প্রকাশ: শুক্রবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২৩, ১১:৪৮ এএম | অনলাইন সংস্করণ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার দেশে বিরাজমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করে বাংলাদেশকে বিশ্ব সভায় একটি উন্নত ও শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে বদ্ধপরিকর।
শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) ‘আন্তর্জাতিক হিন্দু সম্মেলন-২০২৩’ উপলক্ষ্যে দেয়া এক বাণীতে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদ’ আয়োজিত ‘আন্তর্জাতিক হিন্দু সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জেনে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত। এ উপলক্ষ্যে তিনি দেশের সকল সনাতম ধর্মাবলম্বীদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
তিনি বলেন, আবহমান কাল ধরে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে সকল ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষের নিজ নিজ ধর্ম পালনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছিলেন। তার ধারাবাহিকতায় বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’ এ আপ্তবাক্য ধারণ করে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষ যার যার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করে যাচ্ছেন। সরকার দেশে বিরাজমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করে বাংলাদেশকে বিশ্ব সভায় একটি উন্নত ও শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে বদ্ধপরিকর।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামাত দেশে ধর্মের নামে বিভেদ-দ্বন্দ সৃষ্টি করে। ১৯৯১-১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙার ধুয়া তুলে ২৮ দিন সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালায়। তখন ৩৫২টি মন্দির পুড়িয়ে দেয়া হয়। ঢাকার মন্দিরগুলোও ভেঙে দেয়া হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকার সমগ্র বাংলাদেশে মন্দির নির্মাণ করে দেয়। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের জায়গা নিয়ে একটা সমস্যা ছিল, সরকার তার সমাধান করে দিয়েছে। ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির উন্নয়নের কাজ চলমান রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘হিন্দু সম্প্রদায়ের কল্যাণে আমরা বহু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। আমরা অর্পিত সম্পত্তি আইন বাতিল করেছি। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সম্পত্তির উত্তরাধিকারীদের সম্পত্তি মালিকানা দেয়ার ক্ষেত্রে হেবা আইনের নিয়ম মাফিক নামমাত্র অর্থের বিনিময়ে সম্পত্তি হস্তান্তর করার সমান সুযোগ দেয়া হয়েছে। আমরা হিন্দু বিবাহ রেজিস্ট্রি আইন; শত্রু সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন করেছি। প্রতিটি উপজেলায় মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম চলছে। সারাদেশে ৭ হাজার ৪০০টি মন্দিরভিত্তিক শিক্ষাকেন্দ্রের মাধ্যমে প্রতিবছর ২ লক্ষ ২ হাজার জনকে প্রাক-প্রাথমিক, বয়স্ক ও ধর্মীয় গ্রন্থ গীতা শিক্ষা প্রদান করা হচ্ছে।’
এ প্রকল্পের আওতায় ৭ হাজার ৭২২ জনকে কর্মসংস্থানের ব্যাবস্থা করা হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট আইন প্রণয়ন করেছি। এ ট্রাস্টের তহবিল ২১ কোটি টাকা হতে বাড়িয়ে ১০০ কোটি টাকা করে দিয়েছি। আমরাই প্রথম দেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান উন্নয়নে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিই। ৪১ হাজার ২১৬ জন পুরোহিত/সেবাইতদের দক্ষতা বৃদ্ধিকরণে ৫০ কোটি টাকার প্রকল্প চলমান রয়েছে। সারাদেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ২ হাজার ৩৫১টি মন্দির ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সংস্কার ও উন্নয়নের কাজ চলছে। এ লক্ষ্যে আমরা ২৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছি। ১ হাজার ৬০০টি মন্দির ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সংস্কার ও উন্নয়নের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় তীর্থ ভ্রমণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতি বৎসর শারদীয় দূর্গাপূজায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে বিশেষ অর্থ প্রদান করা হয়’।
প্রধানমন্ত্রী মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রেখে ঐক্যবদ্ধভাবে ২০৪১ সালের মধ্যে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার আহবান জানান।
তিনি বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদ আয়োজিত ‘আন্তর্জাতিক হিন্দু সম্মেলন-২০২৩’ এর সার্বিক সাফল্য কামনা করেন। খবর: বাসস