প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে কোনো মুক্তিযোদ্ধা মানবেতর জীবনযাপন করবে না।
বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) পাঁচ জেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ৫ হাজার বাড়ির চাবি হস্তান্তর উদ্বোধনকালে একথা বলেন তিনি।
তিনি যাদের ত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে তরুণ প্রজন্মের সামনে তা তুলে ধরতে এবং বাংলাদেশের প্রকৃত ইতিহাস জানাতে সারাদেশের অনাবিস্কৃত বধ্যভূমিগুলো খূঁজে বের করে সেগুলো সংরক্ষণের জন্যও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। পাশাশাপাশি এই বাংলাদেশের ওপর আর কারো কাল থাবা যেন না পড়ে সেজন্য দেশবাসীকে সকর্ত থাকারও আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “একজন মুক্তিযোদ্ধা ভিক্ষা করবে বা রিকশা চালাবে বা মানবেতর জীবনযাপন করবে, অন্তত আমি জাতির পিতার কন্যা ক্ষমতায় থাকতে এটা কখনো হতে পারেনা।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অসচ্ছল প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্মিত ঘর ‘বীর নিবাস’-এর চাবি হস্তান্তরের এই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেন।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। কিশোরগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, গাজীপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল জেলা এর সাথে যুক্ত ছিল।
আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি তা এখন ন্যূনতম ২০ হাজার টাকা করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাদের ঘর-বাড়ি নাই এবং মানবেতর জীবনযাপন করছিল সেটা আমাদের জন্য লজ্জার ব্যাপার। তাই আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ঘর-বাড়ি তৈরী করে তাদের জীবন-জীবিকা এবং চিকিৎসা-যাতায়াতসহ নানা সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।
তিনি বলেন, আজ ‘বীর নিবাস’ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। আমি আশা করি আরও যারা মুক্তিযোদ্ধা বাকী আছেন তাদের সকলের জন্যই এই ঘর তৈরী করে দেয়া হবে। সাধারণ গৃহহীণ-ভূমিহীন মানুষের জন্যও সরকার ঘর করে দিচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে আজ ৫ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধার মাঝে বীর নিবাস হস্তান্তর করা হচ্ছে। বর্তমানে ১৭ হাজার ৬৬০টি বীর নিবাসের কাজ বিভিন্ন পর্যায়ে চলমান রয়েছে। আশা করি এ বছরের মধ্যে ৩০ হাজার বীর নিবাস নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে। যদিও করোনা মহামারী এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও স্যাংশনের কারণে আমাদের খুবই হিসেব করে চলতে হচ্ছে।”
বিশ্ব মন্দার অভিঘাত থেকে বাঁচতে দেশবাসীকে বিদ্যুৎ,পানি ও জ্বালানি ব্যবহারে মিতব্যয়িতা অবলম্বনের পাশাপাশি প্রতি ইঞ্চি জমি চাষাবাদের আওতায় আনার মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর দেশবাসীর প্রতি তাঁর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ভবিষ্যতে যেন খাদ্যের অভাব না হয় সেজন্যই আমরা আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি। সেজন্যই আমার এই আহ্বান যে যেখানে পারেন প্রত্যেকেই কিছু না কিছু উৎপাদন করেন। নিজে খান এবং অন্যকেও খাওয়ান।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খাজা মিয়া।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে কিশোরগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, গাজীপুর, মাদারীপুর ও নড়াইলের জেলা প্রশাসকরা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ‘বীর নিবাস’-এর চাবি হস্তান্তর করেন।
মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শাজাহান খান এমপি।
অনুষ্ঠানে ‘বীর নিবাস’ এর উপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।
দুটি শয়নকক্ষ, একটি বসার ঘর, একটি রান্নাঘর এবং একটি করিডোরসহ একতলা বিশিষ্ট প্রতিটি ‘বীর নিবাস’ ১৪ দশমিক ১০ লাখ টাকায় নির্মিত এবং দেশের জাতীয় পতাকার রঙ লাল-সবুজে করা।
এছাড়া রান্নাঘরের পাশে একটি সিমেন্টের উঠান, একটি নলকূপ, একটি বাথরুম এবং গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির শেড রয়েছে।
এর আগে ২০২১ সালের ১৬ মার্চ সরকার আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ ও প্রয়াত যুদ্ধ বীরদের পরিবারের সদস্যদের জন্য ৩০ হাজার বাড়ি নির্মাণের জন্য ৪,১২৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। কেউ আর থামাতে পারবেনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় আমরা গড়ে তুলবো। সেটাই আমাদের লক্ষ্য।
তিনি বলেন, “এই বাংলাদেশের ওপর যেন আর কারো কাল থাবা না পড়ে সেজন্য দেশবাসীকে সজাগ থাকতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে। জাতির পিতার নেতৃত্বে এই দেশ রক্ত দিয়ে আমরা স্বাধীন করেছি। এই দেশকে আমরা সোনার বাংলাদেশ হিসেবে ইনশাল্লাহ গড়ে তুলবো।” খবর: বাসস