প্রকাশ: শুক্রবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৬:১১ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
দীঘ ৫ বছর পর লালমনিরহাটে এক অসহায় দিমজুরকে জুতার মালা গলায় দেয়া মামলার ৭ আসামীর বিরুদ্ধে সমন জারি করেছে আদালত।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, লালমনিরহাট পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড উত্তর সাপটানা (কোরবানটারী) গ্রামের দিনমজুর, সহজ, সরল শ্রী কমলা কান্ত রায় (৫৮)। ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর বানিয়ার দিঘী নামক স্থানে ধর্মিয় অনুষ্ঠান বিষয়ে আলোচনার কলহের জেরে কমলা কান্তকে ডেকে নিয়ে তার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে ঝাড়– দিয়ে বেদম মারপিট করেন। খবর পেয়ে স্বামীকে বাচাতে ঘটনাস্থলে ছুটে যান কমলা কান্তের স্ত্রী শ্রীমতী মাধবী রানী (৪৫)। ঘটনাস্থলে মাধবী গেলে তার পরনের কাপড় ছিঁড়ে শ্লীলতাহানী ঘটিয়ে বেদম মারপিট করেন একই এলাকার মনোরঞ্জন রায়, শ্রীমতি কানন বালা, সুমন মোহন্ত, সুবা রাণী রায়, আউলা চন্দ্র ওরুপে জিতেন রায়, বিউটি রানী, শ্রী প্রভাস চন্দ্র ও শ্রী হেমন্ত কুমার রায় সহ ৮ জনের বিরুদ্ধে শ্রীমতী মাধবী রানী (৪৫) বাদী হয়ে সদর থানার এজাহার দায়ের করেন। লালমনিরহাট সদর থানায় ঘটনাটি তদন্ত শেষে থানা পুলিশ মামলাটি নথিভুক্ত করে। যাহার মামলা নং-৫১, তাং-১৮/১১/২০১৭ইং।
মামলাটি দায়েরের পর লালমনিরহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র লোকমারফত স্ত্রী শ্রী মাধবী ও স্বামী শ্রী কমলাকান্ত রায়কে সাপটানা বাজারস্থ গদি ঘরে ডেকে নিয়ে যায়। মোকদ্দমাটি মীমাংসা করার কথা বলে মীমাংসার কোন আলোচনা না করে সাদা কাগজে স্ত্রী ও স্বামীর স্বাক্ষর নিয়ে বাড়ি পাঠান। সেই কাগজে আপোষ মীমাংসা দেখিয়ে ৩১/১২/১৭ইং তৎকালীন লালমনিরহাট সদর থানার এস আই নিহার রঞ্জন রায় চুড়ান্ত রিপোর্ট অধর্তব্য নং-৬৯ আদালতে প্রেরণ করেন। পরর্বতীতে আদালত সেই চুড়ান্ত রিপোর্ট ১২/০২/২০১৮ইং তারিখে বিজ্ঞ আদালত মামলাটি নিস্পত্তির আদেশ দেন।
পরে বাদী মাধবী রানী বিজ্ঞ সিনিয়র জুডি: ম্যাজি: আমলী ১ম আদালত, লালমনিরহাটের নারাজি আবেদন করেন। বিজ্ঞ সিনিয়র জুডি: ম্যাজি: আমলী ১ম আদালত, নারাজি আবেদনটি আমলে নিয়ে (ওসি, ডিবি, লালমনিরহাট) কে মামলাটি তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন। উক্ত মামলাটি তদন্তের জন্য দায়িত্ব পান লালমনিরহাট, ডিবি, পুলিশের এস আই ফেরদৌস সরকার। তিনি দীঘদিন ধরে মামলাটি গোপনে ও প্রকাশ্যে এবং নিরপেক্ষ তদন্ত করে ১৮/০১/২৩ইং তারিখে শুধুমাত্র মামলার ৮নং আসামী শ্রী হেমন্ত কুমার রায়কে বাদ দিয়ে ৭ জনের বিরুদ্ধে লালমনিরহাটের বিজ্ঞ অতিঃ সিনিয়র জুডি: ম্যাজি: আমলী ১ম আদালতে চুড়ান্ত অভিযোগপত্র দাখিল। এছাড়াও শ্রী কমলা কান্ত রায়কে প্রভাবশালী বিবাদীগণ উক্ত মন্দিরের সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে একঘরে করেন। ফলে কমলা কান্ত রায় ন্যায় বিচারের আশায় অতি কষ্টে জীবন যাপন করছেন। এতে আসামীরা হল, মনোরঞ্জন রায়, শ্রীমতি কানন বালা, সুমন মোহন্ত, সুবা রাণী রায়, আউলা চন্দ্র ওরুপে জিতেন রায়, বিউটি রানী, শ্রী প্রভাস চন্দ্র। গত ১২ ফেব্রুয়ারি লালমনিরহাটের বিজ্ঞ সিনিয়র জুডি: ম্যাজি: আমলী ১ম আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে ৭ আসামীর বিরুদ্ধে সমন জারি করেন। এর আগে মামলাটি সুষ্ঠ তদন্তের দাবী লালমনিরহাটে সংবাদ সম্মেলন করেন কমলা কান্ত রায়।
এ বিষয়ে কমলা কান্ত রায় বলেন, আমাকে নিয়ে এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঝে নানান আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। আমার বাচা দুস্কর হয়ে পড়েছে। বিনা অপরাধে প্রভাবশালীরা আমার গলায় জুতার মালা দিলো। আবার সেই মামলার বিচার চাওয়ায় সমাজ থেকে আমাকে বিচ্ছিন্ন করে একঘরে। আমি সনাতন ধর্মাবলম্বী সংখ্যালঘু, বিষয়টি নিয়ে আমার পরিবার সহ ভয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়েছি।