প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২২, ৪:২৫ পিএম আপডেট: ২২.১২.২০২২ ৪:৩১ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে ভারতের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ২২৭ রানেই অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ।
মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে চলতি বছরটা কী দারুণভাবেই না শুরু করেছিল বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের মাঠে কিউইদের বিপক্ষে টেস্ট জয়। সেই টেস্টের অধিনায়ক ছিল মুমিনুল। সেই ম্যাচেই সবশেষ ফিফটিটা পেয়েছিলেন মুমিনুল। খেলেছিলেন ৮৮ রানের ইনিংস। পরের ১২ ইনিংসে তো দুই অঙ্ক স্পর্শ করতে পেরেছেন কেবল দুই বার। শেষ নয় ম্যাচে সিঙ্গেল ডিজিট থেকে বের হতে না পারায় নেতৃত্ব তো বটেই, বাদ পড়ে যান দল থেকেও।
সেই মুমিনুল ফিরলেন বছরের শেষ টেস্ট ম্যাচে। তবে ব্যাটের পারফরম্যান্সে নয়, সতীর্থদের ব্যর্থতায়। তাকে ছাড়া খেলা দুটি টেস্টে বলার মতো কেউ কিছু করতে পারেননি। চট্টগ্রাম টেস্টে তিন নম্বরে খেলানো হয়েছিল ইয়াসির আলী রাব্বিকে। দুই ইনিংসে যার অবদান ৪ ও ৫ রান। ফলে ফের জায়গা মিলে মুমিনুলের। আর এবার সুযোগটা দারুণভাবেই লুফে নেন সাবেক অধিনায়ক।
ইনিংসের শুরুতে কিছুটা নড়বড়ে দেখালেও ধীরে ধীরে সাবলীল ব্যাটিং করতে থাকেন মুমিনুল। এক প্রান্ত ধরে রাখেন, মাঝেমধ্যেই বাউন্ডারি মেরে রানের চাকাও রাখেন সচল। ৮৪ রানের ইনিংসে ফিফটি স্পর্শ করেন জয়দেব উনাদকাটকে টানা দুটি বাউন্ডারি মেরে। ১৫৭ বলে ১২টি চার ও ১টি ছক্কায় সাজান নিজের ইনিংস। তবে মুমিনুল আউট হয়েছেন কিছুটা দুর্ভাগ্যজনকভাবে। অশ্বিনের অফস্টাম্পের বেশ বাইরে রাখা বলটি ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। বল যে ভারতের দিকে বাঁক নিবে বুঝতেই পারেননি। শেষমুহূর্তে তার গ্লাভসের বল চুমু খেয়ে গেলে ইতি হয় তাদের ইনিংসের। এর ঠিক এক পরই সৈয়দ খালেদ আহমেদ আউট হলে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস।
দিনের শুরুটা মন্দ ছিল না বাংলাদেশের। ওপেনিং জুটিতে আসে ৩৯ রান। যদিও নিজের প্রথম বলেই ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন আগের ম্যাচে সেঞ্চুরিয়ান জাকির হাসান। তবে সে সুযোগ লুফে নিতে পারেননি মোহাম্মদ সিরাজ। জীবন পেয়ে দেখে শুনে খেলতে থাকেন জাকির। শান্তও শান্ত মেজাজেই খেলতে থাকেন। প্রথম ড্রিঙ্কস বিরতির আগ পর্যন্ত সাবলীল। কিন্তু বিরতির পর যেন মনঃসংযোগে বিঘ্ন ঘটে। এক ওভার পরই ভাঙে জুটি। চার বলের ব্যবধান ফিরে যান আরেক ওপেনারও।
১২ বছর পর টেস্ট দলের ফেরা জয়দেব উনাদকাটের এক্সট্রা বাউন্সে পরাস্ত হন জাকির (১৫)। লাফিয়ে ওঠা বলে ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় চতুর্থ স্লিপে। উনাদকাট পান টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথম উইকেট। পরের ওভারে অশ্বিন ফাঁদে ফেলেন নাজমুল হোসেন শান্তকে (২৪)। অবশ্য শট খেলতে গেলে বেঁচে যেতে পারতেন তিনি। কারণ ইমপ্যাক্ট ছিল বাইরে। ফলে রিভিউ নিয়ে বাঁচতে পারেননি এ ওপেনার।
এরপর লিটনকে টপকে চার নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামেন সাকিব (১৬)। ৪৩ রানের জুটিও গড়েছেন। কিন্তু লাঞ্চের পর প্রথম বলেই দেন আত্মহুতি। উমেশ যাদবের করা প্রথম বলেই মিডঅফের উপর দিয়ে বাউন্ডারি মারতে গিয়ে টাইমিংয়ে হেরফের করে মিডঅফে দাঁড়ানো চেতশ্বর পুজারার হাতে ক্যাচ তুলে দেন এ অলরাউন্ডার। ভাঙে ৪৩ রানের জুটি। এরপর মুমিনুলকে সঙ্গ দিতে আসেন মুশফিকুর রহিম (২৬)। অশ্বিনের করা একটি ওভারে টানা তিনটি বাউন্ডারি মেরে প্রত্যয় ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ভালো কিছুর। কিন্তু উনাদকাটের দারুণ এক ডেলিভারিতে শেষ হয় তার ইনিংস। রক্ষণাত্মক ঢঙ্গে খেলতে গিয়েও সফল হননি। ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় উইকেটরক্ষক রিশাভ পান্তের গ্লাভসে। ভাঙে ৪৮ রানের জুটি।
মুশফিকের বিদায়ের পর মাঠে নামেন লিটন (২৫)। শুরুতেই দৃষ্টিনন্দন কিছু শটে দেখাচ্ছিলেন আশা। বিশেষকরে মোহাম্মদ সিরাজের টানা দুই বলে একটি চার ও ছক্কা মারেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হতাশ করেছেন তিনিও। অশ্বিনের বলে ফ্লিক করতে গিয়ে সহজ ক্যাচ তুলে দেন মিডউইকেটে। যা ধরে নিতে কোনো ঝামেলা হয়নি ভারতীয় অধিনায়ক লোকেশ রাহুলের। এরপর ওয়ানডে সিরিজে দারুণ ব্যাটিং করা মেহেদী হাসান মিরাজকে (১৫) নিয়ে দলের হাল ধরেন মুমিনুল। ৪৩ রানের জুটিও গড়েছিলেন। কিন্তু পারেননি মিরাজও। অফস্টাম্পের বাইরের বলে কাট করতে গিয়ে ধরা পড়েন উইকেটরক্ষক রিশাভ পান্তের গ্লাভসে। আর নুরুল হাসান সোহান (৬) ধরা পড়েন এলবিডাব্লিউর ফাঁদে পড়ে। তাসকিন আহমেদ (১) ক্যাচ তুলে দেন সিরাজের হাতে।