পাঁচ দিন বিরতির পর শুক্রবার সকালে গাজীপুরের টঙ্গীতে শুরু হয় দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমা। এ পর্বে অংশ নিতে আসা মুসল্লিতে ভরে যায় পুরো ইজতেমা মাঠ। ইজতেমার জামাতের সঙ্গে জুমার নামাজ পড়তে সকাল থেকে দল বেঁধে ইজতেমা মাঠে আসতে থাকেন রাজধানী ও আশপাশের এলাকার মুসল্লিরা। একপর্যায়ে মাঠে জায়গা না পেয়ে অনেকে যেখানে ছিলেন, সেখানে দাঁড়িয়ে পড়েন। জায়গা না পেয়ে অনেকেই বসে পড়েন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, কামারপাড়া-মন্নুগেট সড়ক ও আশপাশের অলিগলিতে। ইজতেমা চলবে আগামী রোববার পর্যন্ত।
প্রতিবছরের মতো এবারও ইজতেমা মাঠে অংশ নিয়েছেন হাজারো বিদেশি মুসল্লি। তাঁদের পদচারণে মুখর ইজতেমা মাঠ।
তাবলিগ জামাতের বিবদমান বিরোধের কারণে এবারও বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে আলাদাভাবে। প্রথম পক্ষ মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা ইজতেমা পালন করেন ১৩ থেকে ১৫ জানুয়ারি। শুক্রবার শুরু হয়েছে দ্বিতীয় পক্ষ তথা মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারীদের ইজতেমা। তাঁদের ইজতেমা চলবে আগামী রোববার পর্যন্ত।
সাদ কান্ধলভির অনুসারীদের গণমাধ্যম সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা মো. সায়েমের দেওয়া তথ্যমতে, শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিশ্বের ৫০টি দেশ থেকে ৭ হাজার ১৩৫ জন মুসল্লি এসেছেন। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে ভারত, পাকিস্তান, সৌদি আরব, ইসরায়েল, ফিলিস্তিন, মালদ্বীপ, নেপাল, জিবুতিসহ নানা দেশ। মাঠের এক পাশে কামারপাড়া সেতুসংলগ্ন একটি বিশাল কামরায় রাখা হয়েছে তাঁদের। তাঁদের খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে ইজতেমা আয়োজকদের পক্ষ থেকে। তাঁদের সার্বক্ষণিক খেদমতে রাখা হয়েছে বাংলাদেশি মুসল্লি।
সায়েম বলেন, ‘বিদেশি মুসল্লিরা আমাদের মেহমান। আমাদের ইজতেমার সৌন্দর্য। প্রতিবছরের মতো এবারও অসংখ্য বিদেশি মেহমান আসছেন। ইতিমধ্যে আমাদের কামরা ভরে গেছে। সামনের দুই দিনে আরও অসংখ্য বিদেশি মুসল্লি আসবেন।’
কামারপাড়া-মন্নুগেট সড়কসংলগ্ন ইজতেমা মাঠের ২ নম্বর ফটক ধরে ভেতরে ঢুকতেই হাতের ডানে বিশাল জায়গা নিয়ে বিদেশি কামরা। জুমার নামাজের পর বিদেশি কামরাটি ঘুরে সেখানে বিদেশি মুসল্লিদের ভিড় দেখা যায়। জুমার নামাজ পড়ে এসে সবাই দুপুরের খাবারের জন্য বসেছেন নিজ নিজ জায়গায়। এর মধ্যে বাংলাদেশি মুসল্লিরা তাঁদের সরবরাহ করছিলেন খাবার, পানিসহ আনুষঙ্গিক জিনিস।
খাবার গ্রহণ শেষে কামরার বাইরে বসে চা খাচ্ছিলেন কয়েকজন বিদেশি মুসল্লি। কথা হয় পূর্ব আফ্রিকার দেশ জিবুতি থেকে আসা সোলাইমানের সঙ্গে। কথায় কথায় জানা যায়, ১৭ বছর ধরে তাবলিগ জামাতের সঙ্গে যুক্ত তিনি। নিজের দেশ ছাড়াও ঘুরেছেন আশপাশের বেশ কয়েকটি দেশ। এই প্রথম এসেছেন বাংলাদেশে। তাঁর সঙ্গে এসেছে ১১ জনের একটি দল।
সোলাইমান কিছুটা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলছিলেন, ‘আমি ক্লাস নাইন থেকে তাবলিগ জামাত করি। অনেক আগে ইচ্ছা ছিল ইজতেমায় অংশ নেওয়ার। কিন্তু বয়স ও তাবলিগের কিছু নিয়মের কারণে আসতে পারিনি। শেষ পর্যন্ত আসতে পেরে আমি খুব আনন্দিত।’