কুয়াকাটায় পর্যটকদের রাতের আকর্ষণ ফিস ফ্রাই মার্কেট। কলাপাড়া উপজেলাধীন সাগর কন্যা খ্যাত কুয়াকাটায় দেশ বিদেশ থেকে আসা পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে থাকে। আগত পর্যটকরা সারাদিন ঘোরাঘুরি শেষে সন্ধ্যার পর সৈকতে নামেন প্রশান্তির খোঁজে। কুয়াকাটা সৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে পূর্ব এবং পশ্চিম দিকে দেখা যায় সারি সারি দোকান। দেখে মনে হবে এ যেন নানা প্রজাতির সামুদ্রিক মাছের সমন্বয়ে কোন মাছের বাজার। এছাড়াও কুয়াকাটার সিকদার রিসোর্ট, গ্রেভার ইন, সি-ক্রাউন ইলিশ পার্কসহ কয়েকটি আবাসিক হোটেলে ফিস ফ্রাই পাওয়া যায়।
মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি দোকানে সাজানো রয়েছে টোনা মাছ, কোড়াল, পোঁয়া, লাইট্টা, বগনি, মাইট্যা, তাইড়্যা, ভোল, রূপসা, লাক্কা, রূপচাঁদাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এছাড়াও দেখা যায় বিভিন্ন প্রজাতির জেলিফিশ, শাপলা পাতা, অক্টোপাস, চিংড়ি, কাঁকড়া এবং নাম না জানা বৈচিত্র্যময় সামুদ্রিক প্রাণী। রাতে সৈকতে বসে কাঁকড়া এবং বিভিন্ন ধরনের ফিস ফ্রাই এবং বারবিকিউ এর স্বাদ নিতে দোকান গুলোতে ভীড় জমায় বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকরা। পছন্দের মাছটি কিনে দিলে দোকানিরা চাহিদা অনুযায়ী ফ্রাই অথবা কড়াইয়ে করে বারবিকিউ করে সামনে এনে দেন। প্রয়োজন অনুযায়ী সস, সালাদ, ড্রিংক এমনকি গরম পরোটা দিয়ে আরাম করে বসে ভোজন বিলাস করে থাকেন পর্যটকরা।
ময়মনসিংহ থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক রতœা-শাহবাজ দম্পতি জানান, কুয়াকাটায় যখনই আসি তখনই ফ্রাই খেতে হয় না হলে যেন কিছু একটা মিস করছি এমন মনে হয়। এখানে সামুদ্রিক তাজা মাছ পাওয়া যায়। পরিবারের যার যা পছন্দ সবই পাচ্ছি, বেশ উপভোগ করছি।
ফ্রাই মার্কেটের দোকানী মালেক হাওলাদার জানান, এখানে প্রতিটি চিংড়ি ৫০ থেকে ৫শ, কাঁকড়া ৫০ থেকে ১৫০ টাকা, রূপসা ১০০ থেকে ৫০০, রূপচাঁদা ১০০ থেকে ৫০০ টাকা, স্যালমন ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, কোরাল ৫০০ থেকে ২ হাজার, লাক্কা ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা, লইট্টা, ৩০ থেকে ৫০ টাকা, ইলিশ ১০০ থেকে ৫০০ টাকা, টুনা ২০০ থেকে ১ হাজার, অক্টোপাস ২শ থেকে ৫০০ টাকা, স্কুইট ৫০ থেকে ৫০০ টাকা, বাসপাতা ১০০ থেকে ২০০ টাকা, শাপলাপাতা ৫০ থেকে ১০০ টাকা, সামুদ্রিক রুই ২০০ থেকে ৫০০ টাকা, খটটা ৩০০ থেকে ১ হাজার পর্যন্ত" তবে মৌসুম ভিত্তিক আরো বিভিন্ন মাছের দেখা মিলে সেই সাথে দামেরও কিছুটা কম-বেশী হতে পারে।
জয়নাল মিয়া নামের আরেক দোকানি জানান, পায়রা সেতু খুলে দেওয়ায় এই শীত মৌসুমে পর্যটকদের ভীড় বাড়ছে। তাই এ মৌসুমে আমরা আরো কিছু মাছের সংগ্রহ বাড়িয়েছি। তবে এখনই অনেক পর্যটক আসে সন্ধ্যা নামার পরে। সামুদ্রিক মাছের দামগুলো একটু বেশী তাই দাম একটু বেশি নিতে হচ্ছে। আমরা এখন বেশ খুসি অনেক পর্যটক পাওয়ায়৷ চেষ্টা করছি তাদের পছন্দের সামুদ্রিক মাছগুলোকে খাওয়ানোর।
ট্যুর অপারেটরস এসোসিয়েশন অব কুয়াকাটা(টোয়াক) সদস্য আবুল হোসেন রাজু জানান, কুয়াকাটায় ঘুরতে আসা পর্যটকদের সময় কাটানো ও সামুদ্রিক মাছের বিভিন্ন স্বাদ গ্রহনের অন্যতম জায়গা হলো ফ্রাই মার্কেট। কুয়াকাটায় প্রায় ৫০ টির অধিক দোকান রয়েছে। এখানে পর্যটকরা সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সময় কাটায়, সামুদ্রিক তাজা মাছ পেয়ে পর্যটকরাও বেশ খুসি।
কুয়াকাটা ইলিশ পার্ক'র স্বত্বাধিকারী রুমান ইমতিয়াজ তুষার জানান, মৌসুমের শুরুতেই অনেক পর্যটকের আগমন দেখে আমারা খুশি। আমাদের এখানে পর্যটকদের চাহিদা অনুযায়ী হরেক রকমের ফিস ফ্রাই পাওয়া যায়।
কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র মো. আনোয়ার হাওলাদার জানান, কুয়াকাটায় ঘুরতে আসা পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ ফিস ফ্রাই। পর্যটকদের নিরাপত্তা এবং খাবারের দাম-মান অক্ষুন্ন রাখতে ও সার্বিক দায়িত্ব পালনে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করি।