প্রকাশ: সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:৪৯ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
ঋতুচক্রে শীতকালীন মৌসুমে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৌচাষিরা। চাঁপাইনবাবগঞ্জের সুন্দরপুর ও রামজীবনপুর ঘুরে দেখা গেছে মধু সংগ্রহে মৌচাষিদের নানা কর্মযজ্ঞ। সদর উপজেলার সুন্দরপুরের উপজেলায় খড়িবোনা এলাকায় চলতি মৌসুমে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ করতে নাটোর ও সিরাজগঞ্জ থেকে এসেছেন মহিদুল ইসলাম ও জারজিস হোসেন।
সরিষা ফুল থেকে মধু আহরণের পদ্ধতি সম্পর্কে মধুসংগ্রহকারী মহিদুল ইসলাম জানান, মধু সংগ্রহের জন্য কাঠ দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি করা হয় বাক্স। যার উপরের অংশটা কালো রঙের পলিথিন ও চট দিয়ে মোড়ানো থাকে।
বাক্সের ভেতরে কাঠের তৈরি ৪টি ফ্রেমের সঙ্গে মোম দিয়ে বানানো বিশেষ কায়দায় লাগানো থাকে এক ধরনের সিট। পরবর্তীতে বাক্সগুলো সরিষা ক্ষেতের পাশে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়। পাশাপাশি বাক্সগুলোর ভেতরে দেওয়া হয় রানি মৌমাছি। যাকে ঘিরে আনাগোনা করে হাজারো পুরুষ মৌমাছি। রানির আকর্ষণে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে মৌমাছিরা। একটি রানি মৌমাছির বিপরীতে একেকটি বাক্সে অনেক মৌমাছি থাকে। এরপর মৌমাছিতে টুইটম্বর বাক্সগুলো সরিষা ক্ষেতের পাশে লাগোয়া স্থানে সারিবদ্ধভাবে রেখে দেওয়া হয়। পরে সেসব বাক্স থেকে সরিষা ক্ষেতের ফুলে ফুলে ভো ভো শব্দ তুলে ঘুরতে থাকে মৌমাছিরা। এভাবে ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে চলে আসে বাক্সে। তিনি জানান, প্রতিবছরের এ সময়টাতে তারা এভাবে মধু সংগ্রহ করে থাকেন। একই ধারাবাহিকতায় এবারও সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করছেন তারা। সম্প্রতি তারা উক্ত এলাকায় অস্থায়ীভাবে চাটাই আর পলিথিন দিয়ে ঘর তৈরী করে সেখানে থাকেন ৩/৪ সপ্তাহ।
সিরাজগঞ্জ থেকে আসা আরেক মৌচাষি জারজিস হোসেন জানান, তারা কয়েকজন মিলে উপজেলায় মধু সংগ্রহ করতে এসেছেন। বিস্তীর্ণ সরিষা ক্ষেতের পাশে ১১৩টি বাক্স বসানো হয়। এসব বাক্স থেকে ২ সপ্তাহে গড়ে প্রায় ১০ থেকে ১২ মনের মতো মধু পাওয়া যায়। মধু সংগ্রহের সময় শেষ হলে তারা নিজের এলাকায় চলে যান। মৌচাষিরা জানান, এ মধু ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকাররাও কিনেন। চাহিদা অনুযায়ী মধু বিক্রি করেন তারা। চাহিদা বেশি হলে দাম কিছুটা বেশি পান। আবার তুলনামূলক চাহিদা কম হলে দামও কিছুটা কম পান। প্রতি কেজি সরিষা ফুলের মধু পাইকারি ৩৫০-৪০০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়ে থাকে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. পলাশ সরকার জানান, জেলায় চলতি মৌসুমে ২১ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সরিষা চাষ করা হয়েছে। বাক্স পদ্ধতি ব্যবহার করে বাণিজ্যিকভাবে এসব সরিষা ফুল থেকে জেলার বিভিন্ন এলাকায় মধু সংগ্রহ করে থাকে। সরিষা ফুল থেকে সংগ্রহ করা মধু গুণে মানে অত্যন্ত ভালো। এ ফুলের মধুতে কোনো প্রকার ভেজাল থাকে না, একেবারে খাঁটি। আর এভাবে অনেকটা সহজ প্রক্রিয়ায় মধু আহরণের মাধ্যমে মধু সংগ্রহকারীরা বাড়তি আয় করতে পারেন।