#আমরা সকলেই সকলের উৎসবের ভাগিদার: ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয়। #বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ: উৎপল সাহা। #মনে প্রাণে বিশ্বাস করতে হবে ধর্ম যার যার, উৎসব সবার: গৌরব গল্প।
প্রকাশ: রোববার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ১০:৫৬ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে শত শত বছর ধরে সব সম্প্রদায়ের মানুষ সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির সঙ্গে ধর্মীয় উৎসব উদযাপন করে আসছে। এটাই বাংলাদেশের সমাজের ঐতিহ্য ও রীতি। এই দেশে সব ধর্মই স্বাধীন ও সমান অধিকার। আমরা সকলেই সকলের উৎসবের ভাগিদার। আজকে বাংলাদেশে ধর্ম যার যার, উৎসব সবার; এই কথাটা আমরা সবাই মানি। বর্তমানে আমাদের দেশে আওয়ামী লীগ সরকার তারা এই বিষয়টা সংস্থাপন করেছে। কিন্তু এখনো বাংলাদেশে অনেক মানুষ আছে যারা আসলে এই বিষয়টা মানতে নারাজ। আমরা যেদিন এই বিষয়টা সম্পূর্ণরূপে মানতে পারবো সেদিন থেকেই আমাদের আসল মানবিকতা বিকাশ পাবে।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৯২৭তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয়, রমনা কালী মন্দিরের সভাপতি এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য উৎপল সাহা, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী, সংগীত শিল্পী, লস-এঞ্জেলস যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গৌরব গল্প। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভোরের পাতার বিশেষ প্রতিনিধি উৎপল দাস।
ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয় বলেন, আজকে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সব চেয়ে বড় উৎসব শুভ বড়দিন। ভোরের পাতা সংলাপের মাধ্যমে আজকে দেশবাসীসহ সবাইকে আমি শুভ বড়দিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। বিশেষ করে আজকে প্রভু যিশু জন্ম হয়েছে ২০২২ বছর আগে কুমারী মেরীর গর্ভে। একজন কুমারী মাতার গর্ভে কিভাবে প্রভু যিশুর জন্ম হয়েছে সেটা আসলেই আশ্চর্যপূর্ণ বিষয়। আমি যতটুকু শুনেছি যে, আত্মার রুহুবলে যে একটা বিষয় আছে সেই শক্তিতে এটা সম্ভব হয়েছে। একজন যিশুকে মুক্তি দাতা বা ত্রাণকর্তা হিসেবে অভিহিত করা হয়। মানবজাতিকে পাপের বন্ধন থেকে মুক্তি দিতে তিনি ঈশ্বরের দূত হিসেবে তিনি পৃথিবীতে এসেছেন। এই মুক্তি দাতা ও ত্রাণকর্তাকে ঘিরেই পৃথিবীব্যাপী যে মহাউৎসব পালিত হয় সেটাকেই বড়দিন বলা হয়। আজকে বাংলাদেশে এই বড়দিনের উৎসব আমাদের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকেরা সব সকলেই ব্যাপক আনন্দের মাধ্যমে উদযাপন করছেন। আবহমান বাঙলার যে ঐতিহ্য সেটা হলো যে ধর্ম যার যার উৎসব সবার। আমরা সকলেই সকলের উৎসবের ভাগিদার। আমরা সকলেই এই উৎসবের আনন্দে উদ্বেলিত। আমরা খ্রিস্টান সম্প্রদায়সহ বাঙালি সব সম্প্রদায় এই উৎসবকে স্বাগত জানাচ্ছি। বিশেষ করে, প্রভু যিশু জন্মগ্রহণ করেছিলেন জেরুজালেমের কয়েক কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত বেথলেহাম শহরে একটি ছোট্ট একটি গোশালাই তার জন্ম হয়েছিল এবং প্রত্যেকটা বড় দিনের উৎসবে আমরা গির্জাঘরে আমরা সেই গোশালাকে সুন্দর করা সাজিয়ে রাখতে দেখেছি। প্রভু যিশুর যে আগমন সেটা আমাদের কি শিক্ষা দিয়েছেন? উনার যে বাণী সেটার দ্বারা আমাদের কি শিক্ষা দিয়েছেন। উনি সব সময় আমাদের মানবতার শিক্ষা দিয়েছেন। সেজন্য আমরা বলতে চাচ্ছি যে ধর্ম যার যার কিন্তু আমরা সবাই সবার উৎসবের ভাগিদার হতে হবে।
উৎপল সাহা বলেন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যখন এই দেশটি স্বাধীন হয়েছিল তখন আমাদের এই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার একটি পূর্ব শর্ত ছিল ধর্ম নিরপেক্ষতা। সেই জায়গা থেকেই আমরা এই দেশটি পেয়েছি। সেখান থেকে আমাদের ভাবা দরকার যে এই দেশের যেকোনো ধর্মের অনুষ্ঠান আমাদের সবাইকেই মানতে হবে, সবাইকে নিয়েই সেটা উদযাপন করতে হবে। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে শত শত বছর ধরে সব সম্প্রদায়ের মানুষ সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির সঙ্গে ধর্মীয় উৎসব উদযাপন করে আসছে। এটাই বাংলাদেশের সমাজের ঐতিহ্য ও রীতি। এই দেশে সব ধর্মই স্বাধীন ও সমান অধিকার। গত দুর্গাপূজা উদযাপন এবং এবারের উদযাপন কিন্তু সম্পূর্ণই আলাদা। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই এইজন্য যে, এবারের পূজাতে প্রশাসনিক যে তৎপরতা ছিল সেটা চোখে পড়ার মতো ছিল। সবার অংশগ্রহণে সার্বজনীন সামাজিক উৎসবে পরিণত হয়েছিল দুর্গোৎসব। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের খ্রিস্টধর্মানুসারীরাও আজ যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ-উৎসব এবং প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শুভ বড়দিন উদযাপন করেছে। আবহমানকাল থেকে এ দেশে সব ধর্মের মানুষ নিজ নিজ ধর্ম ও আচার-অনুষ্ঠানাদি স্বাধীনভাবে পালন করে আসছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তার কারণেই আমাদের সংবিধানে সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষের সমানাধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তাই আমরা বিশ্বাস করি, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।
গৌরব গল্প বলেন, সবাইকে প্রথমেই শুভ বড় দিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার; আসলে এটা আমাদের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আসলে ধর্ম যার যার, উৎসব সবার; এই কথাটা স্বাধীনতার ৫১ বছর সময়ে আমরা আওয়ামী লীগ সরকার থাকাকালীন সময়ে সবচে বেশী পেয়েছি। আসলে যিশু একজন সার্বজনীন মানুষ ছিলেন। তিনি কিন্তু সব সময় তার ধর্মের কথা বলেননি, তিনি সব সময় মানুষের কথা বলেছেন, মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্বের কথা বলেছেন। মানুষের প্রতি মানুষের যে ভালোবাসা, মানুষের প্রতি মানুষের যে দায়িত্ববোধ, মানুষের প্রতি মানুষের যে উপকার সেটাই তিনি সব সময় বলে গিয়েছেন। আজকে বাংলাদেশে ধর্ম যার যার, উৎসব সবার; এই কথাটা আমরা সবাই মানি। বর্তমানে আমাদের দেশে আওয়ামী লীগ সরকার তারা এই বিষয়টা সংস্থাপন করেছে। কিন্তু এখনো বাংলাদেশে অনেক মানুষ আছে যারা আসলে এই বিষয়টা মানতে নারাজ। আমরা যেদিন এই বিষয়টা সম্পূর্ণরূপে মানতে পারবো সেদিন থেকেই আমাদের আসল মানবিকতা বিকাশ পাবে। বর্তমান সরকারের কারণে আসলে আমরা যারা সংখ্যালঘু আছি বা যারা মুক্ত চিন্তা ধারার বিশ্বাসী তারা মুক্তভাবেই নিজের চিন্তার বিকাশ করতে পারছি। কিন্তু আমার ভয় লাগে যদি কোনদিন এই দেশে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় না থাকে তাহলে তো আমাদের এই চিন্তাটা মাথায় ধারণ করাটায় বিস্ময়কর হয়ে দাঁড়াবে। সুতরাং বাংলাদেশের সবার কাছে আমার একটি চাওয়া যে আমরা যেন মনে প্রাণে বিশ্বাস করি ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।