কারাগার বর্তমান সময়ে আলোচিত এক স্থানের নাম। যেখানে অপরাধীরা আত্মশুদ্ধির পথে চলার কথা, সেখানে বসেই চলছে শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, দাগী অপরাধীদের নানা ধরণের অপরামূলক কর্মকাণ্ড। তবে কারাগারকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্দেশে সুশৃঙ্খল এবং বন্দি-কয়েদীদের আত্মশুদ্ধির পথে আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে কারা অধিদপ্তর। গত বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) সকাল ১০ টা থেকে প্রায় ২৬ মিনিটের একান্ত আলাপচারিতায় ভোরের পাতাকে এ কথা বলেন কারা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেঃ জেনাঃ এ এস এম আনিসুল হক। কারা মহাপরিশর্দকের সঙ্গে আলাপচারিতার চুম্বক অংশ নিয়ে আজকের এ প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন ভোরের পাতার বিশেষ প্রতিনিধি উৎপল দাস।
শুরুতেই আইজি প্রিজন ব্রিগেঃ জেনাঃ এ এস এম আনিসুল হক বলেন, আমি দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর একজন গর্বিত সদস্য। দেশের সেবা করার জন্যই সেনাবাহিনী থেকে সরকার প্রেষণে আমাকে কারা মহাপরিদর্শকের দায়িত্ব দিয়েছে। আমি সততা এবং নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছি। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশের সব কারাগারগুলোতে গুণগত পরিবর্তন হয়েছে। বিশেষ করে ৬৮ টি কারাগারকে সরাসরি মনিটরিং করার জন্য ইতিমধ্যেই কাজ শুরু হয়েছে। প্রতিটি বন্দী ও কয়েদী কখন কি করছেন, তা কারা মহাপরিদর্শক হিসাবেই তা দেখতে পাচ্ছি। আমাদের আইসিটি সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ইতিমধ্যেই ২৮টি জেলাকে পরিপূর্ণভাবে সিসিটিভির আওতায় আনতে পেরেছে। এছাড়া সিলেটে ৪টি জেলখানায় এ কাজ চলমান রয়েছে। কারাগারে বসে কেউ ষড়যন্ত্র করলেও সাথে সাথেই আমরা ব্যবস্থা নিতে পারবো, আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যেই এ কাজ শেষ হবে।
কথা প্রসঙ্গে কারা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেঃ জেনাঃ এ এস এম আনিসুল হক ভোরের পাতাকে বলেন, দেখুন বাইরে থেকে অনেক কিছুই বলা যায়। কিন্তু আমি নিজেও যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লুসিয়ানা অঙ্গরাজ্যের একটি কারাগার পরিদর্শন শেষে বের হয়ে আসছিলাম; তখনো কতিপয় বন্দিরা চিৎকার করে বলছিল, তারা কারাগারে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। প্রকৃত অর্থে সেখানে উপস্থিত থাকা আরো অনেক দেশের কারা কর্মকর্তারা ছিলেন। তারা পরবর্তীতে জানান, সকল সুযোগ সুবিধা পাওয়ার পরও কিছু মানুষ এসব কথা বলবেই। বাংলাদেশের সব কারাগারেই জেল কোড অনুযায়ী প্রতিটি বন্দি ও কয়েদীদের খাবার, পোশাক, চিকৎসা থেকে শুরু করে সব সুযোগ সুবিধা দেয়া হচ্ছে।
ইতিমধ্যেই কারাগারে বন্দি এবং কয়েদীদের আত্মশুদ্ধির জন্য মনন চর্চা কেন্দ্র, খেলাধুলার জায়গা, সাংস্কৃতিক বিকাশ কেন্দ্র, পাঠাগারসহ নানা ইতিবাচক কাজ চলমান রয়েছে। বন্দিরা যেন নিয়মিত স্বজনদের সাথে সাক্ষাৎ ও কথা বলতে পারেন, সেটিও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তবে জেল কোড মেনেই সেগুলো করা হচ্ছে। নিয়মের বাইরে গিয়ে কিছু করার সুযোগ আমাদের হাতে নেই।
কারা কর্মকর্তাদের মধ্যে ডেপুটি জেলার (বিসিএস নন ক্যাডার) হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন তাদেরকে প্রজাতন্ত্রের ১১তম গ্রেড থেকে ৯ম গ্রেডে আনার জন্য ইতিমধ্যেই সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর চৌকষ কর্মকর্তা কারা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেঃ জেনাঃ এ এস এম আনিসুল হক। তিনি আরো বলেন, একজন কারারক্ষীও যেন চাকরি জীবনের শেষে অফিসার হয়ে অর্থাৎ পদোন্নতি পেয়ে ডেপুটি জেলার হতে পারেন, সেটির জন্যও কাজ চালাচ্ছেন।
কারা কর্মকর্তাদের বদলির প্রসঙ্গে টেনে কারা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেঃ জেনাঃ এ এস এম আনিসুল হক ভোরের পাতাকে বলেন, এটা আমাদের রুটিন কাজ। তারপরও অনেক দিন কোনো কর্মকর্তা এক জায়গায় থাকলে তিনি বা তারা একটি শুভ অথবা অশুভ সিন্ডিকেট দ্বারা আবর্তিত হয়ে যেতে পারেন। সেই দিক বিবেচনায় নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরামর্শেই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বদলি করা হয়েছে। কারা অধিদপ্তরসহ জেলা কারাগারগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ পদে আরো বদলি ধীরে ধীরে করা হবে বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।
দুইটা কফি শেষ করতে করতে এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, আমি আমার দায়িত্ব সততা ও নিষ্ঠার সাথে করে যাচ্ছি এবং যতক্ষণ আছি তাই করে যাবো। শুধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশেই কারাগারের ‘রাখিব নিরাপদ, দেখাব আলোর পথ' বাস্তবায়নের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে সবার সহযোগিতাও কামনা করেন তিনি।
উল্লেখ্য, বিএ-৪২৩৪, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এস এম আনিসুল হক, এসজিপি, বিজিবিএম, পিবিজিএম, এনডিসি, পিএসসি, ১৯৭১ সালের ০১ ডিসেম্বর জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৯১ সালের ২০ ডিসেম্বর তারিখে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। তাঁর কার্যকালে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন নিয়োগসহ আর্মড ফোর্সেস ডিভিশন, স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি কারা মহাপরিদর্শক হিসেবে যোগদানের পূর্বে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্ (বিইউপি), মিরপুর সেনানিবাসে সিকিউরিটি এন্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ বিভাগের ডিন হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ১০ অক্টোবর ২০২১ তারিখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে কারা মহাপরিদর্শক হিসেবে যোগদান করেন। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আনিস ১৯৯১ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক ডিগ্রী, ২০০৭ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড এন্ড স্টাফ কলেজ হতে মাস্টার্স অব ডিফেন্স স্টাডিজ এবং ২০২০ সালে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্ হতে মাস্টার্স অব সোশাল সাইন্স ইন সিকিউরিটি এন্ড ডেভেলপমেন্ট ডিগ্রী অর্জন করেন।
তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সিয়েরালিওন ও সুদান এ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সরকারি ও ব্যক্তিগত সফরে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ আফ্রিকা, সিঙ্গাপুর, চীন, জাপান, ফিলিপাইন, ভারত, ফ্রান্স, বুলগেরিয়া, জার্মানী, মিয়ানমার, তুরস্ক, মিশর, সৌদি আরব ও মালয়েশিয়া গমণ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দুই কন্যা সন্তানের জনক। তিনি ১২ অক্টোবর ২০২১ থেকে কারা মহাপরিদর্শক পদে দায়িত্ব পালন করছেন।