প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:৪৩ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
সাপ দেখলেই আতঙ্কে গায়ের রক্ত হিমশীতল হয়ে যায় অনেকের। সাপের নাম শুনলেই ভয়ে আতঙ্কে ওঠে মানুষ, এমনকি দৌড়ে পালায়। আবার কেউ কেউ সাপটিকে মারার জন্য হন্যে হয়ে লাঠি খুঁজে। সেখানে এক তরুণ অসীম মায়ায় এগিয়ে এসেছেন সাপ রক্ষায়। তিনি ব্যতিক্রম। লোকালয়ে আসা বিপদগ্রস্থ সাপসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণী উদ্ধার করেন। সুযোগ বুঝে সেগুলোকে অবমুক্ত করে দেন প্রাকৃতিক পরিবেশে। প্রাণির প্রেমেমগ্ন এই মানুষটির নাম মোহাম্মাদ শাহজাহান।
জানা গেছে, দেশের উত্তরের সীমান্তবর্তী একটি জেলা নাম লালমনিরহাট। জেলার আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে শাহজাহান। তার পুরো নাম মোহাম্মাদ শাহজাহান। ছোটবেলা থেকেই শাহজাহানের প্রাণীদের প্রতি ভালোবাসা। তখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়েন। সাপ নিয়ে পাশের বাড়িতে খুব হইচই হচ্ছিল। শাহজাহান ডিসকভারি চ্যানেল দেখতেন। সেখানে দেখেছেন সাপ কিভাবে ধরতে হয়। তিনি লাঠির সাহায্যে সাপটির মাথা ধরে জঙ্গলে ছেড়ে দেন। সেটি ছিল হেলে সাপ। নির্বিষ। এটিই তার প্রথম রেসকিউ। বর্তমান শাহজাহান একজন বে-সরকারি চাকরিজীবী। চাকরি সূত্রে ফেনীসহ বিভিন্ন জেলায় বসবাস করেন। পাশাপাশি এক যুগেরও বেশি সময় ধরে প্রাণীদের ভালোবাসায় কাজ করছেন। পুরোটাই স্বেচ্ছাশ্রম। মাঝে মধ্যে পকেটের টাকা খরচ করে দূরে সাপ রেসকিউ করতে যেতে হয়।
মোহাম্মাদ শাহজাহান মতে, ২০১০ থেকে প্রায় এক যুগে একাই প্রায় ৫শ বিষধর সাপ উদ্ধার করে বনে ছেড়ে দিয়েছেন। তার উদ্ধারকৃত সাপের মধ্যে বিষধর ওয়ালস ক্রেইট, ব্ন্যাক ক্রেইট, গোখরা, শাখামুটি, গ্রীন পিট ভাইপার রয়েছে। অবিষধর আছে দাঁড়াশ, বেতআঁচড়া, জলঢোঁড়া, মেটে, লাউডগা, দুধরাজ ইত্যাদি। সেই সাথে গুঁইসাপ, বেজি, প্যাঁচা, পাখিসহ অন্যান্য প্রাণী উদ্ধার করেছেন শতাধিক।
সাপ রেসকিউ করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। অসতর্কতায় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। জেনে শুনে এই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করার কারণ হিসেবে শাহজাহান বলেন, 'পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণীর বাঁচার অধিকার আছে। সেই উপলব্ধি থেকেই যথাসম্ভব বিপদগ্রস্থ প্রাণীদের বাঁচানোর চেষ্টা করি। ছোটবেলায় ডিসকভারি চ্যানেলে দেখে দেখে মোটামুটি সাপ ধরা আয়ত্ত করে ফেলি। তারপর থেকে বিপদগ্রস্থ সাপগুলোকে বাঁচাতে শুরু করি।'
মোহাম্মাদ শাহজাহান বলেন, আমি একজন প্রশিক্ষিত সাপ উদ্ধারকারী। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ভেনম রিসার্চ সেন্টারে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। সেখানে প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন, ভেনম রিসার্চ সেন্টারের ট্রেইনার ও গবেষক বোরহান বিশ্বাস ও গবেষক আব্দুল ওয়াহেদ চৌধুরী।