প্রকাশ: শনিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২২, ৯:৩৭ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
গোলা ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ, শালভরা গরু জমিদারদের অভিজাত্য বহনের অন্যতম অর্জন ছিল যা শুধু জমিদারদের নয় সমাজের ধনাঢ্য ও বিত্তবানদের সনাক্তকরণের জন্য ছিল একটি অর্জিত সম্পদের আধার। জমিদার বিলুপ্তির সাথে সাথে বিলুপ্তির পথে প্রবচন টিও তবে এখনো গুটি কয়েক বাড়িতে রয়েছে ধানের গোলা ও মাটির কোলা।
আবহমান কাল ধরে পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য ধরে রাখতে ব্যবহার করা হতো এগুলো। বাঁশ দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি গোল আকৃতির কাঠামোয় গোলা। গোলাকৃতির কাঠামোতে এঁটেল মাটির মন্ডপ দিয়ে তৈরি করে ভিতরে মাটির প্রলেপ লাগিয়ে ভালোভাবে শুকিয়ে তার উপর পিরামিড আকৃতির টিনের চালা দিয়ে ঢাকনাকারে তৈরি করা হয় ধানের গোলা। ধান বা যে কোন শস্য উঠানো বা নামানোর জন্য রাখা হতো ছোট দরজা যেখানে ব্যবহার হতো কাঠ ও লোহার দণ্ড তবে তার চারপাশে মাটি কাঁদার প্রলেপ লাগিয়ে বন্ধ করে দেয়া হতো চারপাশের ছিদ্র। এছাড়াও মটোর-সূটি,সরিষা, গম, ভুট্টা সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হতো মাটি দ্বারা এক বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি মাটির কোলা যা এখন বিলুপ্ত প্রায়। এলাকার কুমারদের নিকট বায়না করে বড় আকারের কলসির মত তৈরি করা হতো মাটির কোলা।
দীর্ঘদিন ধান সংরক্ষণের অন্যতম একটি আধার ছিল ধানের গোলা। বছরের পর বছর ধান সংরক্ষণ করলেও তাতে কোন ছত্রাক বা পোকা ধরত না। এমনি একটি ধানের গোলার সন্ধান পাওয়া যায় মাগুরার শালিখা উপজেলার আড়পাড়া ইউনিয়নের পুকুরিয়া গ্রামের ধনাঢ্য কৃষক বজলুর রহমানের বাড়িতে। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে গোলাটি। ধান সংরক্ষণের জন্য গোলাটি ব্যবহার করছেন তিনি। বজলুর রহমান বলেন, ছোটবেলায় দেখেছি ছেলে-মেয়েদের বিবাহ বা যে কোন সম্বন্ধ করতে গেলে জাত-কুল দেখার পাশাপাশি দেখা হতো মেয়ে-ছেলেদের বাড়িতে ধানের গোলা বা পুকুর ভরা মাছ আছে কিনা। এছাড়াও ধানের গোলা ধনাঢ্য কৃষক বা সম্ভ্রান্ত পরিবারের পরিচয় বহন করতো বলেও জানান তিনি।
বাড়ির গৃহিণী রিনা বেগম বলেন, গোলার যেমন উপকারিতা আছে তেমন অপকারিতাও রয়েছে। তিনি বলেন,ধানের গোলাতে ধান উঠাতে বা নামাতে একাধিক লোকের প্রয়োজন হয় অপরদিকে একটা ধানের গোলাতে দুই বা ততোধিক ধান পাশাপাশি রাখা যায় না।
এছাড়াও ধানের গোলাতে ফসলাদি উঠা-নামা করাতে বেশ কষ্ট পেতে হয়। তবে দীর্ঘদিন ধান সংরক্ষণে ধানের গোলার বিকল্প নেই বলেও জানান তিনি। উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা শফিক সোহাগ বলেন, ধানের গোলায় রক্ষিত ধানের তাপমাত্রা বা ময়েশ্চারাইজার ঠিক থাকে এবং ধানের গুণগত মানটাও ভালো থাকে তাই দীর্ঘদিন ধান সংরক্ষণে ধানের গোলা একটি অন্যতম ফসলাধার।
শ্রী ইন্দ্রনীল গবেষণা এন্ড অ্যাসোসিয়েটস এর প্রধান সংগঠক শিক্ষক ও গবেষক ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, পূর্ব পুরুষের ব্যবহৃত কৃষ্টিগুলো সংরক্ষণপূর্বক নতুন প্রজন্মের শিশুদের কাছে তা তুলে ধরা প্রয়োজন এতে করে একদিকে যেমন নবপ্রজন্মের শিশুরা শিকড়ের সান্নিধ্য পাবে অপরদিকে তারা অতীত ঐতিহ্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করতে পারবে।