প্রকাশ: বুধবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২২, ৯:১২ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
আরেফা বেগম ছেংগারচর বাজার থেকে বাসায় ফিরছিলেন। এ সময় পরিচিত কণ্ঠে পেছন থেকে পুরুষ তাকে ডাক দিলেন। পেছনে ফিরতে হঠাৎ এক লোক তার মুখের সামনে একটি কাপড়ের রুমাল উড়ালেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাকে একটি লবনের প্যাকেট হাতে দেয়। এর মধ্যেই তিনি বোধশক্তি হারিয়ে ফেলেন। চক্রের সদস্যদের কথামতো সনিয়া স্বর্ণের বালা, গলার চেইন, কানের দুল ও মোবাইল দিয়ে দেন।
অজ্ঞান পার্টি বা মলম পার্টি কৌশল বদলে এভাবেই প্রতারণা করছে। আর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে ‘মাইন্ড কন্ট্রোল ড্রাগ’। এটি ‘ডেভিলস ব্রেথ’ বা শয়তানের শ্বাস বা স্কোপোলামিন হিসেবেও পরিচিত। প্রতারক চক্রের সদস্যরা এমন ড্রাগ ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের মানসিক অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে ফেলে। ফলে চক্রের সদস্যদের কথা মতো চলতে থাকে ভুক্তভোগীরা। এ সুযোগেই সর্বস্ব হাতিয়ে নেয় চক্রটি। সম্প্রতি মতলব উত্তরের বিভিন্ন রাস্তায় এমন প্রতারণার ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন অনেকে।
বুধবার দুপুরে মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর বাজারের কলেজ রোডে প্রতারক চক্রের এক সদস্য এ কাজ করার সময় জনতা হাতেনাতে তাকে আটক করে। তার সাথে থাকা অন্য সদস্যরা পালিয়ে যান। আটককৃত প্রতারককে মারধর দিয়ে মতলব উত্তর থানায় সোপর্দ করে। আটককৃত প্রতারক তার নাম চঞ্চল বলে জানান। তার বাড়ি ঢাকার ডেমরা এলাকায়।
ভুক্তভোগী এক নারী বলেন, প্রতারক আমাকে ডাক দিলে এগিয়ে যাই, আমার হাতে লবনের পোটলা দেয়। তারপর আমাকে তার কন্ট্রোলে নিয়ে নেয়। আমার আর কোনো বোধ-জ্ঞান ছিল না। এভাবে আমার কাছ থেকে টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নেয়।
জানা যায়, স্কোপোলামিন নামক ওই ওষুধ খাবারের সঙ্গে অথবা শ্বাসের মাধ্যমে মানব দেহে প্রবেশ করে। এতে করে মানুষ তার হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। ফলে দুই বছরের একটি শিশু বাচ্চার মতো আচরণ করে। নিজস্ব কোনো প্রতিক্রিয়া বা জ্ঞান-বুদ্ধি কাজ করে না। আর এ সুযোগে প্রতারকরা সর্বস্ব লুটে নেয়।
স্কোপোলামিন নামক ওষুধ মূলত লিকুয়েড ও শুকনা ধরনের হয়। তাই এটিকে আবার শয়তানের শ্বাস বলা হয়। মূলত এটি ৬ থেকে ১২ ইঞ্চির দূরত্ব থেকে শ্বাসের মাধ্যমে মানব দেহে প্রবেশ করে। যার প্রতিক্রিয়া থাকে প্রায় ১ ঘণ্টা। এ সময়ের মধ্যে ভুক্তভোগীরা সম্পূর্ণভাবে প্রতারকদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। আবার স্কোপোলামিন খাবারের সঙ্গেও খাওয়ানো হয়। খাবারের সঙ্গে মানব দেহে গেলে এটির প্রতিক্রিয়া থাকে প্রায় ৫ থেকে ৭ দিন।
মতলব উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহিউদ্দিন বলেন, আমাদের কাছের এ ধরনের প্রতারণার অভিযোগ আসছে। আমরা এরই মধ্যে এক প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছি। অন্য প্রতারকদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এ ধরনের প্রতারণার আদোপান্ত বের করার চেষ্টা চলছে। এখনই এ বিষয় নিয়ে পুরোপুরি বলা যাচ্ছে না। অভিযান অব্যাহত আছে। পরে বিস্তারিত জানানো যাবে।