প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ৯:৩৯ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে প্রায় ৩৫ বছর পর কুড়িগ্রামে অনুষ্ঠিত হলো বিলুপ্ত প্রায় ঐতিহ্যবাহী মই খেলা। মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) জেলার সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের সোনালী কুটি গ্রামে এই খেলা অনুষ্ঠিত হয়। খেলা দেখতে দুপুরের পর থেকে হাজার হাজার নারী পুরুষ ও শিশুরা সোনালী কুটি গ্রামে ভিড় করে।
মঙ্গলবার ঘোগাদহ ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায় হারিয়ে যাওয়া এ খেলা দেখতে জেলার দুর-দুরান্ত থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু কিশোর খেলা স্থলের দিকে ছুটছেন। কেউ রিকশায়, কেউ মোটরসাইকেলে আবার কেউবা পায়ে হেঁটে সোনালী কুটি গ্রামের দিকে । জমির আল ধরেও নারী পুরুষ ও শিশুদের খেলার মাঠের দিকে যেতে দেখা গেছে।
আয়োজকরা জানান,কয়েক দশক আগে প্রতিবছর বাংলা পৌষ মাসের শেষের দিকে কিংবা মাঘ মাসের শুরুতে যখন জমি ফাঁকা হতো তখন এই মই খেলা নিয়মিত অনুষ্ঠিত হতো। কিন্তু কয়েক দশক ধরে এই অঞ্চলে আর এই খেলা হয় না। এলাকার প্রবীণদের মুখে এই মই খেলার গল্প শুনতে শুনতে সোনালী কুটি গ্রামের যুবকরা পুরনো ঐতিহ্য বর্তমান প্রজন্মকে উপলব্ধি করাতে গ্রামের ফাঁকা কৃষি জমিতে ‘সোনালী কুটি যুব সমাজ’ নামে এই মই খেলার আয়োজন করে।
খেলায় মোট ছয়টি দল অংশ নেয়। জামালপুর জেলা থেকে আগত ছয়টি দল তাদের গরু ও মই সহ খেলায় অংশগ্রহন করে । ফসল তুলে নেওয়া ফাঁকা কৃষি জমিতে ৩২০ গজ দূরত্বে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে মই সমেত গরু নিয়ে পৌঁছাতে হয়। জমিতে মই দেওয়ার মতো করে এ দৌড় প্রতিযোগিতায় মইয়ে চড়ে আগে পৌঁছাতে পারলেই সেই দল বিজয়ী । দুই পর্বের খেলায় প্রথম হন হাবু ব্যাপারীর দল। দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন মোজাহারুল ইসলামের দল এবং তৃতীয় স্থান অধিকার করে রতন ব্যাপারীর দল। মই খেলায় বিজয়ীদেয় জন্য ১ম পুরস্কার হিসেবে দেয়া হয় ১টি গরু। ২য় ও ৩য় পুরস্কার দেয়া হয় ১টি করে খাসি। আর চতুর্থ স্থান অধিকারকারীকে দেওয়া হয় প্রাইজ মানি। খেলা শেষে সন্ধ্যার আগেই বিজয়ীদের মাঝে পুরুস্কার তুলে দেওয়া হয়।
৩৫ বছর পর মই খেলা উপভোগ করতে পেরে খুশি স্থানীয়রাসহ জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যাওয়া দর্শনার্থীরা। স্থানীয় স্কুল শিক্ষার্থী কামাল বলেন,' আমি ভাবতে পারিনি এই খেলা আমি দেখতে পারবো। আমি আমার বন্ধুরা সহ এই খেলা দেখতে এসেছি। আমি খুব খুশি। ধন্যবাদ আয়োজকদের।
ঘোগাদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেকের সভাপতিত্বে খেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমান উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু।
ঘোগাদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মালেক বলেন,' দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে আমাদের এ ঐতিহ্যবাহী খেলাটি বন্ধ ছিলো। এলাকার মানুষদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে আমরা এই ঐতিহ্যবাহী খেলার আয়োজন করেছি।’