শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: বিএনপির বড় বিশৃঙ্খলার চেষ্টা আ.লীগের সতর্কতায় বিফল: তথ্যমন্ত্রী   সংকটকে সম্ভাবনায় রূপ দিতে কাজ করছে সরকার: কাদের   নাটোরে ট্রেনে কাটা পড়ে ৩ জনের মৃত্যু   ‘কিছুই করি নাই শ্রেণিটা’ চোখ থাকতেও দেখে না: প্রধানমন্ত্রী   রাজকে আমার জীবন থেকে ছুটি দিয়ে দিলাম: পরীমনি   সৌদি আরবের ক্লাবে যোগ দিলেন রোনালদো   বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
সাভারে ১৯ ট্যানারি কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত সরকারের
তোফায়েল হোসেন তোফাসানি, সাভার
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২২, ৯:২০ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

দিনের পর দিন নদীসহ পরিবেশ দুষণ করায় এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকার অভিযোগ এনে সাভারের হেমায়েতপুরের হরিণধরা এলাকায় ধলেশ^রী নদীর তীরে অবস্থিত বাংলাদেশ বিসিক শিল্প নগরীর ১৯ টি ট্যানারি কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সম্প্রতি পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত দ্রæত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

এদিকে ট্যানারি বন্ধ হলে ভারত বা পাকিস্থানে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের ব্যবসা চালু করার কথা ভাবছেন ভিনদেশী বায়াররা। বেকার ও কর্মহীন হয়ে যাবেন ট্যানারি কারখানার লক্ষাধিক দক্ষ শ্রমিক।

জানা গেছে, রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকা থেকে রাজধানীকে দুষণ মুক্ত রাখতে ২০১৭ সালের ৮ এপ্রিল সাভারের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের হেমায়েতপুরের হরিণধরা এলাকার ধলেশ^রী নদীর তীরে ১৫৪ টি ট্যানারি কারখানা হস্তান্তর করা হয়। এর আগে ২০০৩ সালে শিল্প মন্ত্রণালয় ১ হাজার ৭৯ কোটি টাকার এই প্রকল্পের অধীনে হরিণধরা এলাকায় ১৯৯ একর জমি অধিগ্রহণ করে ১৫৪ টি ট্যানারির মালিককে প্লট হস্তান্তর করে। বর্তমানে সেখানে ১৪১ টি ট্যানারির উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত আছে। বাকি গুলো এখনও পুরোপুরি কার্যক্রম চালু করতে পারেনি।

সাভারে ট্যানারি কারখানা গুলো চালু করার পর থেকেই ওই এলাকার আশেপাশে ব্যাপক পরিবেশ দুষণ দেখা দেয়। এছাড়া কিছু ট্যানারির আবর্জনার পানি সরাসরি ধলেশ^রী নদীতে ড্রেনের মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে করে ধলেশ^রী নদীর পানি দুষণ হচ্ছে। প্রতিনিয়ত মারা যাচ্ছে নদীর মাছ। ধ্বংস হচ্ছে জীব বৈচিত্র্য। এছাড়া ট্যানারির বর্জ্য ভ্যানে করে সরাসরি ট্যানারির রাস্তার ডাম্পিং করা হচ্ছে। এ কারণে ওই সব এলাকায় ব্যাপক পরিবেশ দুষণ হচ্ছে। মানুষজন নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রতিদিনি এসব ট্যানারি  থেকে দৈনিক ৪০ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য উৎপাদিত হয়। কিন্তু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা আছে শুধু ২৫ হাজার ঘনমিটার। এ ছাড়া কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোন ব্যবস্থা চালু নেই।

সাভারে স্থানান্তর করার আগে এসব ট্যানারি ছিল ঢাকার হাজারীবাগ এলাকায়। সেখানে ট্যানারিগুলো দিনে প্রায় ২১ হাজার ৬০০ ঘনমিটার তরল বর্জ্য বুড়িগঙ্গায় ফেলত। এ ছাড়া পশুর চামড়ার উচ্ছিষ্ট বেড়িবাঁধের পাশে, খালে, জলাধারে ও রাস্তার পাশে ফেলা হতো। এতে ব্যাপক দূষণের কবলে পড়ে বুড়িগঙ্গা।

দফায় দফায় সময় বেঁধে দেওয়ার পরও সিইটিপি প্রস্তুত নয় এমন যুক্তিতে মালিকেরা ট্যানারি সাভার শিল্পনগরে নিতে চাইছিলেন না। ২০১৭ সালের ৮ এপ্রিল সেবা-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ট্যানারিগুলোকে হাজারীবাগ ছাড়তে বাধ্য করা হয়। কিন্তু সাভারে স্থানান্তরের পরে ট্যানারির বর্জ্যে দূষণের কবলে পড়ে ধলেশ্বরী নদী।

দূষণের দায়ে গত বছরের আগস্টে শিল্পনগরী আপাতত বন্ধ রাখার সুপারিশ করে সংসদীয় কমিটি। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি। এরপর দূষণ বন্ধে একাধিকবার ট্যানারি বন্ধ করে দেওয়ার সুপারিশ করে কমিটি। কিন্তু এতেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।

এমন পরিস্থিতিতে গত সেপ্টেম্বরে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ক্ষুুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করে সংসদীয় কমিটি। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়,ট্যানারি কারখানাগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা হবে। একটি ভাগে থাকবে যেসব প্রতিষ্ঠান নিজেরা বর্জ্য শোধনাগার তৈরি করেছে। আরেকটি ভাগ হবে, যেসব প্রতিষ্ঠান কখনো পরিবেশগত ছাড়পত্রের আবেদন করেনি, জোড়াতালি দিয়ে চলছে এবং যাদের কমপ্লায়েন্ট হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আর অন্য ট্যানারিগুলো থাকবে তৃতীয় ভাগে।

সংসদীয় কমিটির সূত্র জানায়, যেসব ট্যানারি বন্ধ হচ্ছে, সেগুলো হলো নিশাত ট্যানারি, ইব্রাহিম ট্যানারি, সিটি লেদার, সবুজ করপোরেশন, এমএ লেদার, মেট্রো ট্যানারি, মুন ট্যানারি, লিয়েন এন্টারপ্রাইজ, ইন্টারন্যাশনাল ট্যানারি, মমতাজ ট্যানারি, জিন্দাবাদ ট্যানারি, গোল্ডেন লেদার, জামান ট্যানারি, সাহী ট্যানারি, ফালু লেদার করপোরেশন, হাইটেক লেদার, ইসমাইল লেদার, এস অ্যান্ড এস ট্যানারি এবং জহির ট্যানারি।

এসব ট্যানারি কখনোই পরিবেশগত ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেনি। এসব ট্যানারির কমপ্লায়েন্ট হওয়ারও কোনো সম্ভাবনা দেখছে না কমিটি। তাই বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া ১৯টি ট্যানারি আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী কমপ্লায়েন্ট হওয়ার শর্ত পূরণ করায় সাময়িক ছাড়পত্র দেওয়া হবে। আরও ১০৩টি ট্যানারি উচ্চ আদালতের নির্দেশনা কতটা মেনে চলছে, সে বিষয়ে আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে একটি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এরপর এসব ট্যানারির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

স্থানীয়রা জানায়, ট্যানারির কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগারের পাশে নদীর পাড়ে বিশাল এলাকাজুড়ে ডাম্পিং জোনে স্তূপ করে রাখা হচ্ছে বর্জ্য। যার ফলে ওই এলাকা ব্যাপক দূষিত হচ্ছে। স্থানীয়রা দ্রæত দুষণ রোধে সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন। এদিকে বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া ট্যানারির শ্রমিকরা জানিয়েছেন হঠাৎ করে কারখানা বন্ধ হলে তারা কোথায় চাকরি নিবেন তা নিয়ে দুচিন্তায় পড়েছেন।

এদিকে ট্যানারির ভিনদেশী বায়াররা বলেন,তাদের কোন সমস্যা নেই এখানে ট্যানারি বন্ধ হলে তারা ভারতে অথবা পাকিস্তানে ব্যবসা করবেন।

এবিষয়ে ট্যানারির দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা  শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোস্তাক আহমেদ বলেন,বার বার বলা সত্তে¡ও ওই সব ট্যানারির মালিকরা পরিবেশের ছাড়পত্র না নেওয়ায় সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া দুষণ রোধে তারা কাজ করছেন বলেও তিনি জানান। 



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]