প্রকাশ: শুক্রবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২২, ৯:৫১ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
চুয়াডাঙ্গায় প্রচন্ড শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দিনের পর দিন কাজ পাচ্ছেনা খেটে খাওয়া মানুষ। শীত জনিত কারনে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে। হাসপাতালে রোগীদের ভীড়ের কারনে চিকিৎসকরা চিকিৎসা দিতে নাকাল হচ্ছে। হাসপাতালে ভর্তী হওয়া রোগীদের অভিযোগ হাসপাতাল হতে ঔষুধ সরবরাহ না পেয়ে তাদের বাইরে থেকে তা কিনে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা শহরের হাসান চত্বরের পূর্বপাশে শুক্রবার সকালে কাজের জন্য দাঁড়িয়েছিলো প্রায় ৫০ জন খেটে খাওয়া মানুষ। তাদের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মোমিনপুর ইউনিয়নের কাঁথুলী গ্রামের মরহুম মকছেদের ছেলে তোয়াক্কেল (৫২), একই উপজেলার শংকরচন্দ্র ইউনিয়নের হানুড়বারাদী গ্রামের মকছেদ আলী মন্ডলের ছেলে কাদের (৫৫) , ওই গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে মোশারফ (৬১), গাড়াবাড়ীয়া গ্রামের আকবার বিশ্বাসের ছেলে মহি উদ্দিন (৬০) ও আলমডাঙ্গা উপজেলার আঁইলহাস ইউনিয়নের বলেশ্বরপুর গ্রামের মজহার বিশ্বাসের ছেলে ইউসুফ আলী (৭০) সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, শীতের কারনে ৩ থেকে ১৫ দিন কেউ তাদের কাজে নেয়নি। সে কারনে এক রকম না খেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে তাদের দিন কাটছে। তাদের দেখার কেউ নেই।
চুয়াডাঙ্গায় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা থাকায় এ জেলায় প্রচন্ড শীত অনুভূত হচ্ছে। জেলার চলছে শৈত্য প্রবাহ। শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। বাতাসের আর্দ্রতা ৯৭ শতাংশ। এর আগে এদিন সকাল ৬টায় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিলো। ওই সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিলো ৯৭ শতাংশ। গত এক সপ্তাহ থেকে এ জেলায় ক্রমাগত তাপমাত্রা কমছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া থাকায় সূর্যের দেখা মিলছেনা। দিনে শীত কম হলেও রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা কমে হাঁড় কাঁপানো শীত অনূভূত হচ্ছে। এর ফলে জনজীবনে দূর্ভোগ বাড়ছে এবং শীতজনিত ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, ঠান্ডাজ্বর, কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে শীতে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ভর্তী হয়েছে সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের গোলাম হোসেনের ছেলে আব্দুর রশীদ (৪০) , একই গ্রামের তিতুদহ গ্রামের মজিবুলের ছেলে ৩ মাস বয়সী হাকিম ও দামুড়হুদা উপজেলার বাস্তপুর গ্রামের ইব্রাহিমের ছেলে ৬ মাস বয়সী ইসমাইল নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে ভর্তী হয়েছে। চিকিৎসকদের পরামর্শে তারা সপ্তাহখানের ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। তাদেরকে হাসপাতাল থেকে কোন ঔষুধ সরবরাহ করা হচ্ছেনা। সে কারনে তাদের আত্মীয়-স্বজনরা বাইরে থেকে ঔষুধ কিনে এনে চিকিৎসা চালাচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত তিন দিনে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে প্রায় ৩৫০ জন রোগী শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। যা ধারন ক্ষতার চেয়ে প্রায় ১৫ গুন। তাছাড়া হাসপাতালে বহিঃবিভাগে ৩০০ থেকে ৪০০ রোগী প্রতিদিন চিকিৎসা নিচ্ছে। অতিরিক্ত রোগীর চাপে হাসপাতালে চিকিৎক ও সেবিকাদের চিকিৎসা এবং সেবা দিতে নাকাল হতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে হাসপাতাল থেকে রোগীর ঔষুধ সরবরাহ করা হচ্ছেনা। ঔষুধ সঙ্কট রয়েছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবী করছে। চিকিৎসা নিতে আসা ব্যক্তিরা জানিয়েছে যে, বেশীভাগ ঔষুধই তাদের বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। এ কথা সেবিকারাও স্বীকার করেছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট শিশু বিশেজ্ঞ ডা.আসাদুর রহমান মালিক বলেন,শীতের কারনে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। শীত জনিত রোগ নিয়ে হাসপাতালে অনেক রোগী ভর্তী হচ্ছে। শীতে সকলকেই সচেতন থাকতে হবে।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেনীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ রকিবুল হাসান জানান, এ জেলায় দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। কয়েকদিন আগে থেকেই চুয়াডাঙ্গায় ধীরে ধীরে তাপমাত্রা হ্রাস পেতে শুরু করেছে। শৈত্য প্রবাহের কারনে সঙ্গে প্রচন্ড শীত অনুভূত হচ্ছে। এ আবহাওয়া কয়েক অব্যাহত থাকবে।