সাতক্ষীরার শ্যামনগরে হত্যা মামলার আসামীর ভয়ে এলাকাছাড়া বাদি ও স্বাক্ষীরা। আর পালিয়ে থাকা অবস্থায় ঘেরের মাছ লুটসহ নানান ভাবে হয়রানি শিকার তারা। শনিবার (২১ জানুয়ারি) সকালে সাংবাদিকদের এসব অভিযোগ জানান মামলার বাদী ও স্বাক্ষীরা।
পিতা হত্যা মামলার সাক্ষী শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা গ্রামের মাওলানা আসাদুল্লাহ গালিবের ছেলে এবিএম মজিবুল্লাহ জানান, আমরা দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার বাসিন্দা। দীর্ঘদিন ধরে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছি। বিগত ১০ বছর পার্শ্বেমারী গ্রামের মৃত ওয়াজেদ আলীর জোয়াদ্দারের পুত্র রবিউল জোয়াদ্দারের নেতৃত্বে সেখানে গড়ে উঠেছে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী রবিউল জোয়াদ্দারের নেতৃত্বে এলাকায় অসহায় নিরিহ মানুষের সম্পত্তি দখল, মৎস্যঘের লুটপাট, টাকা পায়সা ছিনিয়ে নেওয়াসহ নানা অপকর্ম শুরু করে। আর এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করলেই তাকে দিতে হয় প্রাণ।
তিনি বলেন, গাবুরায় আল হেরা মৎস্য প্রকল্প নামে একটি মৎস্যঘের পরিচালনা করতেন আমার পিতা মাওলানা আসাদুল্লাহিল গালিব। ঘেরটি দেখাশোনা করতেন একই এলাকার আকিজ উদ্দীন। ২০০৯ সালে ওই ঘেরটি রবিউলের নেতৃত্বে দখলের চেষ্টা করলে আকিজ উদ্দীন বাধা দেয় এ সময় কানা মান্নান ও রবিউল জোয়াদ্দারসহ তাদের সহযোগিরা আকিজ উদ্দীনকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে।
মজিবুল্লাহ বলেন, এঘটনায় আকিজ উদ্দীনের ছেলে নজরুল ইসলাম একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। উক্ত মামলার ১নং স্বাক্ষী ছিলেন আমার বাবা মাওলানা আসাদুল্লাহিল গালিব। মামলা তুলে নিতে বাদী নজরুল ইসলামকে পিটিয়ে হাত পা ভেঙে দেয়। এছাড়া আমার পিতাকে স্বাক্ষ্য না দেওয়ার হুমকি প্ৰদৰ্শণ করে। সে সময় আমার পিতা একটি ডিজি করেন। পরবর্তীতে ২০১৩ সালের ৪ নভেম্বর আমার পিতাকে প্রকাশ্যে হত্যা করে তারা।
তিনি বলেন, আমার বাবার হত্যা মামলার মামলার বাদি আমার ফুফাতো ভাই মোহাম্মদ এবাদত হোসেন। আমি এই মামলার স্বাক্ষী। বর্তমানে এসব হত্যা মামলায় রবিউল জোয়াদ্দার জামিন নিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। আমাদেরকে প্রতিনিয়ত হুমকি ধামকি দিচ্ছে। এ কারণে আমিও আমার ফুফাতো ভাই এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় বর্তমানে রবিউল জোয়াদ্দারের বিরুদ্ধে ২০ টি মামলা রয়েছে। যার মধ্যে ১৩ সালে গালিব হত্যা মামলা, ১৯ সালের আমিরুল হত্যা মামলা, ৯ সালের আকিজ উদ্দীন হত্যা মামলা, ১১ সালের শফি হত্যা মামলা অন্যতম। এছাড়া অস্ত্র লুট ও ডাকাতিসহ সর্বমোট ২০ মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
মজিবুল্লার ঘেরের কর্মচারী খুশু বলেন, মজিবুল্লাহ ভাই এলাকাতে না থাকায় তার ঘের দেখাশোনা করি আমি। গত ১৯ জানুয়ারি ঘরের মাছ ধরে বাজারে নেওয়ার সময় কাকড়ামারি নামক স্থান থেকে রবিউল জোরদার জোরপূর্বক আমার কাছ থেকে মাছগুলো কেড়ে নেয়। যার আনুমানিক মূল্য ৪০ হাজার টাকা। এছাড়া আমি যাতে ঘেরে না থাকি সেজন্য আমাকে হুমকি-ধমকি দেয়।
আকিজ উদ্দীনের ছেলে ও তার মামলার বাদী নজরুল ইসলাম বলেন, ২৫ জানুয়ারি আমার পিতার হত্যা মামলার দিন। মামলার প্রধান আসামি রবিউল জোয়াদ্দার মামলা তুলে নিতে আমাকে বিভিন্ন হুমকিধানকি দিচ্ছে। তার ভয়ে বর্তমানে আমি এলাকাছাড়া। সে শুধু আমাদেরকে হুমকি ধামকি দিচ্ছে না, বরঞ্চ আমাদের ঘের দখল, ঘেরের মাছ লুট ও করছে।
এসব বিষয় জানতে অভিযুক্ত রবিউল জোয়াদ্দারের মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
ওসি নরুল ইসলাম বাদল বলেন, হত্যা মামলার সাক্ষী ও বাদীকে হুমকি দিচ্ছে এমন খবর আমার জানা নেই। তবে এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ দিলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।