জ্ঞান অর্জনের জন্য সুদূর চীন দেশে যাও এমন কথা প্রচলিত থাকলেও এমনটা আর চোখে পড়ে না তবে চীন দেশে না গেলেও জ্ঞান অর্জন করতে ছুটি পেলেই শিক্ষা পার্কের দিকে ছুটছেন মাগুরার শালিখা উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। কারো কাছে স্কুল ব্যাগ, কারো হাতে টিফিন বক্স। এক দৌড়ে শিক্ষা পার্কের দিকে ছুটে যাচ্ছেন তারা। শিক্ষা পার্কটি স্কুলের নিকটবর্তী হওয়ায় অল্প সময়ের মধ্যেই সেখানে পৌঁছে যাচ্ছেন তারা।
উপজেলা সদর আড়পাড়া ইউনিয়নের আড়পাড়া সরকারি আইডিয়াল হাই স্কুল, আড়পাড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পোড়াগাছি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, আড়পাড়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, শ্রীহট্ট মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অবসর পেলেই শিক্ষাপার্কে সময় ব্যয় করছে।
বিভিন্ন বিষয়ে জানা-অজানা তথ্য পেতে এখানে প্রতি বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ভিড় জমাচ্ছে তারা। শুধু শিক্ষার্থী নয় অনেক অভিভাবকদের আনাগোনা বেড়েছে সেখানে। শিক্ষাপার্কটি আড়পাড়া সদর ডিগ্রী কলেজের ১০ শতাংশ জায়গা জুড়ে অবস্থিত। এছাড়াও ডিগ্রী কলেজের কয়েকটি কক্ষও ব্যবহৃত হচ্ছে শিক্ষাপার্কের জন্য। পার্কটিতে ঘুরতে আসা শিক্ষার্থী সাদিয়া আক্তার জানায়, এখানে একটি টেলিস্কোপ আছে যা দিয়ে চাঁদের পাহাড় পর্বত পর্যন্ত স্পষ্ট দেখাা যাচ্ছে। এছাড়া সহজে মহাকাশ পর্যবেক্ষণ করা যায়় বলেও জানায় সে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সেখানে রয়েছে ইলেকট্রনিক মাইক্রস্কোপ যা দিয়ে জীবানু জগৎ দেখা যায় এবং ছাত্রছাত্রিরা সহজেই জীবানু জগৎ ও কোষবিদ্যা সম্পর্কে ধারনা লাভ করতে পারছে। এখানে রয়েছে একটি সাহিত্য কর্ণার যেখানে বাংলাদেশের বিখ্যাত কবি ও সাহিত্যিকদের ছবি আর্ট করা আছে। এখানে বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কিত বই, পুস্তিকা ইত্যাদিও রয়েছে যারা কবি সাহিত্যিক হতে চাই তাদের জন্য এখানে আছে এক সমৃদ্ধ জ্ঞান ভান্ডার। এই পার্কে আছে টাইল্সের উপর এ্যম্বুস করা শালিখার ম্যাপ যেখানে শালিখা সম্পর্কিত অধিকাংশ তথ্য আছে। যিনি এখানে ঘুরতে আসবেন তিনি প্রথমেই শালিখা উপজেলা সম্পর্কে ভালো একটি ধারনা পাবেন। এর পরই আছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালিন ম্যাপ যেখানে টাইল্সের উপর এ্যাম্বুস করে সকল সেক্টরকে অত্যন্ত চমৎকার ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। যাতেকরে একজন ছাত্র/ছাত্রী একনজরেই ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের তথ্য গুলো দেখে নিতে পারবে। রয়েছে মুক্তিযুদ্ধবেদি যেখানে ১০ ফুট/ ১০ ফুট বেদির প্রথমেই আছে টাইল্সের উপর অংকিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি। পাশেই তাঁর জীবনী। এর নিচে আছে তথ্য সম্বলিত আমাদের সাত বীর শ্রেষ্ঠের ছবি।
এছাড়াও ছয় ফুট উচ্চতা সম্পন্ন ভূগোলক যা সহজে তার অক্ষে ঘুরতে পারে। এখান থেকে ছাত্র/ছাত্রীরা সহজেই পৃথিবীর আহ্নিক গতি, বার্ষিক গতি ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারছে।
এখানে ঘুরতে আসা শিক্ষার্থী প্রত্যয় ও প্রতীক জানায়, শিক্ষাপার্ক পেয়ে আমরা খুবই খুশি কারণ হিসেবে তারা বলে, সেখানে থাকা ভূগোলক তাদের ভূগোল শিক্ষার সহায়ক হিসেবে কাজ করছে। এছাড়াও তারা প্রতিটি গ্রহের নাম, ওজন, ঘূর্ণায়ন গতি, তার বছর, সুর্য হতে তার দুরত্ব ইত্যাদি সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করছে।
সেখানে থাকা জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও চিচেন ইতজার রেপলিকা যা দেখে বিশ্ব সভ্যতা ও ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারছে তারা। এছাড়াও রয়েছে পিরামিডের রেপলিকা যা মিশর বা প্রচীন ইতিহাস সম্পর্কে জানবে এবং আইফেল টাওয়ারের রেপলিকা যা দেখে এর টেকনোলজি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারবে শিক্ষার্থীরা। তামিম, অপলা, স্নিগ্ধা, আরাফাতসহ শিক্ষাপার্কে ঘুরতে আসা কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হলে তারা জানায়়, শিক্ষাপার্কটি আসলেই একটি শিক্ষনীয় জায়গা যেখান থেকে বিভিন্ন ধরনের বিষয় সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করা যাচ্ছে।
উপজেলা ডেভলেপমেন্ট ফেসিলিটেটর ও শিক্ষা পার্কের উদ্দোক্তা ইবাদ আলী জানান, শিক্ষা পার্কটিতে মোট আটটি বিষয়ের উপর উপস্থাপন করা হয়েছে। এরকম শিক্ষা পার্ক দেশের অন্যান্য উপজেলাতে হলে বর্তমান সরকারের শিক্ষাণীতি বাস্তবায়নে সহায়ক হিসেবে কাজ করবে বলে ধারণা করছেন তিনি। উল্লেখ্য উপজেলা পরিচালন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় গত ৩১ জানুয়ারি সকাল ১১ টায় দেশের প্রথম শিক্ষাপার্ক হিসেবে পার্কটি উদ্বোধন করেন মাগুরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবু নাছের বেগ।