বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪ ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: কর্মোপযোগী শিক্ষার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত উন্নতি সম্ভব   নববর্ষের আনন্দ যেন বিষাদের কারণ না হয়: রাষ্ট্রপতি   নির্বাচনে ২১ সদস্যের মনিটরিং সেল গঠন ইসির   দেশজুড়ে যে তিনদিন মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা!   মির্জা ফখরুলের জামিন শুনানি ৯ জানুয়ারি   প্রাথমিকের ছুটি বাড়ল ১৬ দিন (তালিকা)   নির্বাচনের বিরুদ্ধে বিএনপির প্রচারণা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
কেমন আছেন বানিয়াশান্তার যৌনকর্মীরা?
মাসুদ রানা, মোংলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২৩, ৪:৪০ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

বানীয়াশান্তা এক সময় দেশের সবচেয়ে বড় পল্লী হিসেবে স্বীকৃত ছিল। ১৯৫৪ সালে যখন মোংলা সমুদ্র বন্দর গড়ে ওঠে তখন থেকেই এই পল্লীর যাত্রা। এটি তখন আজকের জায়গাটিতে ছিল না। ছিল মোংলা শহরতলীর কুমারখালী খালের উত্তরে। প্রথমে ২০/২৫ যৌন কর্মী নিয়ে পল্লীর যাত্রা শুরু হয়েছিল। তারপর যখন ব্যাপ্তি বাড়তে থাকে মোংলা বন্দরের শহর বড় হয়, লোকসংখ্যা বাড়ে তখন পল্লীটিও পশুর নদীর পশ্চিম পাড়ে স্থান্তরিত হয়।

পশুর নদীর তীরে মোংলা বন্দরের কোল ঘেষে গড়ে ওঠা দাকোপ উপজেলার বানিশান্তা যৌনপল্লীর শেকড়ছেঁড়া, বাস্তুহীন নারীদের জীবন।  বাংলাদেশের নিবন্ধনকৃত ১৪টি যৌনপল্লীগুলির মধ্যে বানিশান্তা একটি।

ট্রলার থেকে এ পল্লীতে উঠলেই চোখে পড়বে বেশ কিছু ছোট ছোট দোকান ঘর। মূলত এই ঘরগুলো থেকে এই পল্লী পরিচালিত হয়। 

বর্তমানে তাদের  হাহাকারে আর আর্তনাদে আকাশ যেন আজ ভারী হয়ে যাচ্ছে!এই সংগ্রাম। প্রতি নিয়ত পশুর নদীর আছড়ে পড়া ঢেউয়ের সঙ্গে মিলিয়ে যাচ্ছে তাদের স্বপ্নটুকু। সমাজে ঠাঁই নেই, তাই পেটের দায়ে যৌনপল্লীতে পড়ে আছে যৌন কর্মীরা, খদ্দের নেই, রয়েছে দাদা-মাসি আর প্রকৃতির নিষ্ঠুর আচরণ। এত সব কিছু সহ্য করার পরেও আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে কেড়ে নিয়ে  যায়  তাদের থাকার জায়গাটুকু। 

খদ্দেরের অভাবে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে বানিয়াশান্তা যৌন পল্লির বাসিন্ধারা। অপরদিকে প্রভাবশালীদের হয়রানী, নদী ভাঙ্গন ও উচ্ছেদ আতংকে মানববেতর জিবন-যাপন করছে তারা। এ অবস্থায় ভুক্তভোগী এবং নারীবাদী সংগঠন গুলো সরকারকে পাশে দাড়ানোর দাবি জানিয়েছে। 

এখানে এখন তীব্র মন্দাভাব। এক সময় এখানে প্রচুর বিদেশী জাহাজ আসত, তখন ওরা পেত কড়কড়ে ডলার আর বিদেশী বোতল। তখন তারা স্থানীয় জেলেদেরকে কমই পাত্তা দিত। এখন বিদেশীরা আর এদিকটা মারায় না, আর রাক্ষুসে পশুর নদীর ভাঙ্গনে ক্রমান্নয়ে ওদের স্থলভুমি কমে যাচ্ছে বলে অনেকে স্থান পরিবর্তন করে অন্যত্র চলে যাচ্ছে।

যৌন কর্মী শীলা (ছদ্মনাম) বলেন বন্দরের জাহাজের কর্মীরা ছিল এখানকার বড় খদ্দের। কিন্তু বন্দর জমজমাট না থাকায় এখন আর তেমন উপার্জন নেই৷ সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোতে ঘুরতে আসা স্থানীয় কিছু লোকজন এখানে আসে। সেখান থেকে সপ্তাহে গড়ে প্রায় দেড় দুই হাজার টাকা আয় হয়। যৌনপল্লীতে থাকা নারীরা সমাজের সবথেকে কম সুবিধাভোগী এবং বিভিন্ন সময়ে ঘটা নানা দুর্ঘটনার ফলাফল হিসেবে তারা এই পেশায় জড়িত আছেন। যৌনকর্মীদের ভাষায় এটা হলো 'স্বেচ্ছায় দাসত্ব।এমন কি ভিন্ন সময় স্থানীয়দের হাতে নানান হয়রানি ও নির্যাতনের  স্বীকার হয়ে থাকে।

আরেক যৌন কর্মী বলেন, দুর্গম এলাকা বলে এখানকার মেয়েদের ভাল চিকিৎসাও জোটে না। কেউ অসুস্থ হলে বাইরে নেওয়া দুষ্কর। অনেকে যৌন, চর্ম রোগে ভুগছে। ডাক্তার দেখাতে পারছে না। সুপিয়ে পানি সংকটে পানিবাহিত রোগে ভূগছে। নেই আমাদের সামমাজিক আত্মসম্মান,  দুই হাজার টাকা ঘর ভাড়া দিতে হয়। নিজে বাঁচব নাকি পরিবারকে টাকা পাঠাব তা নিয়ে চিন্তায় থাকতে হয় সব সময়। আয় কমেছে। কিন্তু খরচ কমাব কিভাবে? আমাদের তো কেউ ভাল চোখে দেখে না। আমি অসুস্থ। ডাক্তার দেখাতি পারছি না। কিন্তু আমরাও তো মানুষ। আমাদের ছেলে মেয়েদের ভালো স্কুল কলেজেও দিতে পারিনা। আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে ছেলে মেয়েদের পড়াশুনা করাতে পারছিনা। সরকারের কাছে দাবী সরকারীভাবে আমাদের ছেলে মেয়ের লেখা পড়ার ব‍্যাবস্থাও পরিবেশ দূষণ  রোধে  স্বাস্থ্য সম্মত স‍্যানিটেশনের ব‍্যাবস্থা গ্রহন

যৌনপল্লীর সভানেত্রী রাজিয়া বেগমে বলেন, আমাদের উপর যেন মরার উপর খাড়ার ঘা,  এমনিতেই কোন লোকজন নাই, তারপর আবার ঝড় ও নদী ভাঙ্গনে  কেড়ে নিয়ে যায় তাদের খুপরি ঘরবাড়ি। আমরা কোন রকম জীবনে বেচে গেলেও রক্ষা হয়না আমাদের ঘর বাড়ি মালামাল গুলো, চুলা জ্বালানোর মত পরিস্থিতিও অনেক সময় হয় না  । শিক্ষা, চিকিৎসা, সহ নানা সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হই।  আমাদের কোন রকম সাহায্য করেনা, শুধু দেখেই যান যারা আসে।

নারী পক্ষ নামক সংগঠন'র সদস্য মাহবুবা মাহমুদ বলছেন, প্রভাবশালী ভুমিদস্যুরা নানা অজুহাতে নৈতিকতার প্রশ্নতুলে দেশের কয়েকটি যৌন পল্লি উচ্ছেদ করেছে। এখন তারই ধারাবাহিকতায় বানিয়াশান্তা যৌন পল্লী নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। 

বৃদ্ধ বয়সে যাওয়ার কোন যায়গা না থাকায় সরকারের কাছে পুনঃবাসনের সাথে সাথে তাদেন জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের দাবী জানান এ পল্লীর  যৌন কর্মীরা।

উন্নয়ন সংস্থা সিএসএস এই অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে ব্রোথেল ভিক্তিক যৌন কর্মী ও পরিবহন শ্রমিকদের এইচ আইভি/এইডস এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধমুলক ব্যবস্থা সম্পর্কে কাজ করে থাকে বলেও জানা যায়।

নুন্যতম মৌলিক চাহিদা মিটিয়ে নিরাপদে জীবন পার করতে সরকারের সহযোগিতা চায় বানিয়াশান্তা যৌন পল্লির বাসিন্ধারা।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]