গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাময়িক বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের দলে ফেরা নিয়ে যে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছিল, অবশেষে সেটির অবসান ঘটল। তরুণ এই নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। খোদ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এই তথ্য জানিয়েছেন।
জাহাঙ্গীর আলমকে আওয়ামী লীগে ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও নগরবাসী। তারা বলছেন, এতে সংগঠন শক্তিশালী হবে এবং তিনি
পুনরায় মেয়রের দায়িত্ব পেলে গাজীপুর সিটির উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। শনিবার আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভায় শৃঙ্খলাভঙ্গে অভিযুক্ত নেতাদের ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের সাধারণ ক্ষমার সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরই নগরবাসী বিশেষ করে জাহাঙ্গীর সমর্থকদের মধ্যে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস শুরু হয়। জাহাঙ্গীরের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হয়েছে-এমন খবরে তাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে। তবে জাহাঙ্গীরের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ শিবির তার দলে ফেরার বিষয়টি গুজব ও মিথ্যা বলে আখ্যা দেয়। তাদের দাবি ছিল, সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা এলেও জাহাঙ্গীরকে দলে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে কেন্দ্র কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ থেকেও বিষয়টি এতদিন পরিষ্কার করা হয়নি। এ নিয়ে নগরবাসীও সংশয়ে ছিলেন।
তবে জাহাঙ্গীর আলমের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের বিষয়টি আরও সুস্পষ্ট করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, জাহাঙ্গীর আলমের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে তাকে ক্ষমা করা হয়েছে। মঙ্গলবার বেসরকারি একটি টেলিভিশনে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, যে ভুলে তারা সাজা পেয়েছেন, তার পুনরাবৃত্তি তারা ঘটাবেন না, এই শর্তেই তারা ক্ষমা পেয়েছেন। আগামী দিনে তারা সেসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটালে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। বলা যাবে যে, তুমি শর্ত ভঙ্গ করেছ।
জাহাঙ্গীর আলমের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, জাহাঙ্গীর তো অ্যাপ্লাই (আবেদন) করেছেন। তারটা মওকুফ করা হয়েছে। যারাই আবেদন করেছেন, তাদেরই ক্ষমা করা হয়েছে। একশর মতো ছিল। অনেকে কলহে-বিবাদে জড়িয়েছে, শৃঙ্খলাবিরোধী বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। এগুলো ক্ষমা করা হয়েছে।
জাহাঙ্গীর আলমের দলে ফেরার বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর আওয়ামী লীগের নবগঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মণ্ডল বলেন, দলীয় সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা জানাই। আর ক্ষমা তো মহত্ত্বের লক্ষ্মণ। গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান বলেন, এটা (জাহাঙ্গীরের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার) আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত। আমার এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।
বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, আমি দলের জন্য নিবেদিত হয়ে কাজ করব। তৃণমূলকে শক্তিশালী করে সংগঠনের গতি বাড়াতে কাজ করব। আমি স্থানীয় মন্ত্রী, সংসদ-সদস্য এবং দলীয় নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করে আগামী দিনে আধুনিক গাজীপুর গড়ার কাজে হাত দেব। প্রধানমন্ত্রীর হাতকে আমরা সম্মিলিতভাবে শক্তিশালী করব। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে যা যা করার, সবই আন্তরিকতার সঙ্গে করব।
তিনি আরও বলেন, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। গাজীপুর মহানগরীর ৫৭টি ওয়ার্ডের সবাইকে নিয়ে গাজীপুর মহানগরকে আধুনিক বাসযোগ্য আধুনিক নগরী হিসাবে গড়ে তুলব।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত মেয়র অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলমকে গত বছরের ১৯ নভেম্বর দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয। ২৫ নভেম্বর তাকে মেয়র পদ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা ও দলে ফিরতে কেন্দ্রে আবেদন করেছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। যার ফলে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে দলে ফিরিয়ে নিয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। সূত্র: যুগান্তর