দুই দফায় নকশা বদলে ছয়তলা থেকে ভবনটি নবম তলার অনুমোদন ও নির্মাণ বরাদ্দ তিন দফায় বাড়ানো হলেও ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের নতুন ভবন নির্মাণকাজ কবে নাগাদ শেষ হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ উঠেছে, ২০১৮ সালে শুরু করে বর্তমানে প্রকল্পের মাত্র ৬০ভাগ সম্পন্ন হলেও সংশ্লিষ্ট দুই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যোগসাজসে ৮০% বিল তুলে নিয়েছে। এঅবস্থায় গত ২ ফেব্রুয়ারী সদর হাসপাতালের পরিচালনা পরিষদের সভায় ঝালকাঠি-২ আসনের সংসদ সদস্য, সাবেক মন্ত্রী আলহাজ্ব আমির হোসেন আমু এমপি নির্মান প্রকল্পের কাজে ধীর গতির বিষয়টি পর্যবেক্ষন করে সংশ্লিষ্টদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
সরেজমিন খোজ খবর নিয়ে জানাগেছে, গনপূর্ত বিভাগের অধীনে নির্মানাধীন ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের ভবন নির্মাণ কাজ পাঁচ বছর আগে ২০১৮ সালে শুরু হয়। প্রথম দফায় ছয়তলা ভবনের নির্মাণ কাজ ২০১৯ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও শুরু থেকেই নির্মাণ কাজ চলে আসছে কচ্ছপ গতিতে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স কোহিনুর এন্টারপ্রাইজ ও জিএম কনস্ট্রাকশন মাঝে মাঝেই নানা অজুহাতে কয়েক দফায় কাজ বন্ধ করে রেখেছিল। এখনো নির্মাণ কাজসহ প্রায় ৪০শতাংশ কাজে অসম্পূর্ণ রয়েছে। অথচ চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত বর্ধিত মেয়াদ শেষ হবার কথা থাকলে তা কোন ভাবেই শেষ হবেনা এটা সুনিশ্চিত।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের একটি সুত্র জানায়, প্রথম পর্যায়ে ছয়তলা পর্যন্ত ভবনের দরপত্রে বরাদ্দ ছিল ৩৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা ও ২০১৯ সালে শেষ হওয়ার কথা। প্রথম ধাপের ছয়তলা ভবনের নির্মান কাজের ভেতরের দরজা-জানালা, বাতরুম, ইলেকট্রিক, পানির লাইন, ভেতরের প্লাষ্টার, চুন-রং, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থাসহ ৪০শতাংশ কাজ অসম্পূর্ণ। কাজের ধীরগতির মধ্যেই রহস্য জনক কারনে সেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দুটিকে গত বছর ২০২২সালে আরও তিনতলা বাড়িয়ে ভবনের নবম তলা পর্যন্ত নির্মানের নকশা ও বরাদ্দের অনুমোদন দিয়েছে গণপূর্ত অধিদপ্তর।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের সুত্রটি আরো জানায়, নতুন করে সপ্তম, অষ্টম ও নবম তলার কাজের জন্য আরও ৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়ে বরিশালের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুটিকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। বর্তমানে ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দে মেসার্স কোহিনুর এন্টারপ্রাইজ ও জিএম কনস্ট্রাকশনকে কার্যাদেশ দেয়ার পর রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজসে ৩৫ কোটি টাকা বিল তুলে নিলেও এখোন পর্যন্ত ৪০শতাংশ কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। তবে আগামী ৩০ জুন এই প্রকল্পের মেয়াদ নির্ধারিত থাকায় এরপর আর সময় বা বরাদ্দ বাড়ানোর আর সুযোগ নেই। তাই এ সময়ের মধ্যে ঠিকাদারকে ভবনের সব কাজ শেষ করে হস্তান্তর করতে হবে বলছে দাবী করেছে ঝালকাঠি গণপূর্ত কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স কোহিনুর এন্টারপ্রাইজের প্রকল্প প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির করোনা মহামারির সময় নির্মাণসামগ্রীর দাম ছিল ঊর্ধ্বমুখী এবং শ্রমিকসংকট এর কারণে কাজের ধীরগতি ছিল বলে জানান। প্রথম দরপত্রের ৩৫ কোটি টাকা উত্তোলন করার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘সপ্তম, অষ্টম ও নবম তলার কাজের জন্য দ্বিতীয় টেন্ডারে বরাদ্দের ৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকার একটি টাকাও বিল পাইনি। কিন্তু সাত কোটি টাকা ব্যয় করেছি। তাই আমাদের অর্থসংকট রয়েছে। আর এ কারণেই কাজের গতি কমিয়ে দিয়েছি।’ নবম তালা সম্পূর্ন ও বাকী দুটি তালার অর্ধেক কাজ বাকী থাকলেও ৭ কোটি টাকা শেষ হলো কিভাবে জানতে চাইলে তার গ্রহনযোগ্য কোন উত্তর দিতে পারেনি প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির।
স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ। এর মধ্যে হাসপাতাল ভবনের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন হবে কি না, তা এখনো ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছে। ফলে ঝালকাঠিবাসীকে উন্নত চিকিৎসাসেবা আরও বেশ কিছুদিন পেতে অপেক্ষা করতে হতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেন।
এ ব্যাপারে গত ২ ফেব্রুয়ারী ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের পরিচালনা পরিষদের সভায় ১৪ দলের মূখপাত্র ঝালকাঠি-২ আসনের সংসদ সদস্য বর্ষিয়ান নেতা আমির হোসেন আমু এমপি ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের ভবন নির্মাণ কাজে ধীরগতি সময়ক্ষেপনের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি সভায় উপস্থিত গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়সাল আলমকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করার জন্য তাগিদ দেন।
এ বিষয়ে ঝালকাঠি গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়সাল আলম বলেন, ‘প্রথম দরপত্রের কাজ প্রায়ই সমাপ্ত। দ্বিতীয় দরপত্রের কাজের অনেকটাই সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজ আগামী ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে জোর তাগিদ দিয়েছি।’ তিনি আরো বলেন, বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য একটি পাঁচতলা ভিতবিশিষ্ট সার্ভিস ভবন, অগ্নিনির্বাপক পাইপলাইন ও চারটি লিফট স্থাপনের জন্য যাবতীয় কাজ চলমান আছে।