরতবক ছালেহিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আনোয়ার হোসেন বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। এটা নেহায়েত অন্যায়। এমন অন্যায় মেনে নেয়া যায়না। অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মংফো বলেন, শিশুটির মুখমন্ডল ও পিঠেসহ শরীরে বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত লালচে আঘাতের চিহৃ রয়েছে।
তালতলী থানার ওসি কাজী শাখাওয়াত হোসেন তপু বলেন, খোজ খবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিফাত আনোয়ার টুম্পা বলেন, একটি শিশুর সাথে এমন আচরণ মেনে নেয়ার মত নয়। বিষয়টি আমার জানা নেই। জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।