প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২২, ২:৫৯ এএম আপডেট: ২৯.১২.২০২২ ৩:০৮ এএম | অনলাইন সংস্করণ
ওকি গাড়িয়াল ভাই, হাঁকাও গাড়ি তুই চিলমারীর বন্দরে, কুড়িগ্রাম জেলার জনপ্রিয় এ ভাওয়াইয়া গানটির সৃষ্টি হয়েছিল এক সময়ের প্রধান যানবাহন গরু-মহিষের গাড়িকে নিয়ে। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে আবহমান গ্রাম বাংলার সেই এতিহ্যবাহী গরু-মহিষের গাড়ি। মাঝে মধ্যে দু একটা মহিষের গাড়ির দেখা গেলেও দেখা মিলেনা গরুর গাড়ির। ফলে ইতিমধ্যে হারিয়ে গেছে গরুর গাড়ি। সম্প্রতি বংশের সম্মান ও বাপ-দাাদার ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে মহিষের গাড়িতে উঠে বিয়ে করে কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলা সদরের চন্দ্রখানা মুসুল্লি পাড়া গ্রামের কৃষক ফজলুল হকের ছেলে উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার উমর ফারুক ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছেন।
একসময় এ জনপদের ঐতিহ্যবাহী গরু-মহিষের গাড়ীতে সরগরম ছিল। ছিল সর্বত্র এসব গাড়ির কদর। বিয়ে কিংবা অন্য কোন উৎসব গরু না হয় মহিষের গাড়ি ছাড়া যেন কল্পনাই করা যেত না। পল্লী এলাকার জনপ্রিয় যানবাহন ছিল গরু-মহিষের গাড়ী। যুগের পরিবর্তনে এ বাহন এখন হারিয়ে যাচ্ছে। এখন এসব বাহন রূপকথার গল্পমাত্র। মাঝে মধ্যে দু-একটি মহিষের গাড়ী চোখে পড়লেও শহরা লে একেবারেই দেখা যায় না। সে কারনে শহরের ছেলে মেয়েরাসহ গ্রামের ছেলে-মেয়েরা গরু-মহিষের গাড়ির শব্দটির সঙ্গে পরিচিত নয়।
উপজেলার পাইকেরছড়া ইউনিয়নের মহিষের গাড়ি চালক (গাড়িয়াল) নজরুল ইসলাম জানান, তার বাপ দাদার পেশা ছিল এটি। এখন তিনি নিজেই দুটি মহিষ পোষেন সাথে গাড়ির পুরোনো টায়ার লাগিয়ে চালান একটি মহিষের গাড়ি। বাঁশ কেনার পাইকারদের বাঁশ পরিবহনের কাজ করেন। মাঝে মাঝে নিজের জমির ফসল আনা নেয়া করেন। বর্তমানে এ উপজেলায় সাতটি মহিষের গাড়ি রয়েছে।
সোনাহাট ডিগ্রী কলেজ অধ্যক্ষ বাবুল আক্তার বলেন, এক সময় প্রত্যেক গ্রামে দেখা যেত এসব গাড়িতে যাতায়াত, যাত্রী পরিবহন, পণ্য আনা নেওয়া। তখন ছিলো মেঠো পথ। এখন আর আগের মতো চোখে পড়ে না খুব একটা। তবে ঘোড়ার গাড়ির দেখা মিলবে চরা লে। এভাবেই হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের ঐতিহ্য।
পাইকেরছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক সরকার বলেন, গরু-মহিষের গাড়ির একটা সুবিধা ছিলো, এতে কোন জ্বালানী লাগে না। ফলে ধোঁয়া হয় না। পরিবেশের কোন ক্ষতিও করে না। এটি পরিবেশবান্ধব একটি বাহন। কিন্তু যুগের পরিবর্তনে আমাদের প্রিয় এ গরু-মহিষের গাড়ির প্রচলন আজ হারিয়ে যাচ্ছে।
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন মন্ডল বলেন, বিভিন্ন পণ্য, ভারী মালামাল ও ফসল পরিবহনের কাজে এ এলাকায় গরু-মহিষের গাড়ির প্রচলন ছিল ব্যাপক। দুই যুগ আগেও গরু-মহিষের গাড়িতে চড়ে বর-বধু যেত। যান্ত্রিক যানবাহন না থাকার ফলে গরু-মহিষের গাড়িই ছিল একমাত্র ভরসা। কালের বিবর্তনে এখন এসব হারিয়ে যাচ্ছে।