শিক্ষা মন্ত্রী ড. দীপু মনি বলেছেন সারাদেশে আজকে বই উৎসব হচ্ছে। সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশ একটি অণ্যন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে যেখানে বছরের প্রথম দিন একটি বই উৎসব হয়। যেখানে আমাদের কোটি কোটি শিক্ষার্থী এই বই উৎসবে অংশগ্রহন করে।
মন্ত্রী বলেন, বিগত ২০১০ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিনামূল্য যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করেছি তার সংখ্যা হলো ৪৩৪ কোটি ৪৫ লক্ষ ৮০ হাজার ২১১ কপি। এটি পৃথিবীর যেকোনো জায়গার জন্য অচিন্তনীয় ব্যাপার। তার মধ্য দিয়ে আমাদের শিক্ষার্থীদের ঝড়ে পড়ার হার রোধ করতে পেরেছি। কারণ, বাবা-মা’র ওপর বই কেনার ভাড়টি থাকছে না। এই নতুন বই বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীরা হাতে পায়। নূতন বইয়ের ঘামের কথা সবাই বলেছেন। আমাদের সময় তিন, চার, ছয় মাসও অপেক্ষা করেছি নতুন বইয়ের জন্য। অনেক সময় পুরনো বই পড়ে আমাদের পার করতে হয়েছে। শিক্ষার্থী ভাই-বোনেরা তোমরা যেমন করে উৎসবের মধ্য দিয়ে বছরের প্রথম দিন নূতন বই নিয়ে যাচ্ছে তা দেখে মনে হচ্ছিল যদি আজকে তোমাদের মতো হতে পারতাম।
রবিবার (০১ জানুয়ারী) দুপুরে গাজীপুরের কাপাসিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে পাঠ্যপুস্তক উৎসব অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য শিক্ষা মন্ত্রী ড. দীপু মনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ আজকে সারা বিশে^র কাছে রোল মডেল বঙ্গবন্ধুন কণ্যার নেতৃত্বে। অনেক প্রতিবন্ধকতা, প্রতিকুলতা, সীমাবদ্ধতা। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। স্বপ্ন দেখি স্মার্ট বাংলাদেশের। সেই স্মার্ট বাংলাদেশের নাগরিক হবে স্মার্ট নাগরিক। সেই বাংলাদেশের সরকার হবে স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সমাজ। এইসব স্মার্ট গড়বার জন্য যেটি দরকার সেটি হচ্ছে স্মার্ট শিক্ষা। আমরা নূতন শিক্ষাক্রম তৈরির মাধ্যমে সেদিকেই আমরা এগিয়ে চলেছি। সপ্তম শ্রেনীর যে বইগুলো দেওয়া হয়েছে সেগুলো নূতন শিক্ষাক্রমের। নূতন শিক্ষাক্রম আমরা এমনভাবে তৈরি করেছি সমস্ত শিক্ষক, শিক্ষার্থী, শিক্ষাবিদ, বিশেষজ্ঞ সকলের পরামর্শ নিয়ে এমন শিক্ষাক্রম তৈরি করেছি যেখানে শিক্ষা হবে আনন্দময়, শিক্ষায় পরীক্ষাভীতিতে আমাদের শিক্ষার্থীরা সারাদিন ভীত থাকবে না। আমাদের শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞানমনস্ক হবে। প্রযুক্তিবান্ধব শুধু নয়, প্রযুক্তি ব্যবহারে ও উদ্ভাবনে দক্ষ হবে। তারা মানবিক ও সৃজনশীল মানুষ হবে। আমাদের যে মূল্যবোধ আছে সে মূল্যবোধ নিয়ে বড় হতে হবে। আমরা দক্ষ, যোগ্য, মানবিক ও সৃজনশীল মানুষ হবো। আমরা সত্যিকারের সোনার মানুষ হবো যেন সোনার বাংলা গড়তে পারি। আজকে যদি তোমরা সচেতন হও তাহলে নিশ্চয় তোমাদের ভবিষ্যত আরো অনেক অনেক বেশি সুন্দর হবে ইনশাল্লাহ।
মন্ত্রী বলেন, কাপাসিয়া উপজেলায় অনেকগুলো অর্জন রয়েছে। শতভাগ সফল স্কাউটিং উপজেলা। সারা বিশ^ তার মধ্যে মাতৃ মৃত্যুরোধে বাংলাদেশে সাফল্য দেখিয়েছে তা নয়, সারা বিশ^ যে মডেল নিয়ে কথা বলছে মাতৃ মৃত্যুরোধে সেটিতে সবার আগে কাপাসিয়া মডেলের কথা বলছে। আমরা গর্বিত, সঠিক নেতৃত্ব থাকলে যে সব জায়গায় যেমন স্থানীয় পর্যায় থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ে যে সাফল্য অর্জন সম্ভব আজকে এটি তারা প্রমাণ করে। আমরা আজকে সারাদেষ একজন রাষ্ট্র নায়কের নেতৃত্বে এই দেশকে বিশ^সভায় মাথা তুলে দাঁডিয়েছে। শিক্ষায়, স্বাস্থ্য, ডোযোগ ব্যবস্থায়, কৃষিতে, খাদ্য, শিল্প উৎপাদনে এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দ্রুত গতিতে, অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলছে।
সকাল থেকেই মাঠজুড়ে হাজারো শিক্ষার্থীর সমাগম। সবার হাতে নতুন বই। আনন্দে উদ্বেলিত তারা। কখনো হর্ষধ্বনি দিয়ে উঠছিল। কখনো একসঙ্গে বই উঁচু করে দেখাচ্ছিল। নতুন বছরে নতুন ক্লাসের আনন্দ। পৌষের সকালে শীতের কামড় তাদের গায়েই লাগেনি, ঝরে গেছে উষ্ণ আনন্দের ছটায়। ওরা হারিয়ে যায় রঙিন বইয়ের পাতায়, পরস্পরের সঙ্গে গল্প আর উল্লাসে। তার ওপর নতুন বই পেয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত শিশুরা। তাদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে ওঠে পাঠ্যপুস্তক উৎসব। এ যেন এক অন্য রকম উৎসব। অনুষ্ঠানস্থলে শিশুদের আনন্দ-উল্লাস ছড়িয়ে পড়ে তাদের অভিভাবকদের মাঝেও। নতুন বছরের প্রথম দিনে এমনই দৃশ্য ছিল গাজীপুরের কাপাসিয়া সরকারি পাইলট স্কুল মাঠে। খালি হাতে বিদ্যালয়ে গিয়ে নতুন বই নিয়ে হাসিমুখে বাড়ি ফিরেছে শিক্ষার্থীরা।
আফরা হোসাইন মিথি ৭ম শ্রণীতে উঠেছে। নতুন বই হাতে একের পর এক পৃষ্ঠা উল্টে দেখছিল সে মুগ্ধতার সঙ্গে। কাপাসিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের এ শিক্ষার্থীর নাম জিজ্ঞেস করতেই কিছুটা লজ্জা পেয়ে বইয়ের ভাঁজে মুখ লুকিয়ে জানায় তার নাম। পাশেই বসা ইসফা মেজবিন সিফা, নিশাত তাবাচ্ছুম ও তার মা শিরিন শীলা। তিনি জানান, নতুন বইয়ের জন্য এখানে আসবে বলে রাত থেকেই ওর কতরকম প্রস্তুতি যে চলছিল। আগ্রহের আতিশয্যে ভোর না হতেই ঘুম ভেঙে যায় নিশাতের।
৮ম শ্রেণীর প্রীতি সরকার। পাশের চেয়ারে তার মা পার্বতী সরকার। প্রীতি পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় আঁকা ছবিগুলো মনোযোগ দিয়ে দেখছে। মা পার্বতী সরকারের অনুভূতি জানতে চাইলে বলেন, অভিভাবক হিসেবে আনন্দটা ভাষায় প্রকাশের মতো নয়। ভীষণ ভালো লাগছে। তিনি আরও বলেন, বছরের প্রথম দিনই বই হাতে পেলে একজন শিক্ষার্থী কতটা খুশি হয়, তা না দেখলে কেউ অনুভব করতে পারবে না।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি ) আনিসুর রহমান জানান, জেলায় এ বছর ১ম থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত ৬ লাখ ১২ হাজার ৩৫১ জন শিক্ষার্থীর হাতে ২৫ লাখ ৪০ হাজার ২৩৪টি এবং ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত ৬ লাখ ৯২ হাজার ৭৩০ জন শিক্ষার্থীর হাতে মোট ৮৭ লাখ ৭৬ হাজার ৬৮৯টি পাঠ্য পুস্তক বিতরণ করা হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পাঠ্যপুস্তক উৎসবের আয়োজন করে। এর মধ্যে বই উৎসবের প্রথম দিনে কাপাসিয়া উপজেলার ৩১টি স্কুল এবং ৬টি মাদ্রাসার ৬ হাজার শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হয়।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব আবু বকর ছিদ্দীকের সভাপতিত্বে পাঠ্য পুস্তক উৎসব অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের স্থায়ী কমিটির সদস্য সিমিন হোসেন রিমি এমপি, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব কামাল হোসেন, শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের উপ-সচিব ইব্রাহিম ভূঁইয়া স্বপন, গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন মোল্লা, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনিছুর রহমান, কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আমানত হোসেন খান।