মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে আড়িয়াল বিলের ভিটায় উৎপাদিত বিখ্যাত মিষ্টি কুমড়া যাচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন হাটবাজারে। এখন কুমড়ার ভরা মৌসুম। বির্স্তীণ আড়িয়াল বিলের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নৌকায় ভোরে অসংখ্য কুমড়া আনা হচ্ছে বিল অঞ্চলের হাটবাজার ও সড়কের পাশে। শ্রমিকরা নৌকা থেকে এসব বিশালাকৃতির কুমড়া মাথায় করে নামাচ্ছেন। পিকআপ ও ট্রাকে এসব কুমড়া সারিসারি ভাবে রাখা হচ্ছে।
রিষ্টপুষ্ট সু-স্বাদু সোনালী রংয়ের এসব কুমড়ার ওজন প্রায় ৭০ থেকে ৮০ কেজির উপর হলেও এ বছর রোগটির প্রভাবে অনেকাংশে বিশালকৃতির কুমড়ার ফলন কম হয়েছে। শ্রীনগর উপজেলার শ্যামসিদ্ধি ইউনিয়নের গাদিঘাটের ভাঙ্গার আলাসহ বিভিন্ন স্থানে ভিটা থেকে অসংখ্য কুমড়া মাথায় করে নৌকায় ভরতে দেখা গেছে। গাদিঘাট বিল পাড়ে চলাচলের রাস্তা ভালো না থাকার কারনে কুমড়া শ্রমিকরা মাথায় করে আনছেন। গাদিঘাটের বিখ্যাত সুপরিচিত মিষ্টি কুমড়া যাচ্ছে কারওয়ান বাজার, সাভার, যাত্রাবাড়ি, শ্যামবাজারসহ রাজধানীর অন্যান্য সবজির পাইকারী বাজারে।
তবে ফলন কম হওয়ায় কুমড়া চাষীরা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। শ্বৈতী রোগের আক্রমণে লোকশানের মুখে পড়েছেন তারা। জানা গেছে, পাইকারী দরে কুমড়ার কেজি ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ টাকা করে। এ অঞ্চলের খোলা বাজারে কুমড়ার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৬শত’ হেক্টর জমিতে কুমড়াসহ অন্যান্য সবজির চাষাবাদ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ৫/৬ বছর ধরে কুমড়ার ভিটায় মোজাইক ভাইরাসের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে উঠেছেন স্থানীয়রা। কুমড়ার এ রোগটিকে তারা বলছেন শ্বেতী রোগ। কুমড়া চাষের মধ্যবর্তী সময় ক্ষেতে ভাইরাস রোগটি আক্রমণে ফসলের কাঙ্খিত ফলন হয়নি। রোগটির প্রতিকার না পেয়ে লোকশানের মুখে পড়ছেন। স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, কুমড়া ক্ষেতে মোজাইক ভাইরাস রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য পরামর্শমূলক বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দেওয়া হলেও রোগটি দমনে কর্যকর কোন কীটনাশক নেই।
গাদিঘাটের আমির হোসেন, নাজিমউদ্দিন, লস্করপুরের মো. আক্কাস, সামসুজ্জামান মোল্লাসহ ভুক্তভোগী কুমড়া চাষীরা জানান, শ্বেতী রোগের আক্রমণে বড় সাইজের কুমড়া ফলন ও ওজনে কম হয়েছে। শ্বেতী রোগের হানায় ক্ষেতে অপরিপক্ক অসংখ্য কুমড়াসহ গাছ পঁচে গেছে। কুমড়ার রোগটির প্রতিকার না পাওয়ায় শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা। মো. রুবেল বেপারী নামে এক কৃষক বলেন, এ বছর কুমড়ার ফলন অর্ধেক হয়েছে। ২ লাখ টাকা ব্যায়ে এ ক্ষেতিতে লাখ টাকার বিক্রি হতে পারে। আজ (বৃহস্পতিবার) ভিটা থেকে প্রায় ৫০ মণ পাকা কুমড়া তুলে এনেছি। কুমড়ার ফলন কমের পাশাপাশি এ কাজে শ্রমিক মজুরী, ট্রলার ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ বাদে লাভ নেই। ২০ টাকা কেজি দরে পাইকারের কাছে বিক্রি করছি। বিকালে পাইকার এসে নিয়ে যাবে। আগামী মাসের মধ্যে আড়িয়াল বিলের ভিটার কুমড়া সব তোলা শেষ হয়ে যাবে।
মোহাম্মদ আলী, মো. বাবু, রফিক জানান, ৪/৫ টাকা লাভে ঢাকার বিভিন্ন পাইকারী বাজারে এসব কুমড়া বিক্রি করেন তারা। কুমড়ার পাশাপাশি আড়িয়াল বিলে কৃষকের উৎপাদিত উচ্ছে, ফুলকপিসহ শীতকালীন নানা ধরনের শাক-সবজি সংগ্রহ করে রাজধানীতে বিক্রি করছেন।
শ্যামসিদ্ধি ইউনিয়নের গাদিঘাট ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাহিনুর আমল জানিয়েছেন, মোজাইক ভাইরাস দমনে এখনও সুনিদিষ্ট কীটনাশক আসেনি। লিফ হপার বা ছোট আকৃতির সাদামাছি, জাব, জেসিড পোকা এ রোগের অন্যতম বাহক। আমরা রোগটির প্রতিকারের জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।