কুড়িগ্রামের উলিপুরে খনন করা বুড়ি তিস্তা নদী দখলের মহাৎসব চলছে। তিস্তা ব্রীজ থেকে প্রায় এক হাজার মিটার এলাকা জুড়ে নদী দখল করে প্রকাশ্যে বিল্ডিং নির্মানসহ দুই পাড়ের মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। একটি চক্র যে যেভাবে পাচ্ছে বুড়ি তিস্তাকে আবারও দখল দুষনে মেতে উঠেছে।
জানা গেছে, ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের গোড়াইপিয়ার এলাকায় বুড়ি তিস্তার মুখে নির্মিত স্লুইস গেটটি তিস্তা নদী গর্ভে চলে যায়। পরে পানি উন্নয়ন বোর্ড অপরিকল্পিত ভাবে বুড়ি তিস্তার উৎস মুখে বাঁধ নির্মাণ করেন। ফলে বুড়ি তিস্তার স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর দখল আর দূষণে প্রমত্তা বুড়ি তিস্তা নদী মরা খালে পরিণত হয়। গত ৪ বছর আগে বুড়ি তিস্তা বাঁচাও আন্দোলন শুরু করেন, উলিপুর প্রেসক্লাব এবং রেল, নৌ যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণ কমিটি।
আন্দোলনকারীদের দাবির প্রেক্ষিতে বিগত ২০১৮ সালে বুড়ি তিস্তা প্রধানমন্ত্রীর ডেলটা প্ল্যান কর্মসূচির আওতায় ১৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রায় ৮০ ফুট প্রস্থ ও ৩১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য নদী খনন কাজ করে। প্রাণ ফিরে পায় মরা বুড়িতিস্তা। বুড়ি তিস্তা নদীটি উপজেলার থেতরাই ও দলদলিয়া ইউনিয়নের অর্জুন এলাকা থেকে প্রবাহিত হয়ে চিলমারী উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের কাঁচকোল এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের সাথে মিলিত হয়েছে। কিন্ত সেই বুড়ি তিস্তা নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি সহ দখল ও দুষনে আবারো একটি মহল সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
সরেজমিনে, পৌর শহরের গুনাইগাছ ব্রিজ, জোদ্দার পাড়া, বলদি পাড়া, নারিকেল বাড়ি কাজির চক, খামার, চরপাড়া এলাকার বুড়িতিস্তা পাড় ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন জায়গায় নদীর পাড় কেটে সমতল ভূমিতে পরিণত করা হচ্ছে। আবার কেউ পাড়ের মাটি কেটে নিয়ে গেছে। নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ করে বাঁশ আর জালের ঘের দিয়ে মাছ চাষ ও বিল্ডিং মির্মান করছেন আকতারুজ্জামান অপু ও আবুল কালাম মন্ডল। এদিকে, বুড়িতিস্তা নদীর গুনাইগাছ ব্রিজ পয়েন্টে আবর্জনা ফেলে পরিবেশ দূষণ সহ নদীটি মেরে ফেলার অপচেষ্টাও চলছে। ফলে বুড়িতিস্তার স্বাভাবিক পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে।
পৌর শহরের গুনাইগাছ ব্রিজ জোদ্দার পাড়া এলাকায় কিছু শ্রমিককে বুড়ি তিস্তা নদীর পাড় কেটে মাটি নিয়ে যেতে দেখা যায়। এ বিষয়ে শ্রমিক আবু কালাম জানান, আমরা কাজ করি টাকার জন্য। আজ অপু ভাইয়ের কাজ করছি তাকে বলেন। তারা আরো জানান, ওই যে নদীতে মাছ চাষের জাল দেখছেন ওটা ও আকতারুজ্জামান অপু ভাইয়ের।
এ ব্যাপারে দখলদার চক্রের হেতা আকতারুজ্জামান অপুর নিকট জানতে চাইলে তিনি দাম্ভিকতার সাথে বলেন, এখানে কোন সরকারি জায়গা নেই। আমার পৈত্রিক সম্পত্তির মাটি কাটবো তাতে কার কি ! নদী দখল করে বিল্ডিং নির্মান করছেন কেন জানতে চাইলে বলেন, সরকারকে ভেঙ্গে দিতে বলেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এভাবে নদীর পাড় কাটলে বর্ষা মৌসুমে লোকালয়ে পানি ঢুকে শহরে ও নদী তীরবর্ত্তী এলাকা প্লাবিত হবে। নদী রক্ষায় কর্র্র্তৃপক্ষের কোন নজরদারী না থাকায় যে যার মত করে বুড়ি তিস্তা নদীকে দখল করে অবকাঠামো নির্মান ও ময়লা আবজর্না ফেলে পরিবেশ দুষণ করছে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় নদী তার ফিরে পাওয়া ঐতিহ্য আবার দ্রুত হারিয়ে ফেলবে।
রেল, নৌ যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণ কমিটির উলিপুর শাখার সভাপতি আপন আলমগীর বলেন, বুড়ি তিস্তা নদীর পৌরসভার কিছু অংশে একটি চক্র আবারো নদী দখলে হীন অপচেষ্টা চালাচ্ছে। বুড়ি তিস্তার স্বাভাবিক পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা দূর করাসহ নদী রক্ষায় কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
তিস্তা নদী রক্ষা কমিটি উলিপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান আবু সাঈদ সরকার বলেন, এভাবে বুড়ি তিস্তা দখল হতে থাকলে, সরকারের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে। দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট আইনী ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বুড়ি তিস্তা নদীর পৌর এলাকায় অধিগ্রহণে আইনি জটিলতার সুযোগে ব্যক্তি মালিকানায় থাকা জমির মালিকরা বেআইনীভাবে নদীর পাড়ের মাটি কাটছে এবং দখল করে ভবন নিমার্ন করছে। স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে।