#জাতীয় নির্বাচনে প্রবাসীদের অংশগ্রহণ এখন সময়ের দাবি: ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। #শুধু ভোটাধিকার নয়, প্রবাসীদের আরও সুবিধা দিতে হবে: চৌধুরী হাফিজুর রহমান। #প্রবাসীরা উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করে যাচ্ছেন: মায়েদুল ইসলাম তালুকদার।
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২৩, ১০:৫৭ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
আমাদের দেশে তাত্ত্বিকভাবে পোস্টাল ব্যালটের সুযোগ আছে কিন্তু বাস্তবে তা খুব একটা কার্যকর করা হয়নি। আমাদের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে রেমিটেন্স। এইরকম একটা পরিস্থিতির মধ্যেও আমরা কিন্তু তাদের জন্য ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ এখন পর্যন্ত কার্যকর করতে পারিনি। বর্তমান চেলেঞ্জিং প্রেক্ষাপটে প্রবাসীদের শুধু ভোটাধিকার নয়, আরও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দিতে হবে যারা তারা আরও আগ্রহী হয় দেশের প্রতি তাদের দায়িত্ব সম্পূর্ণরূপে পালন করতে। যেহেতু আমাদের বাংলাদেশ অলরেডি ডিজিটাইজড হয়ে গেছে সুতরাং প্রবাসীদের যার যার নিজের দেশে বসে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা এখন কঠিন কিছু না।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৯৫৯তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক, জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, ব্যারিস্টার, লিংকনস ইন লন্ডন (পাবলিক এক্সেস) ১২ ওল্ড স্কয়ার চেম্বার, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা চৌধুরী হাফিজুর রহমান, জার্মান আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা, বাংলাদেশ কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মায়েদুল ইসলাম তালুকদার বাবুল। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভোরের পাতার বিশেষ প্রতিনিধি উৎপল দাস।
ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, আমাদের দেশে তাত্ত্বিকভাবে পোস্টাল ব্যালটের সুযোগ আছে কিন্তু বাস্তবে তা খুব একটা কার্যকর করা হয়নি। আমাদের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে রেমিটেন্স। এইরকম একটা পরিস্থিতির মধ্যেও আমরা কিন্তু তাদের জন্য ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ এখন পর্যন্ত কার্যকর করতে পারিনি। আমাদের প্রবাসী বাংলাদেশী যারা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তাদের অনেক দিনের দাবি নিজ দেশে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন। এটা নিয়ে অনেক আগে থেকে আলোচনা শুরু হলেও আজ ২০২৩ সাল অব্দি এটা নিয়ে কোন সুরাহা হয়নি। আমরা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হয়ে বলতে পারছি না যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে এই প্রক্রিয়াটি কার্যকর হবে। আমি ভোরের পাতা কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি এই রকম একটি জন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি আমাদের সামনে তুলে আনছেন বার বার। জাতীয় নির্বাচনে প্রবাসীদের অংশগ্রহণ এখন সময়ের দাবি। মোজাম্বিকের পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমরাও কিন্তু আমাদের সংসদে প্রবাসীদের জন্য ৬-৭টি আসন সংরক্ষণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। দ্বাদশ নির্বাচন হওয়ার এখনো ১১ মাসের মতো সময় বাকী আছে। প্রয়োজনে ইভিএম বা অন্যান্য আধুনিক পদ্ধতির আশ্রয় নিয়ে এটা নিশ্চিত করতে হবে।
চৌধুরী হাফিজুর রহমান বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন করতে হলে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রবাসীদের দেশের প্রতি আরও জড়িত করতে হবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুও কিন্তু প্রবাসীবান্ধব ছিলেন। প্রবাসীদের এইযে ডুয়েল নাগরিকত্ব সুবিধা এটাও কিন্তু তিনিই সুযোগ করে দিয়ে গিয়েছিলেন। আমি মনে করি বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও জননেত্রী শেখ হাসিনার ভিসন ২০৪১ এবং স্মার্ট বাংলাদেশে যে নতুন ভিসন আছে সেটার সাথে প্রবাসীরা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। বর্তমান চেলেঞ্জিং প্রেক্ষাপটে প্রবাসীদের শুধু ভোটাধিকার নয়, আরও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দিতে হবে যারা তারা আরও আগ্রহী হয় দেশের প্রতি তাদের দায়িত্ব সম্পূর্ণরূপে পালন করতে। এইগুলো করতে পারলে আমাদের জননেত্রী শেখ হাসিনার যে ভিসন আছে সেটা আরও তরান্বিত হবে। যেহেতু আমাদের বাংলাদেশ অলরেডি ডিজিটাইজড হয়ে গেছে সুতরাং প্রবাসীদের যার যার নিজের দেশে বসে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা এখন কঠিন কিছু না।
মায়েদুল ইসলাম তালুকদার বাবুল বলেন, ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী এক কোটি পঞ্চাশ লক্ষ ভোটারের ভিতর ১ কোটি ২০ লক্ষ প্রবাসী যোগ্য ভোট দেওয়ার জন্য। এইযে ১ কোটি ৫০ লক্ষ ভোট দেওয়ার যোগ্য প্রবাসীরা আছেন তারা তাদের রক্তে অর্জিত রেমিটেন্স প্রতিনিয়ত দেশে পাঠাচ্ছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিশ্বের ১৫৭টি দেশে অবস্থান করা প্রায় ১ কোটি প্রবাসী ভোট দিতে পারেননি। প্রায় ২০ বছর আগে ১৯৯৮ সালে উচ্চ আদালত ঘোষণা দিয়েছিলেন, প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার অধিকার সংবিধানে সংরক্ষিত। এরপর ২০০৮ ও ২০১৪ সালে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিলেও তা নানা কারণে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। অনেক বছর ধরে প্রবাসীদের ভোটাধিকারের দাবি বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন করছেন। নির্বাচন কমিশন যেমন নির্বাচনের সময় বাড়তি জনবল নিয়োগ করে ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও ভোট গ্রহণ কার্যক্রম সম্পন্ন করে, তেমনি বিদেশী দূতাবাসে নির্বাচনের আগে ভোটার নিবন্ধন ও ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কাজ করতে পারে বিদেশে অবস্থিত দূতাবাসগুলো। প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি তারা নিজ দেশে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন। দেশের নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হলে প্রবাসীদের দীর্ঘ দিনের প্রাণের দাবি অবশেষে বাস্তবায়ন হবে।