সিলেটে ডিম-মুরগির বাজারে অস্থিরতা থামছেই না। প্রতিদিন বাজারে ছুঁই ছুঁই অবস্থা ইতোমধ্যে ডাবল সেঞ্চুরী অর্থাৎ দুইশ ২০ টাকা অতিক্রম করেছে ব্রয়লার মুরগির কেজি। এদিকে ব্রয়লার মুরগি আর ফার্মের ডিমের বাজার অস্থিতিশীলতার জন্য কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা।
প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের উদাসিনতায় কর্পোরেট পোল্ট্রি প্রতিষ্ঠান গুলো সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার থেকে প্রায় দু’শ’ ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ প্রান্তিক খামারিদের। শবেবরাত ও রোজাকে সামনে রেখে ডিম-মুরগির দাম আরো বাড়ানোর পাঁয়তারা চলছে বলেও জানিয়েছে ছোট খামারিরা।
সাধারণ মানুষের একটি বড় অংশ আমিষের চাহিদা মেটাতে নির্ভর করে ব্রয়লার মুরগি আর ডিমের ওপর। কিন্তু দফায় দফায় ডিম আর ব্রয়লারের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাও এখন নিম্ন ও মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। ফেব্রুয়ারী মাসের ১ম সপ্তাহে দাম বাড়তে শুরু করে। সপ্তাহ ব্যবধানে ডিমের ডজন ১৫ থেকে ২০ টাকা, আর মুরগি কেজিতে ৭০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
খামারিদের হিসাবে, বাজার কপোর্রেট সিন্ডিকেটের হাতে চলে যাওয়ায় ১ লাখ ৬০ হাজার প্রান্তিক পোল্ট্রি ফার্মের মধ্যে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে লাখেরও অধিক। সরকারি হিসাবে টিকে আছে ৮৪ হাজার। শুধু কর্পোরেট নয়, প্রান্তিক খামারিদের প্রণোদনা না দিলে বিদেশ থেকে আমদানি করেও মুরগির মাংস ও ডিমের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে না বলেও জানান খামারিরা। প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরকে আরো তৎপর হবার তাগিদও দেন প্রান্তিক খামারের নেতারা।
মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারী) সিলেট নগরীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে ১ কেজি ব্রয়লার খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩২০ টাকা, লাল মুরগি ৪৫০ টাকা দরে। এছাড়া লাল ডিমের দাম ডজন প্রতি-১৪০ টাকা, সাদা ডিমের ডজন-১৩৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব সুমন হাওলাদার বলেন, এখন তো ভোক্তারা ব্রয়লার মুরগি ২০০-২২০ টাকা কেজি ধরে খাচ্ছেন। বাজার মনিটরিং না হলে-আগামীতে এ মুরগি ৩০০ টাকা কেজি ছাড়িয়ে যাবে। যদি আমাদের খামারি ভাইদেরকে টিকিয়ে না রাখা যায়। কর্পোরেট কোম্পানি গুলোর কাছে বৃহত্তর পোল্ট্রি শিল্প জিম্মি হয়ে পড়েছে। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে একটাই, ডিম-মুরগি ও টোটাল পোল্ট্রি বাজারকে তারা নিয়ন্ত্রণ করবে।
সরকারি বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, খুচরা বাজারে দাম বেড়ে প্রতিহালি ডিম ৪৫-৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর এতে গত এক মাসে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ। সংস্থাটির মতে, ড়ব্রয়লার মুরগি ১৯০-২০০ টাকায় অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়েছে। এ ছাড়া মুদিপণ্যের বাজারে প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১১৫-১২০ টাকায়, যা সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি। মাছ-মাংস বিক্রি হচ্ছে আগের দামে। সবজির বাজারে দাম কমে প্রতিকেজি টমেটো ২০-২৫ এবং শসা ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যদিও বাস্তবে প্রায় সব পণ্যই টিসিবির নির্ধারিত মূল্য থেকে বেশী দরে বিক্রি হচ্ছে ।
তবে ব্যবসায়ীরা জানান, সিলেটে মুরগি ও ডিমের দাম বৃদ্ধির কারণ পর্যবেক্ষণে ৩ টি প্রধান কারণ ধরেন। প্রথমত- স্থানীয়ভাবে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের উৎপাদন কম। ফলে অন্য জেলা থেকে আমদানী করতে গিয়ে পরিবহন খরচ বেড়ে যায়। দ্বিতীয়ত- পোল্ট্রিজাত খাদ্য ও ওষুধের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তৃতীয়ত- সিলেটে একটা মধ্যসত্বভোগী শ্রেণী গড়ে উঠেছে যারা স্থানীয় খামারিদের পাশাপাশি ও অন্য জেলা থেকে আমদানী করা মুরগি মজুত করে থাকে। তাদের মাধ্যমে মুরগি ও ডিম বাজারে যাওয়ায় এর প্রভাব বাজারে পড়ে। ফলে দাম তুলনামূলক ভাবে বেশী বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।